শীতলক্ষ্ম্যা নদীর কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা নারায়ণগঞ্জ রূপগঞ্জের বিসিক জামদানি পল্লি ঘুরে দেখা গেছে, জামদানি পল্লির যে কারখানায় যাওয়া হয়, তার মালিক কোনো না কোনো ব্যবসায়ী বা অন্য পেশার লোক। এদের মধ্যে কেউ কেউ জামদানি ব্যবসায়ী।
তাঁতী ছাড়া যারা প্লটের মালিক, তারা সবাই দালান তুলে অন্য ব্যবসা করছেন বা বাসা ভাড়া দিয়েছেন। জামদানি পল্লির প্লট বরাদ্দের নিয়ম অনুসারে, প্লট পেতে তাঁতী হতে হবে এবং প্লটে গড়ে ওঠা প্রত্যক ঘরে একটি করে তাঁত থাকতে হবে।
কিন্তু কেউ কেউ প্লট বাঁচাতে তাঁত রেখেছে, আবার কেউ শুধু শো হিসেবে তাঁতের মেশিন সাজিয়ে রেখেছে। তাঁত ছাড়া প্লটের ঘরগুলোতে গেলে বেশির ভাগই দরজা খোলেনি। এছাড়া অর্ধেক প্লটে তাঁতের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।
আইয়ুব আলী নামে এক তাঁতী বাংলানিউজকে বলেন, প্লট যখন বরাদ্দ দেওয়া হয়, যারা তাঁতী না, তারা ঘুষ দিয়ে প্লট বরাদ্দ নিয়েছে। আবার অনেক তাঁতী প্লট পেলেও পরে ঘর ওঠাতে না পেরে বিক্রি করে দিয়েছে। প্লট দিলে তো হবে না, তাঁতীদের কি টাকা আছে যে ঘর ওঠাবে। ঘরে ঋণ দিলে ভালো হতো।
তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এসে প্লট নিয়েছে প্রভাবশালী লোকজন। তাদের টাকা আছে, ঘর করে ভাড়া দিয়েছে। প্লট বাচাঁনোর জন্য কেউ কেউ তাঁতী বসতে দিয়েছে।
প্লট পাওয়া তাঁতী মনির হোসেন বলেন, আমার বাবা প্লট পেয়েছিলো, তবে ঘর ওঠানোর টাকা না থাকায় বিক্রি করে দিয়েছি। তাঁতীরা ন্যায্য মূল্য পায় না, নানা দিক থেকে বঞ্চিত। শুধু জমি দিলে তো তাদের হবে না, ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। আর তাঁতীদের কাছ থেকে ক্রেতারা সরাসরি শাড়ি কিনলে হয়তো অবস্থা এমন হত না।
জামদানি পল্লি জুড়ে মূল তাঁতীর তুলনায় ব্যবসায়ীর সংখ্যা বেড়ে গেছে বলে জানান তিনি।
জামদানি পল্লির প্রধান শিল্পনগরী কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ বাংলানিউজকে বলেন, ২০০০ সালে বিসিক জরিপ করে তাঁতীদের প্লট বরাদ্দ দেয়। পরে তাঁতীরা বেশি টাকার লোভে বিসিককে না জানিয়ে বাইরে লোকজনদের কাছে প্লট বিক্রি করে। আমরা প্রতি তিন মাস পর পর পরিদর্শন করে তাঁত ছাড়া কোনো প্লট পেলে তা বাতিল করি। এছাড়া কেউ আইন বহির্ভূত কাজ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
তাঁত ছাড়া প্লটের বিষয়ে তিনি বলেন, জামদানি পল্লিতে ৪০৭টি প্লট আছে। প্লটের প্রতিটি ঘরে একটি করে তাঁত থাকার কথা। তবে কিছু কিছু অনিয়ম রয়েছে। ছয়মাস আগে তাঁত না থাকার দায়ে ৭০টি প্লট বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছিল। এরপর তারা আবেদন করে তাঁত দেওয়ার পর আবার বরাদ্দ দেওয়া হয়।
তাঁতীরা বিসিকের সঙ্গে পরামর্শ না করে প্লট বিক্রি করে দিয়েছে। প্লট পাওয়া তাঁতীদের বেশির ভাগেরই মেয়াদ পার হলেও কিস্তির ৫০ শতাংশ টাকা পরিশোধ করেনি। তাঁতীদের দুরাবস্থার জন্য তাদেরেই দায়ী করেন এ কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৭
এমসি/জেডএম