তবে দেশের লবণেই কোরবানির চাহিদা পূরণ হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তাই কোরবানিকে সামনে রেখে লবণের বাজার অস্থির হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন তিনি।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, যদিও দেশের চাহিদার তুলনায় এবার দেশে লবণের উৎপাদন চার লাখ টন কম হয়েছে। তবে সেই ঘাটতি মেটাতে এরই মধ্যে লবণ আমদানির ওপর থাকা নিষেধাজ্ঞা সরকার দুই মাসের জন্য স্থগিত করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। একইসঙ্গে দুই হাজার ১৬২ টন করে দুই শতাধিক আমদানিকারককে মোট পাঁচ লাখ টন লবণ আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে কক্সবাজারেরই রয়েছে ৬২ জন ব্যবসায়ী।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, চামড়া সংরক্ষণের জন্য লবণ একটি গুরুত্বপূর্ণ পণ্য। দেশে খাবার ও চামড়ায় ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় এনে ৫ লাখ মেট্রিক টন অপরিশোধিত লবণ আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সে মোতাবেক লবণ আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছে, আসন্ন কোরবানির ঈদের আগেই আমদানিকৃত লবণ দেশে আসবে।
মন্ত্রী বলেন, চামড়া শিল্পে সারা দেশে বছরে ৬০ হাজার টন লবণের প্রয়োজন হয়। এরমধ্যে কেবল কোরবানির সময়েই প্রয়োজন হয় ৩০ হাজার টন অপরিশোধিত লবণের।
এদিকে বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন রিটেইল ডিলার মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন বাংলানিউজকে জানান, ২০১৬ সালে লবণ সংকটের কথা তুলে ব্যবসায়ীরা প্রতি বস্তা লবণের দর ৬শ’ টাকা থেকে ১৪শ’ টাকা করে ফেলে। এতে ৮০০ টাকা বেশি দিয়ে লবণ কিনতে হয় চামড়া ব্যবসায়ীদের। ফলে চামড়া সংরক্ষণে খরচ বেড়ে যায়। অন্যদিকে ট্যানারি মালিকরা চামড়ার দাম না বাড়ানোয় ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়ে।
অন্যদিকে এই সংগঠনের সভাপতি নওয়াব হোসেন জানান, একটি বড় চামড়া সংরক্ষণে ১৫ থেকে ২০ কেজি লবণ লাগতে পারে। তবে গড়ে চামড়া প্রতি ১২ থেকে ১৫ কেজি লবণ কোরবানির সময় লেগে থাকে। কারণ কোরবানির গরুর চামড়ায় অতিরিক্ত চর্বি ও মাংস থাকে। সে হিসেবে ৭৪ কেজির এক বস্তা লবণে চার থেকে ছয়টি চামড়া সংরক্ষণ করা যায়।
তিনি বলেন, গত বছর কোরবানিতে চামড়া প্রতি সংরক্ষণ খরচ বাড়ে ২০০ টাকা। কিন্তু লবণ সংকট চলে গেলেও লবণ ব্যবসায়ীরা লবণের দর কমাননি। এবারও আগের দামেই চামড়া কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ফলে লবণের দাম বাড়লে লবণের জন্যই চামড়া নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
নওয়াব হোসেন আরও জানান, সপ্তাহ দুই আগেও যে লবণের বস্তা ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা দরে বিক্রি হতো, বর্তমানে ঢাকায় তা (৭৪ কেজির বস্তা) ১২শ’ থেকে ১২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। চট্টগ্রামে এই দর ১১শ’ টাকা। এরপরও আবার দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা চলছে।
লালবাগের পোস্তার আড়তদাররা বলছেন, এরইমধ্যে লবণের বাজার অস্থির করতে মাঠে নেমেছে নারায়ণগঞ্জের এক শ্রেণির লবণ ব্যবসায়ীরা। তারা কৃত্রিম সংকটের গল্প ফাঁদা শুরু করেছে। চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মিলে এই চক্রটি তৈরি করেছে শক্তিশালী লবণ সিন্ডিকেট।
তবে বিষয়টিতে নজর রাখছে শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে কোরবানির সময় লবণের বাড়তি চাহিদার কথা চিন্তা করে সরকার লবণ আমদানির সুযোগ দিয়েছিল। কিন্তু লবণের বাজার নিয়ে ব্যবসায়ীরা কারসাজিতে মেতে উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে এই সিন্ডিকেট ঈদের আগে আমদানির লবণ খালাস না করার পাঁয়তারা করছে। এদেরই কারসাজিতে ঈদের আর বেশি দিন বাকি না থকলেও এখনও পর্যন্ত আমদানি করা লবণ দেশে পৌঁছেনি।
এদিকে বাজার ঘুরে দেখা গেছে বাজারে প্রতিদিন লবণের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে বাজারে প্রতি বস্তা (৭৪ কেজি) লবণ ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ ২/১ মাস আগেও এসব লবণ বস্তাপ্রতি ৭০০/৭৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কোরবানিতে কাঁচা চামড়া সংরক্ষণে লবণের বাড়তি চাহিদা থাকে। এটাকে টার্গেট করে লবণের মূল্য নিয়ে কারসাজি করছে মিল মালিকরা।
চামড়া ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, ব্যবসায়ীরা লবণ আমদানিতে ইচ্ছাকৃতভাবে বিলম্ব করছে। সরকার যখন উদ্যোগ নিয়েছিল তখন এলসি করা হলে অনেক আগেই দেশে লবণ পৌঁছে যেত। কিন্তু আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা কোরবানিতে বাজারে লবণের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির জন্য আমদানি বিলম্ব করেছে। এখন মিল মালিকদের কাছে মজুদকৃত লবণ বাজারে চড়া দামে বিক্রি করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০১৭
আরএম/এমজেএফ