ঢাকা, বুধবার, ২২ শ্রাবণ ১৪৩২, ০৬ আগস্ট ২০২৫, ১১ সফর ১৪৪৭

তথ্যপ্রযুক্তি

স্টারলিংকে ভেঙে ফেলতে চায় চীন?

তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:০৬, আগস্ট ৬, ২০২৫
স্টারলিংকে ভেঙে ফেলতে চায় চীন?

রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইউক্রেন তাদের যোদ্ধাদের হাতে নানা সামরিক ও প্রযুক্তিগত সুবিধা তুলে দিয়ে মস্কোর পেছনে লেলিয়ে দেয়। সেসব প্রযুক্তি সুবিধার একটি হলো মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্কের স্টারলিংক ইন্টারনেট।

রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলায় স্টারলিংকের স্যাটেলাইট ব্যবহার করে কিয়েভ। এদিকে ইরানের সঙ্গে ১২ দিনের সংঘাতে ‘দখলদার রাষ্ট্র’ ইসরায়েলও একই প্রযুক্তি ব্যবহার করে।  

পূর্ব এশিয়ার দেশ চীন এখন পর্যন্ত বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করছে। প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনের পর্যবেক্ষণের কারণ, তারা স্টারলিংকে ভেঙে ফেলতে চায়। এর কারণ হতে পারে ‘ভয়’।

দ্য ইউরেশিয়ান টাইমসের এক খবরে বলা হয়েছে, ভয়ের কারণেই কিনা, চীনের সামরিক বিজ্ঞানীরা যুদ্ধে প্রতিপক্ষের হাতে থাকা স্টারলিংকের সুবিধা ভেস্তে দেওয়ার পথ খুঁজছেন। লো আর্থ অরবিটে থাকা হাজার হাজার স্টারলিংক উপগ্রহ ধ্বংস করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় ভাবছেন তারা। ওই কাজে উচ্চ-ক্ষমতার মাইক্রোওয়েভ অস্ত্র নিয়েও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে দেশটি।

স্পেস-শুটিং লেজার, স্টিলথ সাবমেরিন, সরবরাহ-শৃঙ্খল ভেঙে দেওয়া, স্টারলিংক উপগ্রহ ধ্বংস করতে আক্রমণাত্মক স্যাটেলাইট মোতায়েন, সবকিছুই বিবেচনা করছে চীন। দেশটি প্রয়োজনে সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বন্ধু থেকে শত্রু হওয়া ইলন মাস্ককে নিজেদের পক্ষে টেনে আনার কথাও ভাবছে। কারণ, দেশটি রাশিয়ার মতো চাপে পড়তে চায় না।

চীন একইসঙ্গে দুটি পথ ধরেছে। স্টারলিংক উপগ্রহ ধ্বংস করার পথ খোঁজার পাশাপাশি নিজস্ব লো-আর্থ-অরবিট স্যাটেলাইট সিস্টেম ‘চীআন ফ্যান’ তৈরির কাজও এগিয়ে নিচ্ছে দেশটি। অর্থাৎ প্রতিপক্ষ স্টারলিংককে ধ্বংস করেই দেশটি থামবে না, সঙ্গে সঙ্গেই তার রিপ্লেসমেন্টও নিয়ে আসবে।

‘চীআন ফ্যান’ বা জিসিক্সটি প্রকল্প নিয়ে চীন কাজ করছে ২০২৩ সাল থেকে। প্রকল্পটির লক্ষ্য হলো, স্টারলিংকের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ১৫ হাজারেরও বেশি লো আর্থ অরবিট ওয়াইড স্ক্রিন মাল্টিমিডিয়া স্যাটেলাইট স্থাপন করা। প্রথম ধাপের স্যাটেলাইট ২০২৪ সালের আগস্টে কক্ষপথে পাঠানো হয়েছিল। বর্তমানে কক্ষপথে প্রকল্পটির ৯০টি স্যাটেলাইট রয়েছে। এখন স্টারলিংক যেহেতু প্রথম হিসেবে সুবিধা নিচ্ছে, তাই ভবিষ্যতে পূর্ণযুদ্ধ পরিস্থিতি দেখা দিলেই স্টারলিংক স্যাটেলাইটগুলো ধ্বংস করতে তৈরি থাকতে চায় চীন।

স্টারলিংকের সামরিক ব্যবহার রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতে সবাই দেখেছে। যুদ্ধক্ষেত্রে নিরাপদ যোগাযোগ, তাৎক্ষণিক নির্দেশনা দেওয়া, ড্রোন অভিযান এবং সঠিক গোয়েন্দা তথ্য পেতে হলে এমন ইন্টারনেট সিস্টেম হাতে থাকার অনেক সুবিধা। এরই মধ্যে সিস্টেমটিতে ৮ হাজারেরও বেশি উপগ্রহ রয়েছে। ২০১৯ সালের পর থেকে, মহাকাশে সক্রিয় উপগ্রহের প্রায় তিনভাগের দুইভাগই ওই সিস্টেমের। ইলন মাস্ক মোট ৪২ হাজার উপগ্রহ মহাকাশে বসাতে চাইছেন। সিস্টেমটির এত শক্তিশালী সামরিক প্রয়োগ যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে চীনের চেয়ে এগিয়ে রাখতে পারে।

পারমাণবিক, মহাকাশ এবং সাইবার ক্ষেত্রে স্টারলিংককে একটি হুমকি হিসেবে দেখছে অনেক দেশ। অচিরেই তাইওয়ান প্রণালীতে তাইওয়ান দ্বীপ ইস্যুতে চীনকে যুক্তরাষ্ট্রের মুখোমুখি হতে হবে। ইউক্রেনের মতোই তাইওয়ানকে চীনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার অন্যতম অস্ত্র হয়ে উঠবে ওই স্টারলিংক।

এমএইচডি/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।