ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৮ শ্রাবণ ১৪৩২, ১২ আগস্ট ২০২৫, ১৭ সফর ১৪৪৭

তথ্যপ্রযুক্তি

নির্বাহী আদেশে টেলিটকের অনুকূলে তরঙ্গ বরাদ্দ বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে: বিশেষ সহকারী

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২:৪৮, আগস্ট ১২, ২০২৫
নির্বাহী আদেশে টেলিটকের অনুকূলে তরঙ্গ বরাদ্দ বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে: বিশেষ সহকারী প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব।

ঢাকা: নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন টেলিটকের অনুকূলে তরঙ্গ বরাদ্দ দেওয়া যায় কিনা সেটি বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে বলে মনে করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব।

সোমবার (১১ আগস্ট) দিনগত রাতে ফেসবুকে তিনি এক পোস্টে এমন মন্তব্য করেন।

তিনি লিখেছেন, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন একমাত্র মোবাইল অপারেটর হিসেবে টেলিটক দেশজুড়ে প্রতিযোগী অপারেটরদের তুলনায় কম স্পেকট্রাম বরাদ্দ পেয়ে নেটওয়ার্ক সেবা প্রদান করছে। প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু থেকে বিভিন্ন সময়ে তার চাহিদা অনুসারে স্পেকট্রাম চেয়েছে। তবে দেশের সার্বিক গ্রাহক সংখ্যা ও নেটওয়ার্ক পরিকাঠামোর পরিসর বিবেচনায় প্রতিটি স্পেকট্রাম ব্যান্ডেই টেলিটক অন্যান্য অপারেটরের তুলনায় সামঞ্জস্যপূর্ণ বরাদ্দ পায়নি, বরং স্বল্পতর এবং নগণ্য স্পেকট্রাম বরাদ্দ পেয়েছে।

তিনি জানান, শুরুর দিকে টেলিটক সিমে নাগরিকদের ব্যাপক চাহিদা থাকার পরেও এক-দেড় দশকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গ্রাহক অ্যাকুইজেশন করতে পারেনি বলে টেলিটকের দুর্বল ম্যানেজমেন্ট নিজেও এর জন্য দায়ী বলে মনে করি।

ফয়েজ আহমেদ বলেন, বিগত সরকার টেলিটককে চূড়ান্ত পর্যায়ে অকার্যকর রেখে গিয়েছে, এটা এখন আমাদের গলা কাঁটা পর্যায়ে চলে এসেছে। দেশের প্রধানতম মোবাইল কোম্পানিগুলোর তুলনায় টেলিটকের বেজ স্টেশন বা মোবাইল টাওয়ার সংখ্যা টুজিতে প্রায় পাঁচ ভাগের একভাগ, ফোরজিতে দশভাগের একভাগ মাত্র। এরকম নগণ্য টাওয়ার দিয়ে মানসম্পন্ন ভয়েস ও ইন্টারনেট সেবাদান প্রায় অসম্ভব। এক্ষেত্রে তৈরি হয়েছে নতুন সমস্যা, গ্রামীণ এলাকার যেখানে টেলিটকের বিনিয়োগ নেই যেখানে তরঙ্গ নষ্ট হচ্ছে।

তিনি জানান, আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পরে টেলিটকের ক্ষেত্রে দেখছি যে, মানসম্পন্ন ফোরজি সেবা দেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠানটির লো-ব্যান্ড তরঙ্গ একেবারেই নেই, মিড-ব্যান্ডে সামান্য তরঙ্গ রয়েছে, অন্যদিকে আপার মিড-ব্যান্ডে প্রাপ্ত তরঙ্গ ব্যবহারের জন্য কোনো বিনিয়োগ ছিল না। আওয়ামী লীগ জি-টু-জি চুক্তিতে কিছু ফান্ড এনেছিল তবে সেটা দুর্নীতির মাধ্যমে অপখরচ ও লুটপাট করেছে, কিছুই অবশিষ্ট নেই। সবমিলে বিগত সরকারের আমলে দূরদর্শী পরিকল্পনা এবং পর্যাপ্ত বিনিয়োগের অভাবে প্রতিষ্ঠানটির বিদ্যমান বিটিএস সাইট সংখ্যা অপ্রতুল হওয়ায় বরাদ্দকৃত স্পেকট্রামের পূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। তবে সুন্দরবন, হাওর ও পার্বত্য অঞ্চলের মতো দুর্গম এলাকায় টেলিটকের নেটওয়ার্ক কভারেজ তুলনামূলকভাবে ভালো থাকায় এবং গ্রাহকসেবার চাহিদা পূরণে বরাদ্দকৃত তরঙ্গের ভালো ব্যবহার হচ্ছে, এসব এলাকায় তরঙ্গের স্বল্পতাও আছে।

বিশেষ সহকারী লিখেছেন, টেলিটকের স্পেকট্রাম বরাদ্দের বিপরীতে বিটিআরসির বকেয়া অর্থ ইক্যুইটি খাতে অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে বিগত সময়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ কর্তৃক অর্থ মন্ত্রণালয়ে ইক্যুইটিতে রূপান্তরের একটি প্রস্তাব প্রেরণ করেছে। বিষয়টি নিরসন হলে বকেয়া অর্থ সরকারের এক খাত থেকে অর্থ অন্য খাতে স্থানান্তর করা যাবে। প্রস্তাবটি অনুমোদিত হলে টেলিটকের স্পেকট্রাম সংক্রান্ত বকেয়া দায় নিষ্পত্তি করা সম্ভব হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের ন্যায় নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন টেলিটকের অনুকূলে তরঙ্গ বরাদ্দ দেওয়া যায় কিনা সেটাও বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে, সেক্ষেত্রে ভবিষ্যতে এরূপ বকেয়া সংক্রান্ত জটিলতা এড়ানো সম্ভব হবে।

টেলিটক রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি হওয়ায় তরঙ্গ ক্রয়ের মূলধন কার্যত সরকারের বরাদ্দকৃত ফান্ডের ওপর বর্তায়। বাংলাদেশে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় পরস্পরের কাছে, মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সংস্থা সমূহের নিজেদের মধ্যে বকেয়া এবং পাওনা বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরেই চলমান ইস্যু রয়েছে। মন্ত্রণালয় মন্ত্রণালয়ের কাছে এবং একই মন্ত্রণালয়ের দপ্তর সংস্থাগুলোর নিজেদের মধ্যে বকেয়া ও লেনদেনের ইস্যু বিদ্যমান। সরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে পাওনার এসব বিষয় একটি স্বাভাবিক চিত্র। তাই এটাকে ইস্যু করে কৌশলগত খাতের সেবাদানকারী হিসেবে টেলিটকের তরঙ্গ প্রাপ্তি বন্ধ বা এ জাতীয় সরলীকৃত ধারণা বা চিন্তাকে মন্ত্রণালয় এন্টারটেইন করে না। বরং দুর্যোগ প্রবণ অঞ্চলে কভারেজ ক্যাপাসিটি সম্প্রসারণের গুরুদায়িত্ব পালন (যেখানে বাণিজ্যিক প্লেয়াররা যেতে চায় না), বাজার প্রতিযোগিতা ও সিগনিফিক্যান্ট মার্কেট পাওয়ার (এসএমপি) ঠিক রাখা, গ্রাহক অনুকূলে মোবাইল কল ও ইন্টারনেট মূল্য মান সুরক্ষা এবং তরঙ্গ বরাদ্দ প্রক্রিয়াকে প্রতিযোগিতামূলক রাখার জন্য ভারত ও পাকিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারি মালিকানাধীন কৌশলগত টেলিযোগাযোগ কোম্পানিকে প্রিমিয়াম স্পেকট্রাম বরাদ্দের চর্চা আছে।

চারটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছেন বিশেষ সহকারী:

১. দুর্যোগ প্রবণ অঞ্চলে ভয়েস, ডেটা এবং ডিজিটাল সেবার কভারেজ ও ক্যাপাসিটি সম্প্রসারণ (যেখানে বাণিজ্যিক প্লেয়াররা যেতে চায় না, কিংবা তাদের বিনিয়োগ আনুপাতিক হারে কম)।

২. বাজার প্রতিযোগিতা সমুন্নত রাখা, সিগনিফিক্যান্ট মার্কেট পাওয়ার (এসএমপি) ব্যালান্স ঠিক রাখা;

৩. গ্রাহক অনুকূলে মোবাইল কল ও ইন্টারনেট মূল্য মান সুরক্ষা।

৪. তরঙ্গ বরাদ্দ প্রক্রিয়াকে প্রতিযোগিতামূলক রাখা।  

এ চারটি বিষয় আমলে নিয়ে সরকারি মালিকানাধীন সেলুলার মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানে তরঙ্গ বরাদ্দ প্রশ্নে ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের পলিসি ঠিক কী হওয়া দরকার- সে বিষয়ে আমরা এ খাতে দেশে বিদেশে কর্মরত বিশেষজ্ঞদের মতামত এবং বিশেষভাবে নাগরিক প্রত্যাশাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করি।

এমআইএইচ/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।