সমুদ্রের তলদেশে একাধিক ক্যাবল কাটা পড়ার পর মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ায় ইন্টারনেট বিভ্রাটের ঘটনা ঘটেছে। এ তথ্য জানিয়েছে প্রযুক্তি জায়ান্ট মাইক্রোসফট।
গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ চলাকালে মাইক্রোসফটের সঙ্গে ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নিয়ে সমালোচনা চলছে। প্রতিষ্ঠানটির রোববার দেওয়া এক বিবৃতিতে ক্যাবল কেটে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক স্ট্যাটাস আপডেটে মাইক্রোসফট জানায়, লোহিত সাগরে সমুদ্রতলদেশীয় ফাইবার ক্যাবল কেটে যাওয়ার কারণে মধ্যপ্রাচ্যের মধ্য দিয়ে যাওয়া নেটওয়ার্ক ট্রাফিকের বিলম্ব হতে পারে।
বিশ্বব্যাপী সফটওয়্যার জায়ান্টটি আরও জানিয়েছে, এ ঘটনায় তাদের অ্যাজুর ক্লাউড কম্পিউটিং সেবায় প্রভাব পড়েছে, অ্যামাজনের পর যা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্ল্যাটফরম। তবে সাধারণ নেটওয়ার্ক ট্রাফিকে কোনো প্রভাব পড়েনি বলে জানিয়েছে কম্পানিটি।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, যে নেটওয়ার্ক ট্রাফিক মধ্যপ্রাচ্যের মধ্য দিয়ে যায় না, সেটি প্রভাবিত হয়নি। পরিস্থিতি পরিবর্তন হলে অথবা প্রতিদিন আমরা আপডেট দিতে থাকব।
মাইক্রোসফট জানিয়েছে, গ্রিনিচ মান সময় শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ভোর ৫টা ৪৫ মিনিট থেকে এ বিভ্রাট শুরু হয়।
এদিকে ইন্টারনেট সংযোগ পর্যবেক্ষণ সংস্থা নেটব্লকস জানিয়েছে, সৌদি আরব, পাকিস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভারতসহ কয়েকটি দেশে ইন্টারনেট সংযোগের ‘অবনতি’ হয়েছে, যার ফলে ‘গতি কমে গেছে এবং মাঝে মাঝে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হচ্ছে’। সৌদি আরবের জেদ্দার কাছে এসএমডব্লিউ৪ ও আইএমইডব্লিউ কেবল সিস্টেমে ত্রুটির কারণে এ সমস্যা হয়েছে। হুতি নিয়ন্ত্রিত আল মাসিরাহ টিভিও রোববার সকালে নেটব্লকসের উদ্ধৃতি দিয়ে কেবল কাটার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
এছাড়া পাকিস্তানের অন্যতম বৃহৎ টেলিকম সেবা প্রদানকারী পাকিস্তান টেলিকমিউনিকেশনস এক্সে এক বিবৃতিতে গ্রাহকদের সতর্ক করেছে, দেশটির ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা পিক আওয়ারে কিছু অবনতি অনুভব করতে পারে। তাদের আন্তর্জাতিক অংশীদাররা সমস্যার সমাধানে কাজ করছে।
সমুদ্রতলদেশীয় কেবল ইন্টারনেটের মূলভিত্তি, যা বৈশ্বিক ডেটা ট্রাফিক বহন করে। এশিয়া ও ইউরোপকে সংযুক্ত করার ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। এগুলো জাহাজের নোঙরের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, আবার হামলার লক্ষ্যও হতে পারে, যা ব্যাপক বিভ্রাট ঘটাতে পারে।
২০২৪ সালের শুরুতে নির্বাসিত ইয়েমেন সরকার অভিযোগ করেছিল, হুতি লোহিত সাগরে সমুদ্রতলদেশীয় কেবলে হামলার পরিকল্পনা করছে। কয়েকটি কেবল কাটা হলেও হুতি এর দায় অস্বীকার করে।
দ্য গার্ডিয়ান, প্লাস ৯৭২ ম্যাগাজিন ও লোকাল কলের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাইক্রোসফটের অ্যাজুর ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর জন্য ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকায় আটকানো ফোনকলসহ নানা তথ্য সংরক্ষণ করে আসছে।
অন্যদিকে মাইক্রোসফট বলছে, তাদের জানা ছিল না যে ইসরায়েলের সাইবার গোয়েন্দা বিভাগ ইউনিট ৮২০০ গণ-নজরদারির মাধ্যমে সংগৃহীত উপকরণের জন্য তাদের ক্লাউড সেবা ব্যবহার করছে। তবে আগস্টে প্রতিষ্ঠানটি তদন্ত শুরু করে। এছাড়া মাইক্রোসফট চার কর্মীকে চাকরিচ্যুত করেছে, যারা প্রতিষ্ঠানটির ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কের প্রতিবাদে অফিস প্রাঙ্গণে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিল।
জেএইচ