ঢাকা: ঈদের কেনাকাটা মানেই নতুন জামা-কাপড়, নতুন জুতা। তবে চিরচেনা এ চিত্রে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে।
রাজধানীর বৃহত্তম প্রযুক্তিপণ্যের বাজার এলিফ্যান্ট রোডের ইসিএস কম্পিউটার সিটি ও পান্থপথের বসুন্ধরা সিটির প্রযুক্তিপণ্যের দোকানগুলো ঘুরে এমন চিত্রই দেখা যায়।
সাধ্যের মধ্যে সেরাটা পাওয়ার জন্য রমজানের আগে থেকেই শুরু হয়ে যায় পরিকল্পনা আর কেনাকাটার প্রস্তুতি। তবে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গত কবছরে বাংলাদেশেও বিভিন্ন প্রযুক্তিপণ্যের ব্যাপক প্রসার হয়েছে। সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে এসেছে এক সময়ের অনেক বিলাসবহুল পণ্য। ফলে প্রাথমিক কেনাকাটা শেষে ফুসরৎ পেলেই প্রযুক্তির বাজারে ছুটছেন তারা।
যদিও সীমিত সাধ্যের মধ্যে পরিবারের জন্য কেনাকাটা করতেই হিমসিম খেতে হয় বেশিরভাগ মধ্যবিত্তকে। এরপরও জমানো টাকার সঙ্গে ঈদের বোনাসের টাকা খানিকটা জুড়ে দিয়ে স্মার্টফোন ব্যবহারের ইচ্ছা পূরণ করছেন কেউ কেউ। এমনকি সেজন্য জামা-কাপড়ের ওপর থেকে বাজেটও কমাচ্ছেন। অনেকে আবার প্রিয়জনকে উপহার দিচ্ছেন প্রযুক্তিপণ্য।
তবে সিমফোনি, ওয়াল্টন, মাইক্রোম্যাক্সের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বল্পদামের স্মার্টফোনের দিকেই ক্রেতাদের বেশি ঝোঁক লক্ষ্য করা গেছে।
বেসরকারি কর্মকর্তা আলতাফ মাহমুদ ইসিএস কম্পিউটার সিটিতে এসেছেন ওয়াল্টন প্রিমো এনএক্স কিনতে।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, অনেকদিন থেকেই ইচ্ছা ছিল একটা অ্যানড্রইড ফোন কেনার। তাই জমানো টাকার সঙ্গে ঈদের বোনাসের টাকা দিয়ে ফোন নিচ্ছি এবার।
গত বছরের ঈদ বাজারে ল্যাপটপের প্রাধান্য থাকলেও এবার স্মার্টফোন ও ট্যাবলেটই প্রাধান্য পাচ্ছে।
স্মার্টফোনের দিক দিয়ে সবার আগে এগিয়ে আছে সিমফোনি। বিশেষ করে তাদের আকর্ষণীয় ফিচারের নতুন অ্যানড্রইড ফোনগুলো সহজেই ক্রেতাদের টানছে।
গুলশান এক নম্বরে সিমফোনির শোরুমের বিপণন নির্বাহী শাহীন বলেন, বিক্রি বরাবরই মতোই ভালো। ঈদকে সামনে রেখেও প্রচুর বিক্রি হচ্ছে। তবে ট্যাবলেটের চেয়ে স্মার্টফোনের চাহিদা বেশি।
কোন মডেলগুলো বেশি চলছে জানতে চাইলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ডব্লিউ১৫০ ও এক্সপ্লোরার জেডটু মডেল দুটি উচ্চ কনফিগারেশনের হওয়ায় এ দুটি ফোনের দিকে ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি। এদের দাম যথাক্রমে ১৬ হাজার ৯৯০ এবং ১৯ হাজার ৫০০ টাকা।
ইসিএস কম্পিউটার সিটির আলট্রা টেকনোলজিসের কর্ণধার সোহেল আহমেদ জানান, রোজার শুরুর দিকে বিক্রি কম থাকলেও গত দু-তিনদিন ধরে বিক্রি বাড়ছে। ঈদ অবধি বিক্রি ভালো যাবে বলে আশা করছেন তিনি।
দেশি ব্র্যান্ডগুলোর পণ্য বিক্রি না করলেও আসুস, লেনোভো, টুইনমস, আইনল, আইসন ছাড়াও নন-ব্র্যান্ডের কমদামি ট্যাবলেট বিক্রি করেন তারা। থ্রিজি ট্যাবলেট ১০ হাজার আর টুজি সাড়ে ৮ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
১০ ইঞ্চি পর্দার ট্যাবলেট বিক্রি হচ্ছে ১৮ থেকে ২৫ হাজার টাকার মধ্যে। তরুণেরাই মূলত এসব পণ্য কিনছেন বলে জানা যায়।
এদিকে রকমারি পসরার জন্য বিখ্যাত বসুন্ধরা সিটির ইলেকট্রনিক্স পণ্যের দোকানগুলোয়ও বেশ ভিড় দেখা গেছে। তবে এখানকার ক্রেতারা কিছুটা দামি, খ্যাতনামা ব্র্যান্ডের পণ্যের দিকেই বেশি ঝুঁকছেন। তরুণদের সঙ্গে মধ্যবয়সীদেরও ভিড় দেখা গেছে বিভিন্ন দোকানে।
স্যামসাং গ্যালাক্সি সিরিজ, অ্যাপলের আইফোন, এইচটিসি ওয়ান, সনির এক্সপেরিয়া সিরিজের ফোনের বিক্রি কম হলেও এসব ঘিরে আগ্রহ দেখা গেছে অনেকের মধ্যেই।
বাবাকে অনুরোধ করে ঈদে একটি দামি ফোন কিনে দেওয়ার জন্য রাজি করিয়েছেন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির বিবিএর শিক্ষার্থী জুনায়েদ কবির রিমন। তিনি বলেন, প্রতিবার তো জামা-কাপড় কেনা হয়। কিন্তু এখন সেগুলোর চেয়ে গ্যাজেটস কম প্রয়োজনীয় নয়। তাই স্বপ্ন পূরণ করতে যাচ্ছি গ্যালাক্সি এসফোর কিনে।
ঈদ উপলক্ষেই কেনা কেন এমন প্রশ্নের উত্তরে জানান, ঈদ আসলে উপলক্ষ মাত্র। বিদেশেও ক্রিসমাস উপলক্ষে জামা-কাপড়ের সঙ্গে প্রযুক্তিপণ্যের বিক্রি হুহু করে বাড়ে। অনেক ক্ষেত্রে সাধারণ কেনাকাটার সঙ্গে পাল্লাও দেয়।
এমনকি বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রিসমাসকে সামনে রেখেই নতুন নতুন পণ্য উন্মোচন করে। বাংলাদেশে তো ঈদকে ঘিরে তেমন সংস্কৃতি আছেই, সঙ্গে শুধু যুক্ত হচ্ছে প্রযুক্তি। এটি সময়ের চাহিদা বলে তিনি মনে করেন।
নিচতলার গ্যাজেট অ্যান্ড গিয়ারের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ রাকিব জানান, তারা মূলত ব্র্যান্ডের পণ্যই বেশি বিক্রি করেন। ঈদে জামা-কাপড়ই মানুষ আগে কিনছে। তাই তাদের বিক্রিতে তেমন প্রভাব পড়ছে না। এর মধ্যেও গ্যালাক্সি এসফোর মিনি, লুমিয়া ৯২০, ৯২৫, আইফোন বিক্রি হচ্ছে মোটামুটি।
এ বাজারের ছয় তলায় খান ইলেকট্রনিক্সের ব্যবস্থাপক মঈনুদ্দিন জানান, রোজার শেষদিকে এসে প্রযুক্তির বাজারে ঈদের প্রভাব পড়বে। সাধারণ কেনাকাটা শেষে ২৫ রোজার পর থেকে প্রযুক্তির দিকে নজর দেবে নগরবাসী। কারণ বেতন-বোনাস মিলিয়ে এ সময়েই মানুষের হাতে বাড়তি কিছু টাকা থাকবে।
তিনি জানান, ন্যূনতম ৮ থেকে ১৩ হাজার টাকার মধ্যে স্মার্টফোনগুলো ভালো বিক্রি হচ্ছে। মাইক্রোম্যাক্সের ১০ হাজার টাকা মূল্যের ক্যানভাস মিউজিক ছাড়াও নতুন অ্যানড্রইড ফোনের চাহিদা বেশি। তবে দামি ব্র্যান্ডের ফোনগুলোর দিকে ক্রেতাদের আগ্রহ থাকলেও এসবের বিক্রি কম।
এর আগে তরুণীদের শুধু অলঙ্কার আর ফ্যাশনের দোকানে দেখা গেলেও প্রযুক্তির টানে ইলেকট্রনিক্স পণ্যের দোকানেও এবার ভিড়ছেন কেউ কেউ। একটি প্রাইভেট ইনস্টিটিউটে ফ্যাশন ডিজাইনের ছাত্রী ফারজানা লোপা বলেন, ডিজাইনিংয়ে সুবিধার জন্য দীর্ঘদিন ধরে একটি ট্যাবের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন। এ জন্য আমার প্রথম পছন্দ গ্যালাক্সির ১০ ইঞ্চি পর্দার নোট ট্যাবলেট। তবে বেশি দামের কারণে আপাতত সিমফোনির ট্যাব কিনছি।
এসবের বাইরে ল্যাপটপ, প্রিন্টার, ডেস্কটপ, হার্ডডিস্ক ছাড়াও ডিজিটাল পণ্যের বিক্রিও মন্দ না। ঈদকে সামনে রেখে এসব পণ্যের সঙ্গে আছে নানা অফার-উপহার। এ বাড়তি সুবিধাকে কাজে লাগাচ্ছেন অনেকেই।
স্মার্ট টেকনোলজিস, কম্পিউটার সোর্স, গ্লোবাল ব্র্যান্ডের বিভিন্ন বিক্রেতা দিচ্ছেন আকর্ষণীয় ছাড়সহ কিস্তি সুবিধা।
ঈদ উপলক্ষে ইসিএস ও আগারগাঁওয়ের বিসিএস কম্পিউটার সিটিতে এসব প্রযুক্তিপণ্য বিক্রি হচ্ছে।
তবে প্রয়োজনের তুলনায় স্মার্টফোন আর ট্যাবলেটের বাজারে ছাড় ও অফার কম বলে অনেক ক্রেতাই অভিযোগ করেছেন। বিভিন্ন দেশ এমনকি ভারতেও বিশেষ বিশেষ দিবসগুলোয় আকর্ষণীয় ছাড়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে অর্ধেক দামে (সেলস) দেওয়া হয় বিভিন্ন পণ্য।
ঈদকে ঘিরেও প্রযুক্তির বাজারে এমন ছাড় দেওয়া হলে সাধারণ মানুষ এদিকে আরও আকৃষ্ট হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
বাংলাদেশ সময় ২২৪২ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০১৩
এইচএসআর/সম্পাদনা: সাব্বিন হাসান, আইসিটি এডিটর