ঢাকা: চার হাজার কোটি টাকার দেনা সত্ত্বেও গোঁজামিলের লাভ দেখিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ব মোবাইল অপারেটর টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে আবারো নিয়োগ পেতে তৎপরতা শুরু করেছেন মো. মুজিবুর রহমান।
আগামী ১৮ অক্টোবর মুজিবুর রহমানের এমডি পদে চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে।
মুজিবুর রহমানের এই তৎপরতা সর্ম্পকে বক্তব্য জানতে বাংলানিউজের পক্ষ থেকে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে প্রথমেই তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। তিনি বলেন, এসব বিষয়ে তিনি কোনো কথাই বলবেন না। রেগে গিয়ে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, কেন আপনি এসব নিয়ে প্রশ্ন করছেন? এক পর্যায়ে মিটিংয়ে আছি বলে ব্যস্ততা দেখিয়ে ফোন রেখে দেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান এমডি মুজিবুর রহমান ২০০৮ সালে প্রথম টেলিটকের শীর্ষ পদে নিয়োগ পান। এরপর কয়েক দফায় এই পদে তার চুক্তির মেয়াদ বাড়ে। প্রায় ৬ বছর ধরে এই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে রয়েছেন। তার দায়িত্বকালে প্রায় পুরো সময় ধরে টেলিটক লোকসান দিয়ে আসছে।
মুজিবুর রহমানের মেয়াদ শেষের আগ মুর্হূতে হঠাৎ করে ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৪৬ কোটি টাকা লাভের ঘোষণা দেন। বছর বছর ধরে লোকসানি এই প্রতিষ্ঠানের আচমকা লাভের ষোষণায় অনেকেই খুশি হয়েছিলেন। ভেবেছিলেন আর যা-ই হোক না কেন দেশের একটি রাষ্ট্রীয় কোম্পানি হিসেবে টেলিটক লাভ করেছে। এটা খুবই ভালো খবর।
টেলিটকের এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, জন্মের পর থেকে যে প্রতিষ্ঠানটি লোকসানের ঘেরাটোপ থেকে বের হতে পারেনি, লোকসানের ভারে নিমজ্জিত এই মোবাইল অপারেটরের ভাগ্যে শিকা কখনোই খোলেনি। চাকরি স্থায়ীকরণ, অর্গানোগ্রামসহ নানা দাবিতে কর্মীদের বারবার আন্দোলন করতে হয়েছে। অথচ বিসিএস টেলিকম ক্যাডারের ৭৮ ব্যাচের এই কর্মকর্তার ভাগ্যের চাকা চিল সব সময়ের জন্যই সচল। দুর্ভাগ্য ছিল এই প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের নিত্যসঙ্গী।
কিন্তু বিসিএস টেলিকম ক্যাডারে নিচের সারিতে থাকা এই কর্মকর্তা বছরের পর বছর ধরে টেলিটকের ওপরের সারির এক নম্বর কর্মকর্তা হিসেবে দাপটের সঙ্গে বহাল তবিয়তে রয়েছেন।
লোকসানি প্রতিষ্ঠানের আকস্মিক লাভের ঘোষণার পেছনে যে সুচতুর মুজিবুর রহমানের নতুন কৌশল তা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এবং টেলিযোগাযোগখাতের সবাই কমবেশি ওয়াকিবহাল।
কিভাবে পুনরায় এই পদে নিয়োগ পেতে হয় তা তার ভালো করেই জানা। কারণ, মানুষকে ল্যাং মেরে গোল করার রেকর্ড নতুন নয় মুজিবুর রহমানের। ২০০৭ সালে টেলিটকের এমডি নিয়োগের আবেদন করে তিনজনের প্যানেলে দ্বিতীয় হন মুজিবুর। এরপর প্রথমজনকে ল্যাং মেরে শেষ পর্যন্ত নিয়োগ পান মুজিবুর রহমানই।
টেলিটক সূত্রে জানা গেছে, বিটিআরসির কাছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দুই হাজার কোটি টাকার দেনা রয়েছে। এর বাইরে ত্রিজি চালু করতে গিয়ে চীনের কাছে দুই হাজার কোটি টাকার বেশি দেনা। এছাড়া গত বছরের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) আয়োজিত নিলামে ত্রিজি লাইসেন্স পায় চারটি মোবাইল অপারেটর। রাষ্ট্রায়ত্ব কোম্পানি হিসেবে নিলামে অংশ না নিয়েই ত্রিজি লাইসেন্স পায় টেলিটক।
এজন্য সবাইকে বিপুল অঙ্কের অর্থ দিতে হয়। কিন্তু টেলিটক বিটিআরসির মেগাহার্টজের দাম এখনো পরিশোধ করেনি। এ অবস্থায় কোম্পানির লাভ দেখানোকে মুজিবুর রহমানের ধোঁকাবাজি হিসেবেই আখ্যায়িত করছেন এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।
টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে দোঁড়ঝাঁপ করছেন ফরিদপুরের এই লোক। কট্টর আওয়ামী লীগ বিরোধী হওয়া সত্ত্বেও ফরিদপুরের লোক মুজিবুর রহমান সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে একটি বাড়তি সুবিধা পেয়ে থাকেন।
রাজিউদ্দিন আহমেদ ও সাহার খাতুন টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী থাকাকালে বারবার নিয়োগের সময় এই বিষয়টিকেও কৌশলে সামনে নিয়ে আসেন মুজিবুর রহমান।
মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, এবারও একই পদ্ধতিতে কাজ হাসিল করার চেষ্টা করছেন মুজিবুর রহমান। তবে পদস্থ প্রশাসন মুজিবুর রহমানের কৌশলের ব্যাপারে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল।
সূত্র মনে করেন, সরকারি মালিকানার এক প্রতিষ্ঠানে শীর্ষ পদে সাত বছর এক ব্যক্তিকে বহাল রাখাও নজিরবিহীন। তাদের মতে, বর্তমান টেক দুনিয়ার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারেন এমন ব্যক্তিকে এই শীর্ষ পদে নিয়োগ দেওয়া জরুরি।
বাংলাদেশ সময়: ৯০৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১৪