ঢাকা: রিয়াদ হোসেনের ঘটনাটি দিয়েই শুরু করা যায়। ২২ এপ্রিলের কথা।
মো. রুবেল আহমেদের ঘটনাটি ভিন্ন রকম। এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে কোনও একটি রাতে জরুরি প্রয়োজনে এয়ারটেল সিমে ১০ এমবি একটি প্যাকেজ কিনে নিলেন। পরদিন দুই দফায় অটো রিনিউ মেসেজ আসে এবং দু’বারই ব্যালান্স থেকে টাকা কেটে নেয়। রুবেলের প্রশ্ন এক দিনে দুই বার অটো রিনিউ কেন হবে? আর অনুমোদন ছাড়া অটো রিনিউ হয়ে কেনোই বা টাকা কেটে নেওয়া হবে!!
রাসেল নামের গ্রাহকের অভিযোগ তার এলাকায় নেটওয়ার্ক থাকে না। এয়ারটেলে ফোন দিলেই বলে ঠিক হয়ে যাবে... কিন্তু ঠিক আর হয় না। এয়ারটেলে অফার পদ্ধতি নিয়েও বিরক্ত রাসেল।
৩০০ এমবি ইন্টারনেট গোটা মাসে পাওয়া যাবে কিন্তু তা আবার একসঙ্গে পাওয়ার সুযোগ নেই। প্রতিদিন ১০ টাকায় ১০ এমবি। কারো যদি কম খরচেই কাজ হয়ে যায় তাতে ফায়দা নেই এয়ারটেল থেকে সার্ভিস পেতে দিনে ১০টাকা খরচ করতে হবে!!
একজন অসহায় প্রিন্স আল জুবায়েরের অভিযোগ, তার নম্বরে ১৯ টাকা রিচার্জ করলে ২জিবি বোনাস পাওয়া যাবে এমন দুটি এসএমএস আসে। মে দিবসে ছুটির দিনে এই অফারে কনভিন্সড হয়েই দ্রুত ১৯টাকা রিচার্জ করে নিলেন প্রিন্স। কিন্তু এরপর কেটে গেছে গোটা এক দিন ২জিবি প্যাকেজের অপেক্ষা আর ফুরোয়নি তার।
আবার প্যাকেজ এলেই যে নেট পাওয়া যাবে সে নিশ্চয়তা কোথায়? ফারুক হোসেনের গল্পটিই শুনুন না। দিন কয়েক আগে এয়ারটেল হঠাৎ অফার দিলো ১২ টাকা রিচার্জ করলে ৩০০ মেগাবাইট ৩০০ মিনিট ফ্রি। লোভনীয় অফার, দ্রুত লুফেও নিলেন ফারুক। প্যাকেজও এলো। কিন্তু তার ভাগ্যে শিকা ছিড়লো না, অর্থাৎ ইন্টারনেট তিনি কানেক্ট করতে পারলেন না। এক পর্যায়ে নেট পেলেন কিন্তু তাতে কাটা পড়লো বাড়তি টাকা।
এই অফারটিতে প্রতারিত শেখ সুহান নামের একজন গ্রাহকও। তিনি জানালেন, ৩০০ এমবি দেখে যখন তিনি তা গ্রহণ করার জন্য রাজি হন, তখনই তার অ্যাকাউন্ট থেকে ৪৭ টাকা কেটে নেওয়া হয়। রিয়াদ শাহরিয়ার রিয়াজ নামের এক গ্রাহকও জানালেন এই অফারে প্রতারিত হওয়ার কথা।
সুন্দর আলী নামের এক গ্রাহকের মুখেই জানুন তার কথা। “হুম। বন্ধ সিম চালু করলে ১২টাকা রিচার্জ করলে ৩০০মিনিট এবং ৩০০এমবি দিবে বলে অফার দিছে ,কিন্তু রিচার্জ করার পর মিনিট এবং এমবি দিয়েছে ঠিকই কিন্তু ব্যবহার করা যায় না ! কাস্টমার কেয়ার এ ফোন করার পর বলে যে, একটানা ৫মিনিট কথা বলেন ৫মিনিট এবং ৫এমবি পাবেন! তারপর থেকে প্রতি এক মিনিট কথা বললে এক মিনিট এবং এক এমবি পাবেন! এইডা কোন অফার হইলো!”
গ্রাহকের এমন অভিযোগের শেষ নেই। বাংলানিউজ এমন কয়েক হাজার ই-মেইল বার্তা কিংবা ফেসবুক নোট পেয়েছে। এতে দেখা গেছে এয়ারটেলে ত্যক্ত-বিরক্ত গ্রাহক তাই এই কোম্পানিকে বাটপার, ‘চিটার’, ফালতু, প্রতারক এমন নানা ধরনের আখ্যা দিয়েছেন তারা।
ইন্টারনেট নাম ‘পথহারা’। তার অভিযোগ সিম থেকে ২৫০টাকা কেটে নেয় এয়ারটেল। এরপর অনলাইনে কাস্টোমার কেয়ারে যোগাযোগ করে অভিযোগ জানান তিনি। কাস্টমার কেয়ার দুঃখ প্রকাশ করে ভুল স্বীকার করে নেয়। কিন্তু শত চেষ্টা করেও সে টাকা আর ফেরত পান নি এই গ্রাহক।
তানভীর হাসান নামে আরেক গ্রাহকের অভিযোগ এয়ারটেল ‘স্লোপয়জনিং’ করে তরুণ প্রজন্মকে ধোকা দিচ্ছে।
ইন্টারনেট নাম ‘অচিন মানুষ’। তার বক্তব্য এয়ারটেল দিনভর হাজারটা এসএমএস দিতে থাকে, যা বিরক্তিকর। একই অভিযোগ ফাহমিদ রহমানেরও। দিনরাত অফারের এসএমএস-এ ত্যক্ত-বিরক্ত তিনি।
গোলাম সারোয়ার নামে এক গ্রাহকের অভিযোগ, কল করলেই দুই সেকেন্ড পর কল কেটে যাচ্ছে। তবে তার পরের অভিযোগটি আরও গুরুতর। গোলাম সারোয়ার জানালেন, ২০ সেকেন্ড কলের একটি অফার রয়েছে এয়ারটেলের। কিন্তু কল কাটার পর যখন দেখা যায় কল ডিউরেশন ১৯ সেকেন্ড, তখন সস্তিবোধ হলেও একটু পরেই তা থাকে না। কারণ ব্যালান্স চেক করতে গিয়ে দেখা যায়, ১৯ সেকেন্ড নয় দেখাচ্ছে ২২ বা ২৩ সেকেন্ড এবং পুরো কলের টাকা কেটে নেওয়া হয়।
বিশ্বজিৎ দাসের অভিযোগ, প্রায়শঃই ভুতুড়ে বিল পাঠিয়ে দেয় এয়ারটেল। জানতে চাইলে ওরা বলবে... আপনি ইন্টারনেট ব্যবহার করেছেন, অথচ মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট চালুই করা হয়নি।
পুরোনো কোম্পানি ওয়ারিদ থেকে এয়ারটেল ভারতী কিনে নিলেও এর পুরোনো গ্রাহকরা থেকেই যান তাদের সঙ্গে। কিন্তু এসময়ে কোম্পানিটির সেবার মান এতটাই নি¤œগামী যে ৭ বছরের পুরোনো গ্রাহকও এয়ারটেল ছেড়ে যাচ্ছেন।
শাহরিয়ার শাহজাহানের কথাই ধরুন না। অনেক আক্ষেপ করে এই গ্রাহক বাংলানিউজকে জানালেন, থ্রিজি সেবা চালুর পরে থেকেই এয়ারটেলের সেবা নি¤œমুখি হতে থাকে। তার মতে থ্রিজি চালুর নামে প্রতারণা করছে এয়ারটেল। এদের ইন্টারনেট এখনো টুজি’র যোগ্যতাই অর্জন করেনি, মত শাহরিয়ারের।
কার্ড দিয়ে রিচার্জ করলেও এয়ারটেলে সময় মতো টাকা আসেনা এমন অভিযোগও এসেছে। আজমেরী নুরজাহান নামে এক নারী গ্রাহক এই দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন। আজমেরী লিখেছেন, একদিন আগে কার্ড দিয়ে রিচার্জ করার পর ২৪ ঘণ্টা পার করেও মোবাইল ফোনে টাকা আসেনি। হেল্প সেন্টারে কল দিলে কাটা যায় আরও এক টাকা। এদিকে আবার নেটওয়ার্ক ভালো না হওয়ায় সেই কথাও শোনা যাচ্ছিলো না। ‘এয়ারটেল বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা উচিত’, একজন ক্ষুব্ধ আজমেরীর মত।
তানভীর শওকত জানালেন, মোবাইল ফোনের লাইন ওপেন থাকার পরেও বন্ধুরা তাকে পান না। কারণ কল করলেই শোনানো হচ্ছে ‘দ্য ফোন ইজ সুইচড অফ’। শওকতের মতে, এটি এয়ারটেলের সাধারণ সমস্যা।
মারকোস ডি স্লাগ ইন্টারনেট নাম। তার বক্তব্যটিও এখানে তুলে ধরা হলো (আক্রমণাতœক বক্তব্যগুলো বাদ দিয়ে)।
দুনিয়ার যত্ত উদ্ভট কার্যকলাপ এয়ারটেলের। বিজ্ঞাপনে এক কথা কর্মে আরেক কথা। আবোল তাবোল মার্কা কার্যপ্রণালী ভ্যালুঅ্যাডেড সার্ভিস। এক ইন্টারনেট কতটুকো আছে তা দেখতেই অপশন হাজার টা! একেকটা একেক জায়গায় কোনটা চিটাগাং! কোনোটা সিলেট!
১৯ টাকা রিচার্জে বন্ধ সিম অফার। এজন্য চেক করার একই অপারেটর এর যে কোন চালু সিম এ বন্ধ সিমটি অফারের আওতায় রয়েছে কিনা জানার একটা সিস্টেম দিছে একটা এসএমএস করা যায় ফ্রি।
ওখানে মেসেজ পাঠালে ফিরতি মেসেজ আসে এটা কি ভাবে করতে হবে ওই নিয়ম দেখায় বারবার আবার কখনো আসে আপনি এই অফারের আওতায় নেই অথচ সিমটি বন্ধ প্রায় ৭ মাস হবে!
এছাড়াও চলতি সপ্তাহে একটা বিজ্ঞাপন দিয়েছে-
“ননস্টপ বোনাসের ছড়াছড়ি
এখন যেকোন প্রিপেইডে”
৩০০ মিনিট ও মেগাবাইট
৩০ দিনের জন্য
অফারটি পেতে ১২ টাকা রিচার্জ করো
এরপর বিস্তারিত ৭ এর পাতায়....
পাতা উল্টিয়ে চোখ পড়তেই মেজাজ টা গরম হয়ে গেল!
ওখানে দ্বিতীয় লাইনে লেখা- কাস্টমার মূল অ্যাকাউন্ট থেকে ৫ মিনিট কথা বললে ৫ মিনিট ও ৫ মেগাবাইট বোনাস পাবে!
এভাবে নাকি বোনাস দিবে তারা! আমি তো প্রথমে ভেবেছিলাম না জানি কি!
বাংলাদেশ সময় ০০৫৪ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০১৪