ঢাকা: মানুষের পেটে ভাত না থাকলে ‘আইসিটি’ কোন কাজে আসবে না বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী।
রোববার সকালে রেডিসন ব্লু হোটেলের বলরুম অনুষ্ঠিত ‘ভিশন ২০৩০: ফ্রেমওয়ার্ক ফর ইকোনোমিক পলিসি মেকিং অ্যান্ড স্ট্রাটেজি ফরমুলেশন ইন এ প্লুরালিস্টিক ডেমোক্রেসি’ শীর্ষক সম্মেলনের ২য় দিন ‘কৃষির উন্নতি’ শীর্ষক সেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশ ইকোনমিস্টস ফোরাম (বিইএফ) এর প্রথম সম্মেলনে বিইএফ, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস), পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট(পিআরআই) ও বাংলাদেশ ব্যাংক যৌথভাবে এর আয়োজন করে।
এইচএসবিসি, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) এতে সহযোগিতা করছেন।
বেসরকারি খাতকে কৃষি খাতে বিনিয়োগ করার আহবান জানিয়ে মতিয়া বলেন,‘ আমি একজন ক্ষুদ্র ব্যক্তি হয়ে বিলগেটসকে বলেছিলাম আপনি যে আইসিটি করছেন, সেটা মানুষই তো ব্যবহার করবে। সে যদি মানুষের মতো বেঁচে থাকে, লেখাপড়া শিখতে পারে তাহলে তো ব্যবহার করবে। আপনারা যদি খাবার উৎপাদন ও উন্নয়নে টাকা না দেন তাহলে আইসিটি ব্যবহার করার লোক থাকবে না। ’
তিনি বলেন, ‘কিছু লোক আইসিটি ব্যবহার করবে না। পেটে ভাত, এক খানা মোবাইল ফোন আর এক খানা প্যাড। তাই যারা ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশনে আছেন তাদের কৃষি ও উন্নয়ন খাতে বিনিয়োগ করার আহবান জানাই। ’
কৃষি খাতে অতিরিক্ত সার ব্যবহার সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর সারে সাবসিডি দিয়েছে এবং দিয়ে যাবে। এতে কোন হীনমণ্যতা নেই। সারের দাম কমানোর ফলে ফার্টিলাইজার ব্যবহার কমে গেছে।
সারের দাম ৩ দফায় কমানোর ফলে চাল আমদানি করতে হচ্ছে না উল্লেখ করে মতিয়া বলেন,‘ নন ইউরিয়া সারের দাম ৩ দফায় কমানোর ফলে আজ চাল আমদানি করতে হচ্ছে না। কিছু বীজধান ও সুগন্ধি চাল রপ্তানি করা হচ্ছে। সাবসিডি দেওয়া যদি ভুল হতো তাহলে চাল আমদানি করতে হতো। ’
কৃষি যন্ত্রাংশে ২৫ শতাংশ সাবসিডি দেওয়া যুক্তি সঙ্গত হয়েছে বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রী। তিনি বলেন,‘কৃষিকাজে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ কৃষি ছাড়াও অন্যান্য কাজে ব্যবহার করে কৃষক নানাভাবে উপকৃত হয়।
এ সাবসিডি অর্থনীতিতে কি প্রভাব পড়েছে তা অর্থনীতিবিদরা বুঝে উঠতে পারেননি উল্লেখ করে এ প্রভাব হিসেব করতে অর্থনীতিবিদদের আহবান জানান তিনি।
কৃষির জন্য ছোট যন্ত্রাংশ তৈরির জন্য আহবান জানিয়ে তিনি বলেন,‘ মেগা যন্ত্রাংশ দিয়ে কৃষক কাজ করতে পারবে না। দাম বেশির কারণে কিনতে পারবে না। এজন্য বড় যন্ত্রাংশ তৈরি না করে ছোট যন্ত্রাংশ তৈরি করুন। ’
আমরা ফসল নয়, বিজ্ঞান খাচ্ছি উল্লেখ করে মতিয়া বলেন, ‘বিজ্ঞান ব্যবহার করে আমাদের দেশের বিজ্ঞানীরা যদি ফসলের উন্নত জাত আবিষ্কার না করতেন তাহলে এদেশের দুর্ভিক্ষ কেউ ঠেকাতে পারতো না। ’
‘সরকার পরিবর্তনে বিজ্ঞানীরা অসহায় বোধ করেন’ বলে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, বর্তমান বিশ্বের বাস্তবতা হলো, খাদ্য সংকটে পড়লে টাকা দেবে, খাবার নয়। খাবার উৎপাদন করে নিতে হবে। সেক্ষেত্রে যে সরকারই থাকুক না কেন কৃষি ও কৃষি গবেষণার ক্ষেত্রে বরাদ্দ বাড়ানোর আহবান জানাই।
কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন,‘ কৃষক যে ফসল উৎপাদন করতে পারে সেজন্য এ সরকার নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। সেজন্য ১০ টাকা দিয়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে কৃষিঋণ নিতে পারে। এ অ্যাকাউন্ট খোলার মাধ্যমে আমরা চেয়েছি কত মানুষ কৃষিঋণ নেয়, কিভাবে ব্যবহার করছেন। ’
গত চারবছরে মহাজনী ঋণ উঠে গেছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন,‘ মহাজনী ঋণ উঠে গেছে। তবে কৃষক কোনোদিন ঋণ থেকে মুক্তি পাবে না। ’
শিল্পায়ন ও বিদ্যুতের ফলে উত্তরবঙ্গে গম উৎপাদন কমে যাচ্ছে। তবে বিজ্ঞানীরা তাপমাত্রা সহিষ্ণু গমের জাত উৎপাদনের চেষ্টা করছে। মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও বরগুনায় গম উৎপাদনে যাচ্ছে সরকার।
প্রাইভেট সেক্টর মাঝে মাঝে ডার্টি (নোংরা) গেম প্লে করে অভিযোগ করে মন্ত্রী বলেন,‘ প্রাইভেট সেক্টর উন্নয়নে অংশগ্রহণ করে যাচ্ছে। তবে তারা মাঝে মাঝে কৃষি নিয়েও ডাটি গেম প্লে করে। অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কৃষি নিয়ে একই কাণ্ড ঘটায়। ’
এদেশের কৃষককে বিপদে পেলে কে কি খেলে তা অন্তত আ.লীগ সরকারের সামনে বড়াই করে না বলে তার জন্য হুঁশিয়ার করেন মন্ত্রী। সরকার ও বিরোধীদলের থাকার কারণে সব প্লেয়ার (খেলোয়াড়) ও অ্যাক্টরের (অভিনেতা) মুখ আমাদের চেনা আছে বলে দাবি করেন তিনি।
জিনেটিক্যালি মডিফাইড অর্গানিজম (জিএমও) সম্পর্কে বলেন,‘ জিএমও নিয়ে কোট পর্যন্ত যেতে হয়েছে। কিন্তু ছেড়ে দেয়নি। যার ফসল বিটি বেগুন। সয়াবিন, ক্যানোলা সাত সমুদ্র তের নদী পার হয়ে আসে বলে কোনো কথা নেই।
বিটি বেগুন আমরা করি তখন পরিবেশবাদীদের হইচই শুরু হয়। সব ফয়সালা করে আমরা মাঠে নেমেছি। জিএমও ভবিষ্যত কৃষি বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রী।
কলা জিএমও হয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে মন্ত্রী পরিবেশবাদীদের এখন আফ্রিকা গিয়ে আন্দোলন, মানববন্ধন করার আহবান জানান।
সরকার মসল্লা জাতীয় ফসল উৎপাদন বাড়াতে ৪ শতাংশ সুদে ঋণ দিচ্ছে সরকার লেও জানান তিনি।
উত্তরবঙ্গে কৃষি বেশিদিন থাকবে না উল্লেখ করে কৃষি মন্ত্রী বলেন,‘ ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশনের কারণে উত্তরবঙ্গ থেকে কৃষি বিদায় নিচ্ছে। তবে দক্ষিণাঞ্চলে কৃষিতে নজর দিতে হবে। এক্ষেত্রে কিছু সমস্যা উত্তরণের বিকল্প নেই। ’
কৃষির ওপর নিবন্ধ উপস্থাপন করেন অর্থনীতিবিদ মাহবুব হোসাইন, আবদুস সাত্তার মণ্ডল, সামছুল আলম এবং কাজী সাহাবুদ্দিন।
সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমানসহ অন্য অর্থনীতিবিদরা উপস্থিত রয়েছেন।
** শিক্ষা গবেষণায় বরাদ্দ নেই
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৭ ঘণ্টা, ২২ জুন, ২০১৪