ঢাকা: রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল অপারেটর টেলিটকের ভিওআইপি’র (ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল) অবৈধ ব্যবসা ভয়াবহ আকারে বেড়েছে। ভিওআইপি’র অবৈধ সিম বন্ধ করার উদ্যোগ নিজে থেকে নেওয়ার কথা থাকলেও টেলিটক তা না করে রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
ভিওআইপি’র অবৈধ ব্যবসায় জড়িত থাকার কারণে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিটিআরসি) সম্প্রতি টেলিটকের প্রায় এক লাখ সিম বন্ধ করেছে। ভিওআইপি’র অবৈধ ব্যবসার ফলে প্রতি মাসে সরকার গড়ে এক হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে। বিটিআরসি থেকে এ তথ্য পাওয়া গিয়েছে।
সরকার কিছুতেই বন্ধ করতে পারছে না টেলিটকের ভিওআইপি’র অবৈধ ব্যবসা। বিভিন্ন সময়ে অভিযান, দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলা কোনো কিছুই থামাতে পারছে না টেলিটকের ভিওআইপি’র অবৈধ ব্যবসা।
বিটিআরসি সূত্রে জানা গেছে, ভিওআইপি’র অবৈধ ব্যবসা বন্ধের ব্যাপারে মোবাইল অপারেটরেরা সবাই একমত হওয়ার পর বিটিআরসি এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সিম শনাক্ত করতে উদ্যোগী হয়। এরই অংশ হিসেবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ভিওআইপি’র অবৈধ কলের সঙ্গে যুক্ত সিম শনাক্তকরণে মিউচি নামে ডিটেক্টর মেশিন বসায়। ওই মেশিনের তথ্য অনুযায়ী বিগত পাঁচ বছরে টেলিটকের ভিওআইপি’র অবৈধ ব্যবসা ব্যাপকহারে বাড়ার সত্যতা মিলেছে।
বিটিআরসি’র বসানো মেশিন ছাড়াও অপারেটরেররা নিজস্ব সিস্টেম থেকেও কোন কোন সিম ভিওআইপি কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে তা শনাক্ত করতে পারে। নিজস্ব সিস্টেমে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী অপারেটররা নিজেরাই এ ধরনের সিম বন্ধ করছে। কিন্তু টেলিটক বিষয়টি আমলেই নিচ্ছে না।
বিগত পাঁচ মাসে ভিওআইপি’র অবৈধ ব্যবসায় জড়িত থাকার কারণে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) টেলিটকের প্রায় এক লাখ সিম বন্ধ করেছে। সরকারের কিছু কঠোর পদক্ষেপের কারণে মাঝে কিছুদিন টেলিটকের ভিওআইপি ব্যবসা কমেছিল। কিন্তু সম্প্রতি এটি আবার ভয়াবহ আকারে বেড়েছে।
বিটিআরসি’র এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত জানুয়ারি মাসে টেলিটকের ভিওআইপি’র অবৈধ ব্যবসার কারণে ২৮ হাজার ৬৯টি সিম বন্ধ করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। এরপর বিষয়টি নিয়ে কঠোর অবস্থান নিয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। কমিটির সদস্যরা টেলিটকের পদস্থ কর্মকর্তাদের ডেকে এ বিষয়ে শাসিয়ে দেয়। এর পরের মাসে ভিওআইপি’র অবৈধ কলের সংখ্যা কমে আসে। দেখা যায়, ফেব্রুয়ারি মাসে ভিওআইপি’র সঙ্গে যুক্ত থাকায় ১১ হাজার ৮৯৭টি সিম বন্ধ করা হয়।
এক মাস যেতে না যেতে মার্চ মাসে ভিওআইপি’র অবৈধ কলের কারণে ১৮ হাজার ৭৭৭টি সিম বন্ধ করে বিটিআরসি। পরের মাসে এই সংখ্যা ২৬ হাজার ৭৭৭টিতে উন্নীত হয়। একই কারণে মে মাসে বিটিআরসি বন্ধ করে ৩৪ হাজার ৩৯৯টি সিম।
মিউচি মেশিনের তথ্য বিটিআরসি সংরক্ষণ করে থাকে। বিটিআরসির সঙ্গে ওয়াদা অনুযায়ী, প্রত্যেক মোবাইল অপারেটর নিজে থেকেই এটি শনাক্ত করে বন্ধ করার কথা। কিন্তু যখন অপারেটররা নিজে থেকে এটি বন্ধ না করে তখন বিটিআরসি তা বন্ধ করে দেয়। টেলিটকের মাসের পর মাস এভাবে ভিওআইপি জমজমাট ব্যবসা অবৈধভাবে চললেও তারা কখনোই নিজে থেকে এসব সিম বন্ধ করে না।
ভিওআইপি’র অবৈধ ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগে টেলিটকের ডিজিএম এ কে এম আসাদুজ্জামান জেল হাজতে রয়েছেন।
এ ব্যাপারে টেলিটকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু বকর সিদ্দিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, শুধু টেলিটক নয়, অন্য অপারেটর এবং আইজিডব্লিউ ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরাও ভিওআইপি’র অবৈধ ব্যবসা করছে। টেলিটকের সিম ডুপ্লিকেট করে এগুলো করা হচ্ছে। যাতে তাদের ওপর দোষ না আসে।
তিনি বলেন, টেলিটকের সিম ডুপ্লিকেট শনাক্ত করতে শিগগিরই বিটিআরসি একটি যন্ত্র বসাবে। এটি বসানো হলে এ ধরনের গর্হিত কাজ বন্ধ করা সম্ভব। তবে টেলিটকের সিমে যে একেবারেই ভিওআইপি হচ্ছে না তা নয়।
আইজিডব্লিউ সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান মীর টেলিকমের চিফ অপারেটিং অফিসার সারোয়ার আলম সিকদার বলেন, কারো সিম ডুপ্লিকেশন করা উচ্চতর প্রযুক্তির ব্যাপার। আর কেউ যদি টেলিটকের সিম ডুপ্লিকেশন করেও থাকে তাহলে তারা কিভাবে টেলিটকের নেটওয়ার্কে যুক্ত করবে। এটি করতে হলে টেলিটকের কাউকে করতে হবে। আর মার্কেট থেকেও যদি কেউ সিম কিনে ভিওআইপি করে তাহলেও তা বন্ধ করা সম্ভব টেলিটকের পক্ষেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১০ ঘণ্টা, ১৭ জুন , ২০১৪