ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

স্মার্টফোনের মূল্য নিয়েও যুদ্ধ হবে

জনি সাহা, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭১৯ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০১৪
স্মার্টফোনের মূল্য নিয়েও যুদ্ধ হবে

ঢাকা: মাত্র এক বছর আগের কথা। গ্রাহকের মনোযোগ আকর্ষণে স্মার্টফোন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ঢাকঢোল পিটিয়ে গণমাধ্যমে নিজেদের হ্যান্ডসেটের সুবিধাদি তুলে ধরতে ব্যস্ত থাকতো।

পাতাজুড়ে স্থান পাওয়া বড়বড় বিজ্ঞাপনগুলো তারই প্রমাণ বহন করতো। এসব বিজ্ঞাপনে তুলে ধরা হতো হ্যান্ডসেটের বিভিন্ন ফিচার ও সুবিধাদি। এ ‘যুদ্ধে’র কবলে পড়ে হ্যান্ডসেটের মূল্য ছাড়িয়ে যেতো ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা।

তবে এক বছরের ব্যবধানে পাল্টে গেছে চিত্র। ফিচার নয়, যুদ্ধের জন্য এখন অস্ত্র হিসেবে হ্যান্ডসেট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবহার করছে ‘মূল্য’কে। আর স্মার্টফোন বাজারের বাস্তবতাও তাই বলছে।

ইতোমধ্যে বিষয়টি অনুধাবন করেছে ভারতীয় হ্যান্ডসেট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান মাইক্রোম্যাক্স ও কার্বন। হ্যান্ডসেটের মূল্য বিবেচনায় এ তালিকায় দেখা যাচ্ছে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড নকিয়াকেও।

ইন্টারন্যাশনাল ডাটা করপোরেশন’র (আইডিসি) তথ্যানুযায়ী, মাইক্রোম্যাক্স ও কার্বন’র বাজারে আনা হ্যান্ডসেটগুলোর মূল্য ৯ হাজার রুপির মধ্যে। এরই ধারাবাহিকতায় আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড নকিয়া তার উইন্ডোজ ফোন লুমিয়া-৫২০ এর মূল্য নির্ধারণ করেছে ১০ হাজার রুপির কিছু বেশি।

স্বল্পমূল্যের হ্যান্ডসেটের মাধ্যমে গত এক বছর বাজার দখলে রেখেছে মটোরোলার মটো-ই এবং মটো-জি। এছাড়া, আসুসের জেনফোন-৪ ও জেনফোন-৫’র মতো কমমূল্যের হ্যান্ডসেট ছিল বাজার কাটতির শীর্ষে।

এদিকে, ভারতীয় হ্যান্ডসেটগুলোর স্বল্পমূল্যের কারণে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের দামি হ্যান্ডসেট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে মূল্য নিয়ে ভাবাতে শুরু করেছে বলে মনে করছেন আইডিসি’র বাজার বিশ্লেষক করন ঠাকর।

তিনি বলেন, হ্যান্ডসেটের মূল্যের বিষয়ে ভারতীয় ব্র্যান্ডগুলো আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছে। এটা নিয়মিতভাবেই আমাদের চোখে পড়ছে। এর ফলে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলো উন্নত হ্যান্ডসেটগুলোকে কমমূল্যে বাজারে ছাড়তে বাধ্য করছে।

উদাহরণ হিসেবে মটোরোলা হ্যান্ডসেটের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, গত পাঁচ মাসে মটো-ই, জি ও এক্স সিরিজের প্রায় ১০ লাখ হ্যান্ডসেটের চালান হয়েছে। এছাড়া, বাজারে আসার মাত্র চার দিনের মাথায় আসুসের প্রায় চল্লিশ হাজার হ্যান্ডসেট বিক্রি হয়েছে।

আইডিসি’র এক রিপোর্টে বলা হয়, গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে ভারতের হ্যান্ডসেট বাজার বেড়েছে ১৮৬ শতাংশ। শুধুমাত্র ১২ হাজার রুপির মধ্যে সীমাবদ্ধ এ ধরনের হ্যান্ডসেটগুলোরই অবদান ৭৮ শতাংশ।

করন ঠাকর বলেন, আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের উচ্চ মানের হ্যান্ডসেটগুলোকে প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে বাজারে ছাড়তে হচ্ছে।

অন্যদিকে, বিভিন্ন হ্যান্ডসেট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকদের হাতে তাদের হ্যান্ডসেট ধরে রাখতে চালু করেছে অপারেটিংয়ে আপডেট সিস্টেম।

উপমহাদেশের গ্রাহকদের হাতে মাত্র ১০০ ডলারের উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন হ্যান্ডসেট পৌঁছে দেওয়ার জন্য মাইক্রোম্যাক্স, কার্বন ও স্পাইস চুক্তিবদ্ধ হয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে বলা হয়। চুক্তির আওতায় আসতে আরও কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের ইচ্ছার কথা জানিয়েছে।

আনশুল গুপ্ত নামে এক বিশ্লেষক বলেন, ভারতের মোবাইল হ্যান্ডসেট বাজারের ২৫-২৭ শতাংশ বর্তমানে স্মার্টফোনের দখলে। আগামী চার বছরে এটি বৃদ্ধি পেয়ে ৮০ শতাংশে দাঁড়াবে।

চিপসেট ম্যানুফেকচারার প্রতিষ্ঠান মিডিয়াটেক জানায়, ভারতের বাজার হচ্ছে মূল্য সচেতনতার বাজার। এখানকার ক্রেতারা হ্যান্ডসেটের মূল্য নিয়ে চিন্তা করেন।

মিডিয়াটেক’র জেনারেল ম্যানেজার (কর্পোরেট বিষয়ক আন্তর্জাতিক বিক্রয় প্রতিনিধি) ড. ফিনবার ময়নিহান বলেন, এন্ট্রি লেভেল হ্যান্ডসেটের বাজার শুধু ভারত, চীন, নেপালে সীমাবদ্ধ নয়। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রেও এ ধরনের হ্যান্ডসেটের চাহিদা বাড়ছে। অনেকে এখন আর সাতশ’ ডলারের হ্যান্ডসেট কিনতে রাজি নন।

তবে বাজারে টিকে থাকতে হ্যান্ডসেট প্রস্তুতকারী বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো একইসঙ্গে অন্য ইলেকট্রনিক্স পণ্য তৈরির দিকেও ঝুঁকছে। তৈরি করছে পরিধানযোগ্য ফিটনেস ট্র্যাকার, স্মার্টওয়াচের মতো পণ্য।

অ্যাপল’র মতো প্রতিষ্ঠান যারা কখনও হ্যান্ডসেটের মূল্য নিয়ে ভাবে না, তারাও ভারতের বাজারে আইফন-৫সি’র ক্ষেত্রে বাইব্যাক স্কিমের কথা বলছে।

আইডিসি’র ঠাকর বলেন, নামিদামী প্রতিষ্ঠানের হ্যান্ডসেটে ভালো উপাদান ব্যবহার করা হয় বিষয়টি ঠিক। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলোকে হ্যান্ডসেটের মূল্য নিয়ে চিন্তা করতে হবে। বেশ রাগঢাক পিটিয়ে বাজারে আসা উচ্চমূল্যের হ্যান্ডসেটগুলো ক’মাস না যেতেই প্রায় অর্ধেক দামে নেমে আসে।

কমদামী হ্যান্ডসেট ক্রেতাদের মধ্যে যেভাবে সাড়া তৈরি করেছে সেজন্য উচ্চমূল্যের হ্যান্ডসেট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়টি নিয়ে ভাবার সময় এসেছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৭১৯ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।