দিনে দিনে কম সময় গড়ালো না কম্পিউটার ভাইরাসের। কম্পিউটিংয়ের গোড়ার দিনগুলোতে স্রেফ ঠাট্টাচ্ছলে এই ভাইরাসের ব্যবহার শুরু হলেও আধুনিক সময়ে তা অত্যাধুনিক সামরিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
কালের বিবর্তনে ভাইরাসের রূপ ও শক্তি বেড়েছে। ৯০’র দশকে ভাইরাসের যে বিস্তার, ম্যালওয়্যারের সেই উদ্বেগময় দিনগুলোও আজ ইতিহাস। এরপরেও এসেছে নানা ধরনের ভাইরাস। শিল্পীরা ছবি এঁকে সেসব ভাইরাসের নানা রূপ দিয়েছেন। কোনোটি দেখতে সবুজ ছত্রাকের মতো, কোনোটি ঘিনঘিনে পোকার মতো। ভাইরাস আক্রান্ত হলে কম্পিউটার স্ক্রিনে ভেসে ওঠে সেইসব ছবি।
একেকটি ভাইরাস আবার একেক ভিন্ন উপায়ে তৈরি। কম্পিউটারে কুকির নাচানাচি, দানবের আগ্রাসন স্টাঙ্কসনেটের ভয়াবহ যুদ্ধ দেখা যায়। আর তারচেয়ে বড় কথা কম্পিউটারে ক্ষতিরও মাত্রা বাড়তে থাকে নতুন নতুন ভাইরাস আবিষ্কারে। একটির চেয়ে আরেকটি বেশি ভয়ঙ্কর। ইন্টারনেট জগতে এইসব ভাইরাসের বিচরণে লাখ লাখ কম্পিউটার বসে গেছে। এক পর্যায়ে ভাইরাস সৃষ্টি ও ছড়িয়ে দেওয়ার এই খেলায় যোগ দেয় সামরিক শক্তিগুলোও। একসময় যা ছিলো নিতান্তই সাধারন হুমকি তা এখন হয়ে উঠেছে বড় বাণিজ্য, জাতীয় নিরাপত্তাও এখন যার হুমকিতে।
লরেন্স স্ল্যাটারের বানানো কুকি মনস্টার.... ১৯৬৯ সালে এই ভাইরাস প্রথম কোডেড হয়। এটি ভাইরাস জগতের প্রথম দিকের একটি। ব্যবহার কারী তার কম্পিউটারে ‘কুকি (cookie) কথাটি যতক্ষণ না লিখবেন ততক্ষন এর সমগ্র প্রক্রিয়া বন্ধ করে রাখবে এই ভাইরাস। আবিস্কারক কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের সঙ্গে অনেকটা ঠাট্টা করতেই এই ভাইরাস বানিয়েছিলেন।
টেকনো ভাইরাস নামের ভাইরাসটিও সেই ডস পদ্ধতির কম্পিউটার যুগের। এই ভাইরাসের কাজ ছিলো একটাই, কম্পিউটারের কম্যান্ড ফাইল অকেজো করে টেকনো মিউজিক বাজতে থাকবে। বাধ্য হয়ে ব্যবহারকারী টানা ১১০ সেকেন্ড ধরে শুনবেন সেই বাদ্য। দশ বার কম্পিউটার খুললে একবার এই ঝামেলা পোহাতে হবে।
জোনাথন জাওয়াদার তৈরি লিচেন ভাইরাস। এই ভাইরাসের সময়ই কম্পিউটার জগতে ভাইরাস এক দৃশ্যমান রূপ পায়। এই ভাইরাস কম্পিউটারে বাসা বেঁধে এক মাস চুপচাপ শুয়ে থাকে। এরপর আস্তে করে কম্পিউটারটি নিজের দখলে নিয়ে নেয়। তখন স্ক্রিন সেভারের মতো করে সবুজ ছত্রাকে ঢেকে দেয় কম্পিউটারের স্ক্রিন।
জুশুয়া চেকলের তৈরি হ্যাপি ৯৯ প্রথম ভাইরাস যা ই-মেইলের মাধ্যমে ছড়ানোর ক্ষমতা রাখে। এই ভাইরাস ঝামেলাপূর্ণ। ২০০০ সালের মধে বিশ্বের তিনটি মহাদেশে এই ভাইরাস সবিস্তারে ছড়িয়ে পড়ে। গবেষকরা যখন একে প্রতিহত করার একটি পথ বের করে, তার আগে ১০ লাখেরও বেশি কম্পিউটারকে ভাগাড়ে পাঠিয়ে দেয় হ্যাপি ৯৯।
ভালোবাসার বার্তা নিয়ে ২০০০ সালে কম্পিউটার জগতে আঘাত হানে ‘আই লাভ ইউ’ ভাইরাস। গোটা বিশ্বের ৮ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি সাধন করে তবেই ক্ষান্ত হয় এই ভাইরাস। সেসময় আক্রান্ত কম্পিউটার ব্যবহারকারী ই-মেইল খুললেই পেয়ে যেতেন ‘তোমায় আমি ভালোবাসি’র বার্তা।
মেল এনগুয়েনের স্টাঙ্কসনেট প্রথম কম্পিউটার ভাইরাস যা আন্তর্জাতিকভাবে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। প্রথমে স্টাঙ্কসনেট ইরানের একটি একক নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টরকে টার্গেট করে। আর এর মধ্য দিয়েই শুরু হয় সাইবার ওয়ারের নতুন যুগ।
বাংলাদেশ সময় ১৩০৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০১৪