দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে ফিরছেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার তিনি শপথ নেবেন।
গত নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জেতেন ট্রাম্প। তার প্রচারণায় যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ সংকট সমাধানের পাশাপাশি ইউক্রেন ও গাজা-ইসরায়েল যুদ্ধ, আফগানিস্তানে তালেবান ইস্যুসহ গুরুত্বপূর্ণ নানান বৈশ্বিক বিষয়গুলোও গুরুত্ব পেতে দেখা যায়।
ট্রাম্পের আমেরিকা ফার্স্ট এজেন্ডা আন্তর্জাতিক সম্পর্কে নতুন রূপ দেয়ার পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইউক্রেন যুদ্ধ
ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ট্রাম্প আগেই বলেছেন, তিনি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ একদিনেই শেষ করতে পারবেন, তবে তিনি কীভাবে তা করবেন, সেই সম্পর্কে বিস্তারিত বলেননি।
তিনি ইউক্রেনকে বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা দেওয়ার সমালোচনা করেছেন। এতে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে, তিনি হয়তো ইউক্রেনকে আঞ্চলিক সমঝোতা করতে চাপ দিতে পারেন।
ট্রাম্পের মনোনীত বিশেষ দূত কিথ কেলগ ১০০ দিনের মধ্যে এ সংকট সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করছেন এবং ইউক্রেনকে শান্তি আলোচনায় অংশ নেওয়ার শর্তে সহায়তা দেওয়ার কথা বলেছেন।
ন্যাটো
আগে থেকেই ন্যাটোর সমালোচক ডোনাল্ড ট্রাম্প। জোটটি নিয়ে তিনি সমালোচনা অব্যাহত রেখেছেন। তিনি ইউরোপীয় সদস্য দেশগুলোর প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির পাঁচ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন।
তিনি ন্যাটো থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহারের কথা স্পষ্ট করেননি। তবে তিনি ইউরোপে মার্কিন সেনাদের সংখ্যা কমিয়ে ন্যাটোকে দুর্বল করে দিতে পারেন।
মধ্যপ্রাচ্য ইস্যু
মধ্যপ্রাচ্যে ট্রাম্প ইসরায়েলপন্থী অবস্থান ধরে রাখবেন। তিনি আব্রাহাম অ্যাকর্ডসের ভিত্তিতে সৌদি আরব এবং ইসরায়েলের মধ্যে চুক্তি করার চেষ্টা করতে পারেন।
ইতোমধ্যে কার্যকর হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি গত নভেম্বরের নির্বাচনে তার জয়ের ফল বলেই দাবি করেছেন। যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জও তার নেতৃত্বের পরীক্ষা নেবে।
ইরানের বিরুদ্ধে তার কঠোর অবস্থান অব্যাহত থাকতে পারে। তিনি ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা এবং সামরিক প্রতিরোধ জারি করতে পারেন।
চীন
চীনের প্রতি ট্রাম্পের কঠোর মনোভাব আরও তীব্র হতে পারে। তিনি নির্বাচনে জেতার পরই চীনা পণ্যের ওপর ৬০ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব দিয়েছেন।
তার প্রশাসন চীনকে একটি বড় হুমকি হিসেবে দেখে, বিশেষ করে তাইওয়ান ইস্যুতে।
ট্রাম্প সামরিক পদক্ষেপের বিরোধিতা করলেও তাইওয়ানের প্রতি চীনের যেকোনো আক্রমণাত্মক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক প্রতিশোধের হুমকি দিয়েছেন।
জলবায়ু পরিবর্তন
জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে ট্রাম্প আবার প্যারিস চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিতে পারেন এবং জীবাশ্ম জ্বালানির উৎপাদন বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিতে পারেন।
তিনি সবুজ শক্তির জন্য আর্থিক প্রণোদনা কমানো এবং তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তার এমন পদক্ষেপ বৈশ্বিক জলবায়ু প্রচেষ্টাকে ধীর করতে পারে।
অভিবাসন
ট্রাম্প লাখ লাখ অনথিভুক্ত বা অবৈধ অভিবাসীদের বিতাড়িত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের পরিকল্পনা করেছেন।
তার পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে বিতর্কিত ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করা এবং সীমান্ত নিরাপত্তা কঠোর করা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তার এসব পরিকল্পনা আইনি, লজিস্টিক ও আর্থিক দিক থেকে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।
গ্রিনল্যান্ড ও পানামা খাল
ট্রাম্প কৌশলগত এবং অর্থনৈতিক স্বার্থের কথা উল্লেখ করে গ্রিনল্যান্ড কেনা এবং পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ব্যাপারে তার বিতর্কিত ইচ্ছার কথা প্রকাশ করেছেন।
যদিও এসব পদক্ষেপগুলো সফল হওয়ার সম্ভাবনা কম, তবে এটি বিশ্বব্যাপী মার্কিন আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় ট্রাম্পের আকাঙ্ক্ষার বিষয়টি তুলে ধরে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০২৫
আরএইচ