ঢাকা, বুধবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০২ জিলকদ ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশি সন্দেহে গুজরাটে আটক বেশিরভাগই ভারতীয় মুসলিম

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯:২৫, এপ্রিল ২৯, ২০২৫
বাংলাদেশি সন্দেহে গুজরাটে আটক বেশিরভাগই ভারতীয় মুসলিম বাংলাদেশি সন্দেহে নিজ দেশের লোকজনকেই ধরছে ভারতীয় পুলিশ

গুজরাটের বিভিন্ন এলাকায় বাংলাদেশি সন্দেহে চলমান ধরপাকড় অভিযানে হাজার হাজার মানুষকে আটক করেছে রাজ্য পুলিশ। তবে এখন পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে যাদের ‘বাংলাদেশি’ হিসেবে শনাক্ত করা গেছে, তাদের সংখ্যা মাত্র ৪৫০।

আর আটক হওয়া বাকিদের মধ্যে অধিকাংশই ভারতীয় মুসলমান। গুজরাট পুলিশের মহাপরিচালক বিকাশ সহায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বিকাশ জানান, গত শনিবার ভোর রাত থেকে গতকাল সোমবার রাত পর্যন্ত রাজ্যজুড়ে চালানো অভিযানে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার মানুষকে আটক করা হয়েছে। তাদের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী, আটক ব্যক্তিদের মধ্যে মাত্র ৪৫০ জন ‘অবৈধ বাংলাদেশি’। তাদের পরিচয় নথির ভিত্তিতে নিশ্চিত করা গেছে, বাকিদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

আটকদের মধ্যে একজন কলকাতার পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার সুলতান মল্লিক। তিনি ভারতীয়। কিন্তু তাকে বাংলাদেশি সন্দেহে আটক করে সুরাত পুলিশ। সুলতান সুরাতে এমব্রয়ডারির কাজ করেন। এসব অভিযোগ করেছেন তার স্ত্রী সাহিনা বিবি। বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, পুলিশ গভীর রাতে বাড়ি থেকে সাহিনার স্বামী ও দুই ভাগ্নেকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর তিনি তার স্বজনদের পাসপোর্ট ও জমির দলিলসহ যাবতীয় নথি পুলিশের কাছে পাঠান। তারপরও সাহিনা তার স্বামীর খোঁজ পাচ্ছেন না।

সাহিনা বলেন, আমার স্বামীর জন্ম পশ্চিমবঙ্গে, এমন প্রমাণ থাকলেও এখন পর্যন্ত তাকে ছাড়া হয়নি। এমনকি আদালতেও হাজির করা হয়নি। বিবিসিকে সাহিনা একটি দলিল দেখিয়েছেন যেটি ১৯৯৩ সালের। এতে দেখা যাচ্ছে, সুলতান মল্লিক পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার লাভপুর অঞ্চলের বাসিন্দা।

আহমেদাবাদে এক বিয়েবাড়ি থেকে বরযাত্রীদের তুলে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ, এমন অভিযোগও উঠেছে। বিবিসি জানিয়েছে, তাদের সঙ্গে হাতে মেহেদি পরা ফারজানা নামে এক তরুণীর কথা হয়। বিয়ের অনুষ্ঠানে আসার পর তার বরপক্ষের লোকজনকে পুলিশ তুলে নিয়ে যায়। ফারজানার আত্মীয়রা মহারাষ্ট্রের আকোলা থেকে বিয়েতে এসেছিলেন। কিন্তু তাদের বাংলাদেশি সন্দেহে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। পরে নথি যাচাই করে রাত দশটার দিকে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

গুজরাটের আহমেদাবাদে ২৩ বছর ধরে বসবাসকারী আলমআরা পাঠানের ছেলে ও পুত্রবধূ আটক হন শ্বশুরবাড়ি থেকে। সম্পূর্ণ ভারতীয় নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও তাদের বাংলাদেশি সন্দেহে হেনস্তা হতে হয়েছে। আলমআরা বলেন, আমাদের আধার কার্ড, রেশন কার্ড, ভোটার পরিচয়পত্র, আয়কর বিভাগের প্যান কার্ড, বিদ্যুতের বিল- সবই আছে। এসব দেখিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা থানায় বসে থেকে ছেলে ও পুত্রবধূকে ছাড়িয়ে আনতে হয়েছে।

পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চ নামে সংগঠনের অভিযোগ, শুধু গুজরাট নয়, উত্তরপ্রদেশ, ওড়িশা, মহারাষ্ট্রসহ বিভিন্ন রাজ্যে বাংলাভাষী মুসলমান শ্রমিকদের বাংলাদেশি সন্দেহে হেনস্থা করা হচ্ছে। গত ১৮ এপ্রিল উত্তরপ্রদেশের কুশিনগরে মালদার ২৩ জন ফেরিওয়ালাকে মারধরের পর আটক করে পুলিশ। গত ২১ এপ্রিল ওড়িশার জসিপুরে রঘুনাথগঞ্জের ৬০ শ্রমিককে হেনস্থা করে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। একইভাবে ভদ্রকে এক ফেরিওয়ালাকে হেনস্থা করা হয় বলে জানায় সংগঠনটি।

সংগঠনটির পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, ২০১৪ সাল থেকে এ ধরনের ঘটনা বাড়ছেই। বিশেষ করে মুসলমান ও বাংলাভাষী হলেই বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি ভারতীয় নাগরিকদের অন্য রাজ্যে কাজ করার অধিকার খর্ব করছে বলেও অভিযোগ করেছে পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চ।

সংগঠনটির রাজ্য সম্পাদক আসিফ ফারুক বলেন, গুজরাটে অবৈধদের সংখ্যাটা বড়, তাই বিষয়টা ব্যাপক আলোচনায় উঠে এসেছে। উত্তরপ্রদেশ, ওড়িশা আর মহারাষ্ট্রেও পশ্চিমবঙ্গের বাংলাভাষী মুসলমানদের বাংলাদেশি তকমা দিয়ে হেনস্থা করার ঘটনা সম্প্রতি খুব বেড়েছে। আমরা গত সপ্তাহে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে একটা চিঠিও দিয়েছিলাম। কিন্তু তাতে কোনো কাজই হয়নি। যেমন, সুলতান মল্লিককে আটকের পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে তোলার কথা। কিন্তু তিনদিন হয়ে গেলেও সেটি করা হয়নি।

পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার সাঁকরাইলের বাসিন্দা নূর শেখও হেনস্তার শিকার হন। তিনি বিবিসিকে বলেছেন, বাংলাদেশিদের ধরবে ধরুক। কিন্তু আমরা তো ভারতীয়। দরকার হলে আমাদের সমস্ত নথি যাচাই করে দেখুক। কিন্তু ভারতের নাগরিকদের হেনস্তা করার কোনো মানে দেখি না।

গুজরাট পুলিশ জানিয়েছে, সীমান্তবর্তী রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা ও মেঘালয় থেকে তদন্ত দল পাঠানো হচ্ছে যাতে নথি যাচাই করে দেখা যায়—এসব আদৌ আসল নাকি ভুয়া। কেননা তারা সন্দেহ করছে, বাংলাদেশিরা ভারতে অবৈধভাবে এসে আধার কার্ড, ভোটার পরিচয়পত্রসহ নানা নথি বানিয়ে নিতে পারে। তাই বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া কয়েকটি রাজ্যে গুজরাট পুলিশ তাদের দল পাঠাচ্ছে। যেসব পরিচয়পত্র জমা দেওয়া হচ্ছে, সেগুলো আসল না কি নকল, সেটা সরেজমিনে তদন্ত করে দেখবে পুলিশ।

গুজরাট পুলিশের মহাপরিচালক বিকাশ সহায় মনে করেন, তাদের রাজ্যে একটা বড় সংখ্যায় বে-আইনি বাংলাদেশি রয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে তারা এটি নিশ্চিত করতে পারবেন। যে লক্ষ্যে তারা কাজও শুরু করেছেন।

এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।