ইউক্রেনে বন্দি রাশিয়ান সামরিক সদস্যদের ওপর নির্যাতন চালানোর এক অমানবিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ইউক্রেনীয় সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠা অপরাধের তদন্তকারী একটি আন্তর্জাতিক কমিশনের সভাপতি মাকসিম গ্রিগোরিয়েভ ওই তথ্য জানান।
বন্দি বিনিময় প্রক্রিয়ায় মুক্তি পাওয়া রাশিয়ান সৈন্যদের বিস্তারিত সাক্ষ্যের ভিত্তিতে তিনি ওই কথা বলেন। ৩০ জন ব্যক্তির বক্তব্য উদ্ধৃত করে শুক্রবার (৩০ জুন) তিনি একটি প্রতিবেদন পেশ করেন।
গ্রিগোরিয়েভ বলেন, অভিযোগ যে পরিমাণ ব্যাপক, তা থেকে অব্যাহত নির্যাতনের একটি ইচ্ছাকৃত পদ্ধতিগত চর্চা বোঝা গেছে, যা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। তিনি দাবি করেন, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের জন্য এমন আচরণ করা হয়নি। বরং প্রায়শই বিদ্বেষ থেকে রাশিয়ান বন্দিদের সঙ্গে সহিংসতার মতো অমানবিক আচরণ করা হত।
ছাড়া পাওয়া বন্দিরা ইউক্রেনের হেফাজতে থাকা অবস্থায় মারধর এবং বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের বর্ণনা দেন। প্রতিবেদনে ওয়াটারবোর্ডিংয়ের মতো অত্যাচার বৈদ্যুতিক শক দেয়া এবং বন্দিদের ওপর হিংস্র কুকুর লেলিয়ে দেয়াকে নির্যাতনের সাধারণ পদ্ধতি হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
কিছু সাক্ষ্যে যৌন সহিংসতার বিবরণও ছিল। একজন সৈনিক অভিযোগ করেন, তাকে আটককারীরা তার যৌনক্ষমতা নষ্ট করা এবং তার মলদ্বার দিয়ে কনস্ট্রাকশন ফোম ঢুকিয়ে দেওয়ার কথা ভাবছিল। অন্য একজন বলেন, বন্দিদের একে অপরের গায়ে প্রস্রাব করতে বাধ্য করা হয়।
বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করেন, সংশ্লিষ্ট ইউক্রেনীয়রা নির্যাতন চালিয়ে আনন্দ পেতেন বলে মনে হয়েছে। ভ্লাদিমির প্যালিটসিন নামে একজন সৈনিক বলেন, একজন ব্যক্তি তাকে ধাতব রড দিয়ে মারছিল আর হাসছিল। সে মজা পাচ্ছিল। ইউক্রেনীয় চিকিৎসা কর্মীরা নির্যাতনের পদ্ধতি হিসেবে চেতনানাশক ছাড়াই আঘাতের চিকিৎসা করে বলে জানা গেছে।
বর্বরতার ওইসব অভিযোগকে ল্যাটিন আমেরিকা এবং অন্যান্য স্থানে ‘পশ্চিমাদের চালানো’ স্বেচ্ছাচারিতার সঙ্গে তুলনা করেন গ্রিগোরিয়েভ। তিনি বলেন, ইউক্রেনের একটি ফ্যাসিলিটিতে একটি নির্যাতন কক্ষের ডাকনাম ছিল 'বাগদাদ'। এটি ইরাকে মার্কিন সামরিক উপস্থিতির সম্ভাব্য উল্লেখ। সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রপতি জর্জ ডব্লিউ বুশের প্রশাসন মধ্যপ্রাচ্যে 'সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ' চালানোর সময় যুদ্ধবন্দিদের তথাকথিত 'বর্ধিত জিজ্ঞাসাবাদের' অনুমোদন দিয়েছিল।
রাশিয়া এবং ইউক্রেন দুইদেরই মে মাসের শুরুতে একটি সমন্বিত বন্দি বিনিময় প্রক্রিয়ায় এক হাজার বন্দিকে মুক্তি দেয়। প্রতিবেদন উপস্থাপনের সময়, রাশিয়ান আইন প্রণেতা আন্দ্রে কার্তাপোলভ বিতর্কিত নব্য-নাৎসি আজভ ইউনিটের সদস্যদের ওই বিনিময় থেকে বাদ দেওয়ার বিষয়ে ইউক্রেনীয় সমালোচনার জবাবে বলেন: তারা শেষ পর্যন্ত অপরাধী।
কার্তাপোলভ আরও বলেন, তারা এই সত্যটি গোপন করছে না। এবং তাদের ক্ষমা করার কোনো ইচ্ছা আমাদের নেই।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা এক সংবাদ সম্মেলনে গ্রিগোরিয়েভের প্রতিবেদনকে ‘ন্যায়বিচারের পথে আরও একটি পদক্ষেপ’ হিসেবে বর্ণনা করেন।
এমএইচডি/এমএম