ভারতের কার্নাটাকের গোকর্ণের একটি গুহা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে রাশিয়ান এক নারী ও তার দুই কন্যা সন্তানকে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষের চোখে এটি বিপজ্জনক ও অনিয়মিত জীবনযাপন হলেও নিনা কুতিনা নামের ওই নারীর মতে এটি ছিল প্রশান্তি, শিক্ষা আর সুস্থতার ঠিকানা।
গোকর্ণ পুলিশ কুতিনা ও তার সন্তানদের উদ্ধার করে বেঙ্গালুরুর ফরেনার্স রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিসে (এফআরআরও) প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর তাদের পাঠানো হয় তুমাকুরু জেলার একটি রেসকিউ সেন্টারে। কিন্তু কুতিনা বলছেন, তাদের গুহাবাস সম্পর্কে ভারতের সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যা বলা হচ্ছে, তার বেশিরভাগই সত্যের বিকৃতি।
তিনি বলেন, আপনারা ইতোমধ্যে অনেক মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। আমাদের প্রকৃতিতে থাকার, জঙ্গলে থাকার বিশাল অভিজ্ঞতা আছে, এবং আমরা মরিনি। আমি আমার সন্তানদের মরতে জঙ্গলে নিয়ে যাইনি। তারা একেবারেই কষ্টে ছিল না, বরং খুব খুশি ছিল। তারা ঝরনায় সাঁতার কেটেছে, চমৎকার জায়গায় ঘুমিয়েছে, অনেক শিল্পকর্ম তৈরি করেছে। আমরা মাটি দিয়ে কাজ করেছি, ছবি এঁকেছি, ভালো খাবার খেয়েছি, আমি গ্যাসে রান্না করতাম, খুব ভালো আর সুস্বাদু খাবার।
অবহেলা বা বিপদের অভিযোগ সরাসরি নাকচ করে রাশিয়ান নারী নিনা কুতিনা বলেন, তার মেয়েরা সম্পূর্ণ সুস্থ ও সুখী ছিল। তিনি বলেন, তারা ভালো খাবার খেত, ভালোভাবে ঘুমাত, পোশাক পরা ছিল, নিয়মিত শিল্পচর্চা ও পড়াশোনা করত। আমরা কখনো না খেয়ে ছিলাম না। এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। গোকর্ণের যে গুহায় আমরা থাকতাম, সেটি ছিল গ্রামের কাছে, বড়, নিরাপদ এবং পর্যটকসমৃদ্ধ এলাকা। আমরা সহজেই খাবার কিনতে পারতাম, গুহা থেকে সমুদ্র দেখা যেত। সাপ দেখা গেলেও তা আশপাশের এলাকায়ও স্বাভাবিক ঘটনা।
হাসপাতালে নেওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি ছিল মেয়েদের প্রথম হাসপাতাল সফর। তারা পুরোপুরি সুস্থ, কোনো ব্যথা বা অসুস্থতা নেই।
ভিসা সংক্রান্ত বিষয়ে কুতিনা স্বীকার করেন, কাগজপত্রের মেয়াদ শেষ হয়েছে, তবে ২০১৭ সাল থেকে ভারতে থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেন। আমরা এর পরেও চারটি দেশে গিয়েছি। পুরনো পাসপোর্ট দেখে ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমার বড় ছেলের মৃত্যুর পর ভিসা নবায়নে সমস্যা হয়েছিল, তাই কিছুদিন বেশি থাকতে হয়েছিল।
রাশিয়ায় জন্মালেও গত ১৫ বছরে তিনি বিভিন্ন দেশে ঘুরেছেন যার মধ্যে রয়েছে কোস্টারিকা, মালয়েশিয়া, বালি, থাইল্যান্ড, নেপাল, ইউক্রেন।
আধ্যাত্মিকতার অভিযোগও প্রত্যাখ্যান করে বলেন, এটা ধর্মীয় নয়, আমরা শুধু প্রকৃতিকে ভালোবাসি। প্রকৃতির মাঝে থাকা মানেই স্বাস্থ্যকর জীবন। আমার টেলিগ্রাম চ্যানেলে আমাদের গুহাবাসের নানা ছবি ও ভিডিও রয়েছে সেখানে রান্না, শিক্ষা, শিল্পকর্ম সবই দেখা যাবে।
সূত্র: এনডিটিভি
এমএম