ঢাকা, সোমবার, ৯ ভাদ্র ১৪৩২, ২৫ আগস্ট ২০২৫, ০১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

গাজায় বাস্তুচ্যুতদের শিবিরে অনাহারে হাজারো ফিলিস্তিনি শিশু

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:৪১, আগস্ট ২৪, ২০২৫
গাজায় বাস্তুচ্যুতদের শিবিরে অনাহারে হাজারো ফিলিস্তিনি শিশু

গাজার দেইর-আল বালাহ অঞ্চলে বাস্তুচ্যুতদের শিবিরে একটি তাঁবুতে শুয়েছিল হুদা আবু নাজা। ১২ বছরের এই ফিলিস্তিনি শিশুর হাত-পা হাড়ের খাঁচায় পরিণত হয়েছে।

শরীরের হাড়গুলো চামড়া ভেদ করে বেরিয়ে আসছে, যা  তীব্র অপুষ্টিরই স্পষ্ট লক্ষণ।

হুদার মা সোমিয়া আবু নাজা আল জাজিরাকে বলেন, ইসরায়েল গাজার সীমান্ত বন্ধ করার পর থেকে মার্চ থেকেই আমার মেয়ে মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে। তিন মাস হাসপাতালে ছিল, কিন্তু কোনো উন্নতি হয়নি।  

তিনি জানান, দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে পাঁচ শিশুকে না খেয়ে মরতে দেখার পর তিনি মেয়েকে বাড়ি ফিরিয়ে আনেন। আগে তার মেয়ের ওজন ছিল ৩৫ কেজি (৭৭ পাউন্ড), এখন নেমে এসেছে ২০ কেজিতে (৪৪ পাউন্ড)।  

গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলছে, হুদা আবু নাজার মতো গাজার বহু শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে। ইসরায়েল খাদ্য ও ত্রাণ সামগ্রী প্রবেশ আটকে রাখায় পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ হচ্ছে।

শুক্রবার জাতিসংঘ সমর্থিত ক্ষুধা পর্যবেক্ষক সংস্থা প্রথমবারের মতো নিশ্চিত করেছে যে উত্তর গাজায় পাঁচ লাখের বেশি মানুষ দুর্ভিক্ষে ভুগছে।  মধ্যপ্রাচ্যে এই প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো দুর্ভিক্ষ ঘোষণা হলো।

ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) সতর্ক করে বলেছে, এ সংখ্যা দ্রুত বেড়ে ছয় লাখ ১৪ হাজারে পৌঁছাতে পারে এবং সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়তে পারে দেইর আল-বালাহ ও খান ইউনিসে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ইসরায়েলি অবরোধ শুরুর পর প্রায় দুই বছরে ২৮০ জনের বেশি মানুষ অনাহারে মারা গেছে, যাদের মধ্যে ১১০ জনেরও বেশি শিশু।

আইপিসি জানিয়েছে, শিশুদের ওপরই সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ছে। শুধু পাঁচ বছরের নিচে প্রায় এক লাখ ৩২ হাজার শিশু ২০২৬ সালের জুন নাগাদ মারাত্মক অপুষ্টিতে মৃত্যঝুঁকিতে পড়তে পারে।

খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালের প্রধান শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আহমাদ আল-ফাররা বলেন, সেখানে বর্তমানে ১২০ শিশু অপুষ্টিতে অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাধীন। কিন্তু শরণার্থী শিবিরগুলোতে আরও কয়েক হাজার শিশু পর্যাপ্ত চিকিৎসা ছাড়াই কষ্ট পাচ্ছে।

গাজা সিটির আল-শিফা হাসপাতালের পরিচালক মোহাম্মদ আবু সালমিয়া জানান, গাজাজুড়ে প্রায় তিন লাখ ২০ হাজার শিশু মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে। তিনি বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সব আহত রোগীও অপুষ্টিতে ভুগছে।  

যদিও তথ্য-প্রমাণ স্পষ্ট, ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইপিসির এই দুর্ভিক্ষ ঘোষণাকে প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, গাজায় কোনো দুর্ভিক্ষ নেই।

বিশ্বব্যাপী ক্ষোভের মুখে গত কয়েক সপ্তাহে ইসরায়েল সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এই সরবরাহ অপ্রতুল এবং পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য মোটেও যথেষ্ট নয়।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।