সিউল: দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে আর কোনো আগ্রাসী আচরণ করা হলে এর পাল্টা জবাব দেওয়া হবে। উত্তর কোরিয়ার গোলন্দাজ বাহিনী বিরোধপূর্ণ দ্বীপে পর পর কয়েক দফা গোলা ছোঁড়ার কয়েক ঘণ্টা পরই দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি মিয়াং-বাক বলেন, ‘যেহেতু উত্তর কোরিয়া এখনও আক্রমণাত্মক আচরণ করে যাচ্ছে, তাই আবারও এ ধরনের আচরণ করা হলে আমাদের সেনা, নৌ এবং বিমান বাহিনী এর সমুচিত জবাব দিবে বলে আমি মনে করি। ’
‘উত্তর কোরিয়ার আর কোনো ধরনের উসকানিমূলক আচরণের জবাব ভয়াবহভাবে দেওয়া হবে। ’
ঘটনাটি নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার ভূগর্ভস্থ যুদ্ধ কক্ষে সভা করার পর প্রেসিডেন্ট এ ঘোষণা দেন।
মঙ্গলবার উত্তর কোরিয়া ইয়োনপ ইয়ং দ্বীপে গোলা ছুঁড়লে অন্তত দু’জন নৌসেনা নিহত ও তিন বেসামরিক নাগরিকসহ ১৫ জন আহত হন। এর জবাবে পরে দক্ষিণ কোরিয়াও দেশটিকে লক্ষ্য করে গোলা ছোঁড়ে। এসময় ওই এলাকায় দক্ষিণ কোরিয়ার সেনাবাহিনী ও যুদ্ধ বিমান পাঠানো হয় এবং দেশ দুটির মধ্যে ঘণ্টাব্যাপী গোলাগুলি হয়।
১৯৫০-৫৩ পর্যন্ত সংঘটিত কোরীয় যুদ্ধের পর একে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত বিরোধ বলে অভিহিত করা হচ্ছে।
এদিকে এ দ্বীপে এরইমধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের ২৮ হাজার সেনা অবস্থান করছে। তবে উত্তর কোরিয়ার আক্রমণের জবাব দেওয়ার এখনই উপযুক্ত সময় নয় বলেও মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কর্ণেল ডেভিড ল্যাপম্যান জানান।
একইসঙ্গে অতিরিক্ত আরও সেনা মোতায়ন করা হবেনা বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমরা এখনও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি এবং উত্তেজনা কমানোর জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনা করছি। ’
এ বিষয়ে আলোচনার জন্য দক্ষিণ কোরিয়াকে আহ্বান জানানো হয়েছে বলে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড নেশসন কমান্ড (ইউএনসি) বুধবার জানায়।
একইসঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার সেনাদের দ্বীপটিতে বসবাসরত ১ হাজার ৬০০ বেসামরিক নাগরিকের নিরাপত্তার নিশ্চিত করার তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রশংসা করেন জেনারেল।
দুই দেশের পাল্টাপাল্টি এ আক্রমণ বিষয়ে দ্বীপটির এক বাসিন্দা বলেন, ‘এটা যুদ্ধের মত। আমার বাড়ি পুড়ে গেছে। ’
একইসঙ্গে উভয় দেশের গোলা বিনিময়ে দ্বীপটির ৭০ টিরও বেশি বাড়ি পুড়ে যায়।
এদিকে প্রথমে দক্ষিণ কোরিয়া গোলা ছোঁড়ে বলে দেশটির প্রতিবেশী উত্তর কোরিয়া অভিযোগ করে। তবে এতে কোনো ক্ষয়ক্ষতির কথা উল্লেখ করেনি দেশটি।
তবে উত্তর কোরিয়ার সমুদ্র সীমানার দশমিক এক মিলিমিটারের মধ্যে কোনো ধরনের আক্রমণ করা হলে এর জবাব দেওয়া হবে বলে উত্তর কোরিয়া পরে সতর্ক করে দেয়।
এদিকে দণি কোরিয়া পশ্চিম উপকূলে সেনা মহড়া পরিচালনা করছিলো এবং এর লক্ষ্য উত্তর কোরিয়া ছিলোনা বলে দেশটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। দণি কোরিয়ার এক সেনা কর্মকর্তা এ বিষয়ে বলেন, ‘এখানে প্রত্যাহিক সেনা প্রশিক্ষণ চলছিলো এবং আমরা উত্তর নয় বরং পশ্চিমকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ি। ’
ছয় দশক আগের যুদ্ধের পর ইয়োনেপইয়ং দ্বীপটি সীমান্তের দক্ষিণে অবস্থিত বলে জাতিসংঘ থেকে ঘোষণা করা হয়। কিন্তু পিয়ংইয়ং দ্বীপটি উত্তরের সমুদ্র সীমানায় অবস্থিত বলে বিবেচনা করে থাকে।
পীত সাগরের এ সীমান্ত নিয়ে ১৯৯৯, ২০০২ সালে এবং গত বছরের নভেম্বরে দেশ দুটির মধ্যে ভয়াবহ নৌ সংঘর্ষ হয়।
এমনকি এখনও কৌশলগতভাবে দুই কোরিয়ার মধ্যে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে।
এদিকে পিয়ংইয়ং এর টপের্ডোর আঘাতে সিউলের যুদ্ধ জাহাজ ডুবি এবং ৪৬ জন সেনা নিহতের আন্তর্জাতিক অভিযোগের পর এ উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়। তবে বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে পিয়ংইয়ং।
বাংলাদেশ স্থানীয় সময়: ১৩৪১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০১০