ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ধরণী ৩৫০

আহমেদ জুয়েল | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১০
ধরণী ৩৫০

৩৫০ একটি সাধারণ সংখ্যা। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানবজাতির জন্য এ সংখ্যাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

কারণ পৃথিবী নামের আমাদের এই গ্রহের অস্তিত্ব আর আমাদের টিকে থাকার জন্য বায়ুমণ্ডলে কার্বনের নিরাপদ মাত্রা ৩৫০ ইউনিট। কিন্তু শিল্পোন্নত দেশগুলো থেকে বাতাসে মাত্রাতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণের ফলে বর্তমানে এই মাত্রা ৩৮০ থেকে ৩৯০ ইউনিট। ফলে ক্রমাগত বাড়ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে সংকটের দিকে, প্রকৃতি হয়ে পড়ছে বিরূপ, দুর্যোগে বাড়ছে মানব মৃত্যুর হার। আন্তর্জাতিক সংস্থা অক্সফামের একটি প্রতিবেদনে বেরিয়ে এসেছে জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবজনিত দুর্যোগের কারণে চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসেই ২১ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যা ২০০৯ সালের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি।

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় আজ থেকে মেক্সিকোর কানকুনে শুরু হয়েছে জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক ফ্রেমওয়ার্ক সম্মেলন-২০১০ (এইএনএফসিসিসি)। সম্মেলন উপলক্ষে বিশ্ব নেতাদের পাশাপাশি পরিবেশবাদীরাও থেমে নেই। এই সম্মেলনকে সামনে রেখে আমেরিকান লেখক বিল ম্যাকিবেল ও আন্তর্জাতিক জলবায়ু প্রচারণা সংস্থা ‘আর্থ ৩৫০’ ২০ থেকে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী আয়োজন করেছিল প্রথম আন্তর্জাতিক জলবায়ু শিল্প প্রদর্শনী। বায়ুমণ্ডলে কার্বন নিঃসরণ কমাতে বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে তারা উন্নত বিশ্বের নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছেন এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে। প্রতীকী কার্যক্রমের মাধ্যমে বোঝাতে চেয়েছেন পৃথিবী নামের এই গ্রহের সংকটাপন্ন অবস্থা, জলবায়ুর প্রভাবে কীভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়ছে আর তাতে মানুষের দুর্গতি কতটা চরমে পৌঁছেছে।

আর্থ ৩৫০ নামের এই প্রদর্শনীর সবগুলো শিল্পকর্মই ছিল বিশাল আকারের। যা মহাশূণ্য থেকে দেখা গেছে। স্কুলের ছাত্রছাত্রী, পরিবেশবাদী, ডিজাইনার আর শিল্পীরা অংশ নেন এসব শিল্পকর্ম তৈরিতে।

চীন, মিসর, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, স্পেনসহ পৃথিবীর বেশ কয়েকটি দেশে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। শিল্পকর্মগুলোর ছিল নির্দিষ্ট শিরোণাম এবং বিষয়।

গুবরে পোকা : আর্থ ৩৫০ প্রজেক্টের অংশ হিসেবে মিসরের দুই শ’রও বেশি পরিবেশবাদী ও ছাত্ররা মিলে কায়েরোর বাইরে মরুভূমির মধ্যে তৈরি করে তাদের ঐতিহ্যবাহী পুনর্জন্মের প্রতীক গুবরে পোকা এবং মিসরের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা সূর্য। এর মাধ্যমে তারা এই আধুনিক যুগেও সমৃদ্ধ শক্তির উৎস সূর্যের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের কথাই জানান দেয়।

হঠাৎ বন্যা : নিউ মেক্সিকোর সান্তা ফেতে এক হাজারেরও বেশি গার্লস স্কাউট এবং স্থানীয় জনতা ও পরিবেশবাদীরা সান্তা ফে নদীর শুকনো বুকে সারিবদ্ধভাবে নীল রঙের পোস্টার বহন করে। তারা পোস্টার নিয়ে এমনভাবে হেঁটে যায় যেন নদীর বুকে বানের পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এর মাধ্যমে তারা বোঝাতে চেয়েছেন সান্তা ফে নদীর আগের রূপ কেমন ছিল। সান্তা ফে উত্তর আমেরিকার বিপন্ন ১০টি নদীর মধ্যে একটি।

বালিকার মুখ : স্পেনের ডেলটা ডেল এবরোতে ফুটিয়ে তোলা হয় এক বালিকার মুখমণ্ডল। স্পেনের বিখ্যাত শিল্পী জর্জ রডরিগজ এই শিল্পকর্ম তৈরি করেন। যে দেখতে চায় জলবায়ুর বিরুপ প্রভাব মোকাবেলা করে ডেলটা টিকে আছে।

ঈগল : লস অ্যাঞ্জেলেসে ফুটিয়ে তোলা হয় বিশাল আকৃতির একটি ঈগল সেলার প্যানেল ফিল্ডের ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে বোঝানো হয়, সূর্য থেকে শক্তি নিয়ে শিল্পকারখানা চালালে কার্বন নিঃসরণ কমবে, প্রকৃতি আর জীব বৈচিত্র বাঁচবে। আমরাও বাঁচব। রক্ষা পাবে আমাদের ধরণী।

হ্যারিকেন : জলবায়ুর বিরুপ প্রভাবে পৃথিবীতে ঝড়, সুনামি, জলোচ্ছ্বাস বেড়েছে। এটা বোঝাতে মেক্সিকোতে কয়েক হাজার শিশুর অংশ গ্রহণে তৈরি করা হয় প্রবল হ্যারিকেনের দৃশ্য।

ঘরের মধ্যে হাতি : ‘এলিফ্যান্ট ইন দ্য রুম’ শিরোণামে মুম্বাইয়ে স্কুল ছাত্রীদের নিয়ে তৈরি করা হয় বিশাল এক হাতি। জলবায়ুর বিরুপ প্রভাবে প্রকৃতির কঠোর আচরণ সহ্য করতে না পেরে হাতিও ঘরে ঠাঁই নিচ্ছে। এই শিল্পকর্মের মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমরা কতটা সংকটাপন্ন অবস্থায় আছি।

লাল পোলার বিয়ার : আইসল্যান্ডে আঁকা হয় বিশাল আকারের এক পোলার বিয়ার। শিল্পী জার্গেই ওলাফসদতির বরফের ওপর পরিবেশবান্ধব লাল রং দিয়ে ভল্লুকের ওই চিত্রটি আঁকেন। এর মাধ্যমে    বোঝানো হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাবে আইসল্যান্ডের বরফ গলছে, বিপন্ন হয়ে পড়ছে ভল্লুক প্রজাতি।
 
৩৫০ ঠাণ্ডা ছাদ : নিউ ইয়র্ক শহরে শিল্পী মলি ডিলওর্থ নিউ টাইমস স্কয়ার প্লাজার ছাদে পেইন্টিংয়ের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন সমুদ্রের উচ্চতা ৭ মিটার বাড়লে নিউইয়র্ক এবং নিউ জার্সির সৈকতের অবস্থা কী হবে। আর ৩৫০ ঠা-া ছাদ (৩৫০ কুল রুফ) লিখে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন কার্বনের মাত্রা সহনীয় পর্যায়ে থাকলে সূর্যের প্রখর তাপ থেকে আমরা রক্ষা পাব।    

৩৫০ : অস্ট্রেলিয়ায় আলোর ফোকাসের মাধ্যমে ৩৫০ সংখ্যাটি প্রদর্শন করা হয়। যা বায়ুমণ্ডলে কার্বনের সহনীয় মাত্রার কথা মনে করিয়ে দেয়। এর মাধ্যমে বিশ্বে দাবানলের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাকেও প্রতীকিভাবে তুলে ধরা হয়।

এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাব মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ন সিদ্ধান্ত নিতে বিশ্ব নেতাদের প্রভাবিত করতে বিশ্বের আরও কয়েকটি দেশে এভাবে বিশাল আকারের প্রতীকী শিল্পকর্মের প্রদর্শন করা হয়।

নভেম্বরের ২৯ তারিখ থেকে শুরু জলবায়ু সম্মেলনে কার্বন নিঃসরণ কমানো ও দুর্যোগ মোকাবিলায় একটি সমন্বিত, নায্য ও আইনি চুক্তিতে পৌঁছানোর ল্েয বিশ্বের ১৯৪টি দেশের প্রতিনিধিরা যোগ দিচ্ছেন। অংশ নিচ্ছেন বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি প্রতিনিধিরাও। ১০ দিনের এ সম্মেলনের সংক্ষিপ্ত নাম দেওয়া হয়েছে কোপ-১৬।


বাংলাদেশ সময় : ১৮১৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।