ঢাকা: জীবনের একমাত্র সম্বল দেড় বছরের শিশু সন্তানের জন্য বাঁচতে চেয়েছিলেন সাভারের রানা প্লাজার শ্রমিক শাহানা পারভীন। কিন্তু উদ্ধারকর্মীদের শত চেষ্টা আর নিজের অসীম সাহসী মনোবলও তার শিশু সন্তানটির মুখে হাসি ফেরাতে পারলো না।
এই শাহানাকে জীবিত উদ্ধার করতে ১১ ঘণ্টার মতো অক্লান্ত পরিশ্রম করেন সেনা, ফায়ার সার্ভিসের সদস্য ও সাধারণ উদ্ধারকর্মীরা। কিন্তু গত সোমবার বিকেল ৩টা ২৫ মিনিটে ধ্বংসস্তুপের চতুর্থ তলা থেকে উদ্ধার করা হয় শাহানার নিথর মৃতদেহ।
শাহানার এই মর্মান্তিক বিদায় বাংলাদেশের মানুষের মতো ব্যথিত করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলোকেও।
প্রখ্যাত মার্কিন সংবাদ মাধ্যম ‘সিএনএন’ মঙ্গলবার শাহানাকে নিয়ে ‘শি ওয়ান্টেড টু লাইভ ফর হার সন’ শিরোনামে একটি আবেগময় প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়,
ধ্বংসস্তুপ থেকে কয়েকশ’ মরদেহের সঙ্গে প্রায় ২৪শ’ জীবিত মানুষকে উদ্ধার করেছেন উদ্ধারকর্মীরা। তবে উদ্ধারকর্মীদের মতোই সবার কাছে বেদনাদায়ক ঘটনা ছিল এই নারীর (শাহানার) মৃত্যু।
ধসের চারদিন পরও তিনি জীবিত আছেন বলে রোববার নিশ্চিত হন উদ্ধারকর্মীরা। অন্যান্যদের মতো শাহানাকে উদ্ধারেও যথেষ্ট আশাবাদী ছিলেন তারা।
তার অবস্থান জানার পর সংবাদ মাধ্যমগুলো উদ্ধারকর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। অনেক ঝুঁকিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও একটি সুড়ঙ্গ খুঁড়ে তার কাছাকাছি পৌঁছান উদ্ধারকর্মীরা। একশ’ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে আটকে থেকেও উদ্ধারকর্মীদের দেখে তিনি বলেছিলেন ‘অন্তত শিশু সন্তানটিকে দেখার জন্য বাঁচতে চান তিনি’।
উদ্ধারকর্মীরা তাকে আশ্বাস দেন এবং খাবার, পানীয় ও অক্সিজেন সরবরাহ করেন। যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে কনক্রিট কেটে তাকে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করেন তারা।
শাহানাকে উদ্ধার করতে ১০ ঘণ্টার প্রচেষ্টা শেষে দমকলবাহিনীর উদ্ধারকর্মী নুরুল হক রোববার রাতেই সুড়ঙ্গ থেকে বের হয়ে জানান, এক ঘণ্টার মধ্যেই তাকে উদ্ধার করা যাবে।
কিন্তু এর মধ্যেই আরেকটি চরম অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে যায়। নুরুল হক ও তার সঙ্গে থাকা অন্যান্য উদ্ধারকর্মীরা যখন ভেতরে ঢোকেন, তখন তারা দেখেন সেখানে ড্রিল মেশিনের অগ্নিস্ফূলিঙ্গ থেকে হঠাৎ আগুন ছড়িয়ে পড়েছে।
মুহূর্তে আগুন ভেতরে থাকা কাপড় ও দাহ্য পদার্থে ধরে গেলে ভেতরের চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর ফায়ার সার্ভিসের লোকজন সুড়ঙ্গ পথে পানি ঢাললেও আগুন নেভেনি।
একসময় সর্বনাশা আগুন শান্ত হয়। তৎক্ষণাৎ ভেতরে যান উদ্ধারকর্মীরা। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। পরপারে চলে গেছেন অসীম মনোবলের অধিকারী শাহানা।
সোমবার সকালে তার মৃতদেহ বের করে আনেন উদ্ধারকর্মীরা। অগ্নিকাণ্ডে নাকি অন্য কোনো কারণে তিনি মারা গেছেন সে কথা অবশ্য এখনও অপরিষ্কার। তবে তার মৃত্যু উদ্ধারকর্মীদের, বিশেষ করে যারা তাকে বাঁচাতে প্রাণপন চেষ্টা করেছিলেন তাদের অনেক কাঁদিয়েছে। সেই উদ্ধারকর্মীদের কান্নায় যেন পুরো সাভারও কেঁদে ওঠে।
একশ’ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে মৃত্যুকূপে বন্দি থাকা শাহানাকে ‘খুব সাহসী’ বলে বর্ণনা করেন উদ্ধারকর্মী দেলওয়ার মিয়া।
দেলওয়ার মিয়া বলেন, “তিনি (শাহানা) যখন আমাদের সঙ্গে কথা বলছিলেন তখন বারবার শুধু তার সন্তানের কথা বলছিলেন, তিনি বলছিলেন অন্তত শিশু সন্তানের জন্য বাঁচতে চান। ”
বাংলাদেশ সময়: ২০৪১ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০১৩
সম্পাদনা: হুসাইন আজাদ, নিউজরুম এডিটর