ঢাকা: সাভার ট্র্যাজেডির পর থেকে দ্বিধা-বিভক্ত অবস্থান নিয়েছে পশ্চিমা পোশাক ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো। ধসে পড়া রানা প্লাজার পাঁচটি কারখানার সঙ্গে কোনো লেনদেন ছিল না –ক্ষতিপূরণ এড়াতে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান এমন লুকোচুরি খেললেও কিছু প্রতিষ্ঠান পাঁচটি পোশাক কারখানার যে কোনোটির সঙ্গে লেনদেন ছিল স্বীকার করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে।
পশ্চিমা ক্রেতাদের এমন দ্বিধা-বিভক্ত অবস্থান নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে প্রখ্যাত মার্কিন সংবাদ মাধ্যম ‘নিউইয়র্ক টাইমস’।
বুধবার প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, কিছু আমেরিকান ও ইউরোপীয় পোশাক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান রানা প্লাজায় থাকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক না থাকার দাবি করলেও কিছু কোম্পানি তাৎক্ষণিক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে এবং এ দুর্ঘটনায় হতাহত, ক্ষতিগ্রস্ত ও তাদের পরিবারকে সহায়তা দেওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে।
ওয়ালমার্ট, গ্যাপ, এইচএন্ডএম ও ক্যারফোর’র মতো কোম্পানিগুলোসহ দুই ডজন পোশাক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি সোমবার জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট’র বাইরে ‘বাংলাদেশের কারখানা নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যাপারে কী করা যেতে পারে’-এ বিষয়ে আলোচনা করতে বৈঠকে বসেন। গত সপ্তাহের বুধবার সাভারের রানা প্লাজা ধসে পড়ার পর জার্মান সরকারের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকের পর দু’জন শ্রম আইনজীবী সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, বাংলাদেশের প্রায় চার হাজারেরও বেশি কারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কতটি পশ্চিমা প্রতিষ্ঠান আর্থিক সহায়তা দিতে সম্মত হবেন সেটা এখনও অপরিষ্কার।
নিউজার্সির সেক্যকাসভিত্তিক পোশাক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ‘চিলড্রেন’স প্যালেস’ এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, “আগে রানা প্লাজার ভেতরে একটি কারখানায় আমাদের পোশাক উৎপাদন হয়ে থাকলেও এই ভয়ংকর দুর্ঘটনার সময় সেখানে আমাদের জন্য কোনো পোশাক উৎপাদন হচ্ছিল না। ”
অথচ কাস্টমস সার্ভিসের তথ্য-প্রমাণ বলছে, গত আট মাসে প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার পাউন্ডেরও বেশি পরিমাণ পোশাক ২১টি জাহাজে করে চিলড্রেন’স প্যালেসে পাঠানো হয়েছে। তাছাড়া, গত ৫ এপ্রিলেই দুই টন পোশাক ওজনের একটি জাজাজ চিলড্রেন’স প্যালেসের জন্য জর্জিয়ার সাভানায় পৌঁছে।
রানা প্লাজার নিও ওয়েব বটমসের পক্ষ থেকে ৯০ হাজার পাউন্ডের পোশাক ‘ক্যাটো কর্পোরেশন’র জন্য সরবরাহ করা হলেও চিলড্রিন’স প্যালেসের মতো এখানকার কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পোশাক লেনদেনের কথা অস্বীকার করেছে ক্যাটো কর্তৃপক্ষও।
রানা প্লাজার কারখানাগুলোতে পোশাক সরবরাহের অর্ডারপত্র পাওয়া গেলেও এখানকার কোনো কারখানার সঙ্গে সম্পর্ক থাকার কথা অস্বীকার করেছে আরেকটি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ‘বেনেটন’। তবে তথ্য-প্রমাণ প্রকাশ পেয়ে গেলে বেনেটন দাবি করে, “মাত্র একবারই অর্ডার দেওয়া হয়েছিল!”
পশ্চিমা কোম্পানিগুলোর এমন গা-বাঁচানোর লুকোচুরি খেলার নিন্দা জানিয়েছেন আমস্টারডামভিত্তিক অধিকার সংগঠন ‘ক্লিন ক্লথ ক্যামপেইন’র (সিসিসি) আন্তর্জাতিক সমন্বয়ক ইনেকে জিলদেনরাস্ট। তিনি বলেন, “বেনেটনসহ পশ্চিমা কোম্পানিগুলোর এ ধরনের কাণ্ডজ্ঞানহীন খেলা বন্ধ করার এখনই সময়। পোশাক ক্রয় করলেও দুর্ঘটনা ঘটলে তারা সবসময়ই নিজেদের বাঁচিয়ে চলে। ”
তবে আশার কথা হলো, দুর্ঘটনার পর যুক্তরাজ্যের ক্রেতা প্রতিষ্ঠান প্রাইমার্ক রানা প্লাজার অষ্টম তলায় তাদের পোশাক সরবরাহকারী একটি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ছিল স্বীকার করে ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। এছাড়া, মা-বাবা হারানো শিশুদের জন্য দীর্ঘ মেয়াদি তহবিল, আহতদের জন্য অর্থ তহবিল ও নিহতদের পরিবারকে অর্থ প্রদানেরও অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে প্রাইমার্ক। এ দুর্ঘটনার পর নিজেদের দায়িত্বের ব্যাপারে পূর্ণ সচেতন রয়েছে বলেও জানায় প্রাইমার্ক।
এছাড়া, সাভারের দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণ তহবিলে অর্থ দেওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে কানাডাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘ল্যাব্লাও’ ও স্প্যানিশ প্রতিষ্ঠান ‘এল কোর্তে ইঞ্জলস’ও।
অন্য দিকে, রানা প্লাজার কারখানাগুলো থেকে পোশাক আমদানি করা পশ্চিমা কোম্পানিগুলোকে ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের (২৩৪ কোটি টাকারও বেশি) ক্ষতিপূরণ তহবিল গঠন করার আহবান জানিয়েছেন সিসিসির সমন্বয়ক জিলদেনরাস্ট। ইতোমধ্যে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যপারে কিছু প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগেরও প্রশংসা জানান তিনি।
বাংলাদেশের কারখানাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতে করণীয় নির্ধারণ করতে জার্মান এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন’র আয়োজনে সোমবার ফ্রাঙ্কফুর্টের বৈঠকটিতেও যোগ দেন জিলদেনরাস্ট। এ বৈঠকে এখন পর্যন্ত কোনো সমাধান বের করা না গেলেও জিলদেনরাস্ট আশা প্রকাশ করে বলেন, “আগামী ১৫ মে’র মধ্যেই এ ব্যাপারে সদ্যুত্তর পারবো আমরা। ”
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৬ ঘণ্টা, মে ০১, ২০১৩
সম্পাদনা : হুসাইন আজাদ, নিউজরুম এডিটর/জেডএম