ঢাকা: মালয়েশিয়ার সাধারণ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন জোট ন্যাশনাল ফ্রন্ট (এনএফ) জয় পেয়েছে। আর এর মাধ্যমে দেশটির ৫৬ বছরের ঐতিহ্যই ধরে রাখল দেশটির জনগণ।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের ন্যাশনাল ফ্রন্ট ২২২ আসন বিশিষ্ট পার্লামেন্টের ১৩৩ আসনে জয় পেয়েছে। তার প্রতিদ্বন্দ্বী আনোয়ার ইব্রাহিমের নেতৃত্বাধীন ত্রিদলীয় জোট পেয়েছে ৮৯ টি আসন। গত নির্বাচনের তুলনায় ৭টি আসন বেশি পেয়েছি বিরোধী দল। জয়ে পেলেও অতীতের চেয়ে আসন কম পেয়েছে নাজিবের নেতৃত্বাধীন জোট।
নির্বাচনে ব্যাপক জালিয়াতির অভিযোগ হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বিরোধী নেতা আনোয়ার ইব্রাহিম।
রোববার স্থানীয় সময় সকাল ৮টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে শেষ হয় বিকেল ৫টায় (বাংলাদেশ সময় ৩টা)। দেশব্যাপী ৮ হাজার ভোট গ্রহণ কেন্দ্রে সুশৃঙ্খলভাবে ভোটাররা সারিবদ্ধ হয়ে ভোট দেন। কয়েক ঘণ্টা পর নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনে ৮০ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছে।
৫৯ বছর বয়সী নাজিব তার জোটের জয়কে স্বাগত জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি স্বীকার করেন, দেশকে এগিয়ে নিতে কাজ করবে। তিনি বলেন, “কমসূচির মধ্যে জাতীয় সমঝোতার উদ্যোগ নেব আমরা। ..আমি মনে করি যে একটি দল হিসেবে আমাদের অনেক কিছু করতে হবে। ”
চীনা নৃগোষ্ঠীর ভোটরার বিরোধী দলকে ভোট দিয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। এ বিষয়টিকে ‘চীনা সুনামি’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন তিনি। মালয়ীদের অনুকূলে সরকারের গৃহীত নীতিগুলো সরকারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিরোধী দল।
নাজিব বলেন, “ফলাফলে মেরুকরণের প্রবণতা দেখা গেছে যা সরকারকে উদ্বিগ্ন করেছে। যদি এটির সমাধান করা না যায়, তাহলে এটি দেশে উত্তেজনা বা বিভেদ সৃষ্টি করবে। ”
অসমর্থিত কিছু তথ্য বলছে, জোট সরকার সংখ্যাগরিষ্ট ভোট পেতে ব্যর্থ হয়েছে। নিরপেক্ষ অনলাইন গণমাধ্যমগুলোর জরিপে দেখা গেছে, ন্যাশনাল ফ্রন্ট পেয়েছে ৪৯ শতাংশ ভোট। নাজিবই প্রথম নেতা যিনি কম ভোট পেয়ে জয় পেলেন।
বিরোধী নেতা আনোয়ার ইব্রাহিম নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি আর জালিয়াতির অভিযোগ তুলেছেন। সোমবার মধ্যরাতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তিনি। তিনি বলেন, “এ নির্বাচনকে আমরা প্রতারণামূলক হিসেবে বিবেচনা করছি এবং ইলেক্টরাল কমিশন ব্যর্থ হয়েছে। ”
তিনি বলেন, “অনিয়মের কারণে আমরা অনেক আসন হারিয়েছে, বিশেষ করে কম ব্যবধানে। ”
নির্বাচনের আগেই অনিয়মের আশঙ্কা করেছিলেন আনোয়ার ইব্রাহিম।
গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যগুলোতে ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আনার জন্য সরকার বিমান সরবরাহ করেছে বলে দাবি বিরোধীদের। তবে সরকার এ অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে।
জরিপ প্রতিষ্ঠান মেরদেকা সেন্টার অসমর্থিত প্রতিবেদেনর ভিত্তিতে জানিয়েছে, বিদেশি নাগরিকের জাতীয় পরিচয়পত্র করে দিয়ে ভোট দিতে দেওয়া হয়েছে।
কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমের কার্যালয়ে হামলার খবর পাওয়া গেছে। মালেয়শিয়ার সনাতনী গণমাধ্যমগুলোর অধিকাংশই ক্ষমতাসীন সরকারপন্থি।
নির্বাচনের ফলকে বিরোধীদের জন্য প্রচণ্ড আঘাত হিসেবে উল্লেখ করেছেন আন্তর্জাতিক একটি সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধি। কেননা মালয়েশিয়ার তরুণরা দেশে পরিবর্তনের পক্ষে ছিল।
ওই সংবাদদাতা জানান, ক্ষমতাসীন সরকারকে সরানোর জন্য নিজের পক্ষে ব্যাপক জনসমর্থন বিশেষ করে শহর এলাকায় রয়েছে বলে বিশ্বাস ছিল বিরোধীদের।
ফলাফল প্রকাশের পর সরকার সমর্থকরা উল্লাস করতে থাকে। তবে বিরোধীদের হাজার হাজার সমর্থক তাদের ফেসবুক প্রোফাইল কালো বাকশের ছবি আপলোড করে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৬ ঘণ্টা, মে ০৬, ২০১৩
সম্পাদনা: শরিফুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর, eic@bangalnews24.com