আবারও রাজনৈতিক শিষ্টাচার ও সৌজন্যের ব্যতিক্রমী নজির রাখলেন ভারতের শাসক দল কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিজেপির প্রভাবশালী নেত্রী সুষমা স্বরাজ লোকসভায় সোনিয়া ও তার দলের ওপর একহাত নিয়েছিলেন।
নয়াদিল্লি থেকে এনডিটিভি জানায়, কাল মঙ্গলবার কংগ্রেস নেত্রী তার কড়া সমালোচক সুষমাকে দেখালেন এই বিরল সৌজন্য। ততক্ষণে লোকসভা অধিবেশন মুলতবী হয়ে গেছে।
এ মুহুর্তে সোনিয়া চাইছেন বিজেপির সাথে শাসক দল কংগ্রেসের যে বিরোধ ও সাপে-নেউল-সম্পর্ক চলছে তাতে জল ঢালতে। এর পেছনে বড় উদ্দেশ্য, কয়েকটি, বিশেষত দুটো, গুরুত্বপূর্ণ বিলে বিজেপির সমর্থন পাওয়া নিশ্চিত করা। এক্ষেত্রে সুষমা স্বরাজ হয়ে উঠতে পারেন বড় নিয়ামক। যদিও সুষমা স্বরাজ তার ভাষনে কড়া ভাষায় বলছিলেন, ‘ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর এতো দুর্নীতিবাজ সরকার আর কখনো আসেনি। অতএব কংগ্রেসকে সমর্থন নয়। ’
কাল মঙ্গলবার লোকসভার অধিবেশন মুলতবী ঘোষণা করার পর সুষমা স্বরাজ লোকসভায় বিজেপির সংসদীয় প্রধান এল কে আদবানি ও অন্য সাংসদদের নিয়ে হেঁটে সেন্ট্রাল হলের দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময়ই কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী নিজের আসন ছেড়ে তড়িঘড়ি ছুটে গেলেন সুষমার দিকে। বন্ধুর মতো হাত রাখলেন সুষমার কাঁধে।
সোনিয়া কিছুটা পথ এগিয়েও দিলেন তাদের।
যেসব এমপি ওই সুন্দর মুহূর্তটিতে উপস্থিত ছিলেন তাদের ভাষ্য, দুই নেত্রী পরস্পরের সাথে আন্তরিকভাবে কথা বলেছেন।
সোনিয়া এমন এক সময়ে সুষমার সাথে সৌজন্যের এই নজির স্থাপন করলেন যখন বিভিন্ন ইস্যুতে কংগ্রেসের সাথে প্রধান বিরোধী দলের বৈরিতা ও অসন্তোষ তুঙ্গে উঠেছে। এর ফলে লোকসভার কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে বিঘ্ন ও অচলাবস্থা।
মিসেস গান্ধীর নেতৃত্বাধীন শাসক দল কংগ্রেস চাইছে আগামী ১০ মে বাজেট অধিবেশন শেষ হবার আগেই প্রধান বিরোধী দল বিজেপির সমর্থন নিয়ে দুটো বিল পাস করিয়ে নিতে। বিল দুটো হলো খাদ্য নিরাপত্তা বিল ও জমি অধিগ্রহণ বিল। বিজেপি নীতিগতভাবে বিল দুটোর সমর্থক হলেও তারা চায় বিল দুটোতে প্রযোজনীয় সংশোধন আনা হোক। নইলে তারা এতে সমর্থন দেবে না।
এর আগে সুষমা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি তার দলের লোকসভা বর্জনের কারণ তুলে ধরবেন এবং এরপর তারা লোকসভা ছেড়ে একযোগে বেরিয়ে যাবেন। তাদের এই বর্জনের উদ্দেশ্য হচ্ছে ফিন্যান্স বিল পাশের পথ প্রশস্ত করা।
সুষমা যখন লোকসভায় তার ভাষণে ক্ষমতাসীনদের ওপর বিষোদগার করছিলেন তখন কংগ্রেসি মন্ত্রীরা বারবার তার কথায় বাধা দিচ্ছিলেন। আর সেজন্য তার সব ক্ষোভ তিনি ঝাড়ছিলেন মিসেস গান্ধীর ওপর। ‘‘তিন মিনিটে ৬০বার আমার বক্তৃতায় বাদ সাধেন তারা’’—বলছিলেন সুষমা।
আর সেজন্যই আগুনে জল ঢেলে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে কাছে টানলেন সোনিয়া। তাতে যদি ফল মেলে তাতে জয় তো সোনিয়ারই। যদিও উপমহাদেশের বর্তমান বৈরি রাজনৈতিক আবহাওয়ায় সোনিয়ার মতো সৌজন্যবোধের নজির বড় একটা দেখা যায় না।
বাংলাদেশ সময়: ০৪১৩ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০১৩