ঢাকা, রবিবার, ২৯ ভাদ্র ১৪৩২, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

জালালাবাদ নির্বাচন নিয়ে আদালতে যাচ্ছে বর্তমান কমিটি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪:৩৩, মে ৮, ২০১৩

নিউইয়র্ক: যুক্তরাষ্ট্রে জালালাবাদ নির্বাচন নিয়ে জটিলতা বাড়ছেই। এবারের নির্বাচন থেকে তিন বছর মেয়াদের কমিটি গঠন হবে এমন সিদ্ধান্তের পর সমিতির সদস্যদের তো বটেই নিউইয়র্ক তথা যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী অনেকের মধ্যেই নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ রয়েছে।

এদিকে জুনে জালালাবাদ সমিতির নির্বাচন হবে এই ঘোষণা হলেও এখনো কোনো তারিখ ঘোষণা হয়নি। অন্যদিকে দুটি প্যানেল এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে এমনটা চূড়ান্ত হলেও ওই দুটি প্যানেলের কোনোটিই এখনো পূর্ণাঙ্গ প্যানেল চূড়ান্ত করতে পারেনি। তবে একটি প্যানেলের শীর্ষ একজন নেতা বলেছেন, তাদের কাছে নাম রয়েছে ভেতরে ভেতরে কাজ অনেকদূর এগিয়ে গেছে কিন্তু চূড়ান্ত ঘোষণা তারা আরও পরে দেবেন।

এদিকে জালালাবাদ সমিতির নির্বাচন ইস্যু কোর্ট কাচারি টেনে আনা হয়েছে। নিউইয়র্ক সুপ্রিম কোর্টের ব্রঙ্কস কাউন্টিতে ২০১২ সালের নভেম্বরে করা একটি মামলার প্রসঙ্গ সামনে এনে একে অপরের ওপর দোষ, পাল্টা দোষ চাপানোর প্রক্রিয়া চলছে। পুরোনো ইস্যু হলেও বিষয়টি গোটা নির্বাচন পক্রিয়ায় প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জালালাবাদ সমিতির একাধিক সদস্য বাংলানিউজকে বলেছেন, বিষয়টি যেহেতু ভোটার লিস্ট ও সদস্যপদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সেহেতু এর সুরাহা না হলে নির্বাচনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া অসম্ভব হবে।

দ্বন্দ্বের প্রক্রিয়াটি শুরু হয় এক বছর আগে। বর্তমান কমিটির আগের কমিটির নেতাদের বিরুদ্ধে সংগঠনের তিন জন নেতার বিরুদ্ধে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিলেও হিসাব বুঝিয়ে না দেওয়ার অভিযোগ আনে বর্তমান কমিটি। কেবল তাই নয় ওই অভিযোগের জের ধরে পূর্ববর্তী কমিটির সভাপতি বদুরুন নাহার খান মিতা, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাসিব মামুন ও কোষাধ্যক্ষ আশরাফুল হকের সদস্যপদও বাতিল করে দেয় বর্তমান কমিটি। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ২০১২ সালের ১৬ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট অব দ্য স্টেট অব নিউইয়র্ক ব্রঙ্কস কাউন্টিতে মামলা দায়ের করেন। ২০১৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আদালতের রায় বাদীর পক্ষে যায়। আদালত আশরাফুল হকের সদস্যপদ স্থগিত করার সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে। কিন্তু এই সিদ্ধান্তের পরও আশরাফুল হকের সদস্যপদ ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি।

বিষয়টি নিয়ে শুক্রবার সমিতির কার্যকরী কমিটির একটি সভায় সিদ্ধান্ত হয়, সংগঠনের বৃহত্তর স্বার্থে এবং সংগঠনকে ভবিষ্যতে আরও মামলার হাত থেকে রক্ষা করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর সাথে আলোচনা করে আগামী সপ্তাহে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এমন পরিস্থিতিতে রোববার জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকা ইন্ক পক্ষ থেকে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে তাদের অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়ে সংগঠনের সাবেক সভাপতি বদরুন নাহার খান মিতা, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাসিব মামুন ও কোষাধ্যক্ষ আশরাফুল হক ২০০৯-২০১১ সালের আয়-ব্যয়ের হিসাব বর্তমান কার্যকরী পরিষদের কাছে প্রদান করেন নি। সংগঠনের হিসাব নিকাশ পরবর্তী পরিষদের নিকট হস্তান্তর করা তাদের নৈতিক এবং আইনানুগ দায়িত্ব। এ ব্যাপারে কারো কোন দ্বিমত থাকার কথা নয়। অগত্যা গত ২৯ এপ্রিল ২০১২ তারিখে কার্যকরী পরিষদের সভায় হিসাব প্রদান না করা পর্যন্ত তাদের আজীবন সদস্যপদ স্থগিত করা হয়।

সংগঠনের পাওনা ৫,০০০ (পাঁচ হাজার) ডলার পরিশোধ না করায় বিগত ১৯৯৯-২০০১ সালের কার্যকরী পরিষদের সিদ্ধান্তের সূত্র ধরে সাবেক নির্বাচন কমিশনার আওতাদ চৌধুরীর সাধারণ সদস্যপদ স্থগিত করা হয়। গত ৩০শে ডিসেম্বর সংগঠনের সাধারণ সভায় এ ব্যাপারে ব্যাপক আলোচনা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বর্তমান কার্যকরী পরিষদ মেয়াদ শেষ হওয়ার দুই মাস আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেয় এবং জালালাবাদবাসী গত ২৪ মার্চ বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে সংগঠনের সদস্য হিসাবে নিজেদের নাম নিবন্ধন করেন।

সাবেক কোষাধ্যক্ষ আশরাফুল হক অত্যন্ত গোপনীয়ভাবে কার্যকরী পরিষদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ২০১২ সালে একটি মামলা দায়ের করেন। বর্তমান কার্যকরী পরিষদ এ ব্যাপারে মোটেও অবগত ছিল না। গত ২১শে ফেব্রুয়ারি ব্রঙ্কস্ সুপ্রিম কোর্টে আমাদের অজান্তেই মামলাটির রায় ঘোষিত হয়েছে। সাবেক কোষাধ্যক্ষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে সমস্ত বিষয়টি গোপন রাখেন। ২৪শে মার্চ সদস্য তালিকাভূক্তির পূর্বেই রায়টি ঘোষিত হলেও এ ব্যাপারে কাউকে কিছুই জানাননি। বর্তমানে সমগ্র জালালাবাদবাসী যখন আসন্ন নির্বাচনী কার্যক্রম নিয়ে ব্যস্ত ঠিক তখনই নির্বাচন বানচাল করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রচার করেছেন এবং গণমাধ্যমের মাধ্যমেই আমরা বিষয়টি অবগত হই।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, গত শুক্রবার ৩রা এপ্রিল কার্যকরী পরিষদের এক জরুরি সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সংগঠনের বৃহত্তর স্বার্থে এবং সংগঠনকে ভবিষ্যতে আরও মামলার হাত থেকে রক্ষা করে একটি সুষ্ঠ নির্বাচনের স্বার্থে একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর সাথে আলোচনা করে আগামী সপ্তাহে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সমিতির বর্তমান নেতারা আরও জানান, বৃহত্তর এই সংগঠনটির আসন্ন নির্বাচন যথা সময়ে সম্পন্ন করতে আমরা বদ্ধ পরিকর। কিন্তু বিষয়টি যেহেতু আদালতে গড়িয়েছে, তাই সংগঠনের স্বার্থেই একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর সাথে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া সমিচিন মনে করছি। এ ব্যাপারে আমরা সকল জালালাবাদ বাসীর সহযোগিতা কামনা করছি।

অনেকটা একই ধরনের মনোভাব পোষণ করছেন জালালাবাদ সমিতির নতুন কমিটি নির্বাচনের শামস-লোবান পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী তানউইর শামীম লোবান। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে একথা বলা যাবে না। তবে পুরোনো সমস্যা দ্রুত সমাধান করে ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা জরুরি।

বর্তমান কমিটি আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে --এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আদালতে গড়ালে বিষয়টি দীর্ঘসূত্রতার দিকেই যাবে। আমি মনে করি নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।

লোবান বলেন, গঠনতন্ত্র অনুয়ায়ী ২০১৩ সালের জুন মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করা প্রয়োজন। সে লক্ষ্যে সব পক্ষ সঠিকভাবে এগিয়ে যাবে এটাই প্রত্যাশা।

বাংলাদেশ সময় ০৩৩০ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০১৩
সম্পাদনা: জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।