ঢাকা: উত্তর কোরিয়ার ওপর ক্রমবর্ধমান কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা ও বাণিজ্যের ওপর কড়াকড়ি আরোপের কারণে দেশটির অবৈধ পরমাণু বোমা তৈরিতে খুব দ্রুত এগিয়ে যেতে পারেনি বলে দাবি করেছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের একটি গোপন প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে বিষয়টি।
জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পর্যবেক্ষণ দলের শেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে চীনকে রাজি করানোর কথা বলা হয়েছে, যেন দেশটি তার প্রতিবেশি উত্তর কোরিয়ার পরমাণু কর্মসূচি ব্যাহত করতে অর্থনৈতিক ও অন্য নিষেধাজ্ঞার প্রয়োগ ঘটায়।
৫২ পাতার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিষেধাজ্ঞা আরোপে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি বন্ধ করতে না পারলেও উল্লেখ্যযোগ্যভাবে বিলম্ব করে দিয়েছে। আর দেশটির অস্ত্র বাণিজ্যের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও নিষিদ্ধের কারণে ওই নিষিদ্ধ কর্মসূচির তহবিলেও ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের উত্তর কোরিয়া নিষেধাজ্ঞা কমিটি উত্তর কোরিয়ার তিনটি প্রতিষ্ঠান ও ১২ ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুপারিশ করেছে। এ সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হবে কিনা তা নির্ভর করবে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তের ওপর।
সরকারি যে তিন প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে সেগুলো হলো পরমাণু শক্তি শিল্প মন্ত্রণালয়, সেন্ট্রাল কোরিয়ান ওয়ার্কাস পার্টির (কেডব্লিউপি) গোলাবারুদ শিল্প বিভাগ ও মহাকাশ উন্নয়ন ব্যুরো। আর ১২ ব্যক্তির মধ্যে ৫ জন উত্তর কোরীয়, একজন উজবেকিস্তানি, দুইজন ইউক্রেনীয় রয়েছেন। কোরীয় ব্যক্তিদের মধ্যে পরমাণু বিদ্যুৎ শিল্পমন্ত্রী ও কেডব্লিউপির গোলাবারুদ শিল্প বিভাগের চার কর্মকর্তার নাম রয়েছে। বিদেশি ওই তিন ব্যক্তি উত্তর কোরিয়ার অস্ত্র সংক্রান্ত চুক্তির সঙ্গে জড়িত।
ফেব্রুয়ারিতে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা ও রকেট উৎক্ষেপণকে নিরাপত্তা পরিষদের নিষেধাজ্ঞার লঙ্ঘন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে। পিয়ংইয়ং ২০০৬ সালে প্রথমবারের মতো পরমাণু পরীক্ষা চালায়।
পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচির জন্য পিয়ংইয়ংরে ওপ জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা কাজ দিচ্ছে বলে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পর্যবেক্ষণ কমিটি উল্লেখ করেছে।
নিষেধাজ্ঞার সম্ভাব্য লঙ্ঘন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১২ সালের মে মাসে সিরিয়াগামী ক্ষেপণাস্ত্র সংশ্লিষ্ট অস্ত্র। অবশ্য এসব জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত একটি দেশ জব্দ করে। এর আগে ২০১০ সালে নভেম্বরে সিরিয়ায় অস্ত্র সংশ্লিষ্ট বস্তু পাঠিয়ে এবং ২০০৮ সালে ইরানকে রকেটের বারুদ দিয়ে নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে উত্তর কোরিয়া।
প্রতিবেদনে বলা হয়, “ডিপিআরকে পরমাণু কর্মসূচি ও অস্ত্রসংশ্লিষ্ট দ্রব্য আমদানি-রফতানির প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। ”
জাতিসংঘের কূটনীতিকরা জানিয়েছেন, পিয়ংইয়ংয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রভাবকে শিথিল করার ক্ষেত্রে উত্তর কোরিয়ার প্রধান মিত্র ও বাণিজ্য অংশীদার চীন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তবে এ ব্যাপারে খোলাখুলিভাবে প্রতিবেদনে কিছু বলা হয়নি।
গত মার্চে জাতিসংঘ যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তা পুর্ণভাবে বাস্তবায়ন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে চীন। সম্প্রতি উত্তর কোরিয়ার প্রধান ফরেন এক্সচেঞ্জ শাখা বন্ধ করে দিয়েছে ব্যাংক অব চায়না লিমিটেড।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৭ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০১৩
সম্পাদনা: শরিফুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর, eic@banglanews24.com