ভারত সাগরের বিশাল ব্যবসা হুমকির মুখে পড়েছে সোমালিয়ার জলদস্যুদের অব্যাহত জাহাজ, ব্যবসায় পণ্য, নাবিক, পর্যটক ছিনতাই ও অপহরণ তৎপরতায়।
২০০৮ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনী এসব জলদস্যুদের মোকাবিলায় ‘অপারেশন আটলান্টা’ শুরু করে, তা এখনো চলছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ডেপুটি অপারেশন কমান্ডার টমাস আর্নস্ট বলেন, ‘সোমালিয়ার জলদস্যুদের তৎপরতা প্রসার ও প্রভাব উভয় দিক থেকেই পুষ্ট হয়েছে। দস্যুরা তাদের সামর্থ্য বাড়িয়েছে। বিশাল এলাকাজুড়ে তাদের প্রভাব রয়েছে। ’
সাম্প্রদিক দিনগুলোতে জলদস্যুরা তানজানিয়া ও মাদাগাস্কারেও হামলা চালিয়েছে। সেখানে আরও বড় জাহাজ ছিনতাই করে। কাউকে অপহরণ করে বিশাল অঙ্কের মুক্তিপণ আদায় করে।
রোববার বাংলাদেশের পতাকা বহনকারী জাহাজ ‘এমভি জাহান মনি’ সিঙ্গাপুর হয়ে ইন্দোনেশিয়ায় যাবার পথে ভারতের কোচিন বন্দর ও লাাদ্বীপের মাঝামাঝি আরব সাগরে এসে জলদস্যুদের কবলে পড়ে।
গত মাসে এক ব্রিটিশ দম্পতিকে বিশাল অংকের মুক্তিপণের বিনিময়ে ছেড়ে দেয়। এর আগে তাদের এক বছর আটকে রাখে।
বলা হয়ে থাকে, সোমালিয়ার অববাহিকা ও অ্যাডেন উপসাগরে বিদেশি সামরিক বাহিনীর উপস্থিতি জলদস্যুদের আরও বেপরোয়া করে তোলে।
ন্যাটো ও সমুদ্রোপকূলীয় বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনী চলতি বছর জলদস্যুদের ১২০টি হামলা ঠেকিয়েছে। ২০০৯ সালে ঠেকায় ২১টি।
হামলা প্রতিরোধ করার ব্যাপারটা নির্ভর করছে দস্যুদের অস্ত্রশস্ত্র করায়ত্ত করা ও আর্থিক উন্নতির ওপর। বিদেশি জাহাজ অপহরণ করতে তারা এগুলো কাজে লাগায়। আর্নস্ট বলেন, ‘যাই হোক, জলদুস্য-বিরোধী অভিযানে নৌবাহিনী কি পরিমাণ প্রতিরোধের মুখোমুখি হচ্ছে তা তর্কসাপেক্ষ। কিন্তু জলদস্যুরা তাদের অভিযান থেকে অতিরিক্ত পারিতোষিক (অর্থ, অস্ত্র ইত্যাদি) পাওয়ার ফলে ঝুঁকিটা আরও বাড়ছে। ’
তিনি বলেন, ইউরোপীয় বাহিনীর হাতে চলতি বছর ৪০০ জন জলদস্যু আটক হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১৫ জনের বিচার হয়েছে। জলদস্যুদের নেতৃত্ব পর্যায়কে লক্ষ্য করে আরও চেষ্টা চালাতে হবে এবং অর্থের উৎস বন্ধ করতে হবে। একইসঙ্গে সোমালিয়ার সরকারের জেলখানার উন্নয়নে সহায়তা করা হচ্ছে বলে তিনি জানান। সম্প্রতি জলদস্যুরা ৪৭৬ জন নাবিক জিম্মি নিয়েছে।
সোমালিয়ার ইতিহাসে দেখা যায়, দেশটি ইতালি ও ইংল্যান্ডের উপনিবেশ ছিল। ইউরোপের এ দুটি দেশের দখল করা দুটি ভূখ- ব্রিটিশ সোমালিল্যান্ড ও ইতালিয়ান সোমালিল্যান্ড নামে পরিচিত ছিল। ১৯৬০-এর ২৬ জুন ব্রিটিশ সোমালিল্যান্ড স্বাধীন হয়। এর পাঁচদিন পর মুক্ত ইতালিয়ান সোমালিল্যান্ড। দুটি ভূখ-ই একত্রিত হয়ে সোমালি রিপাবলিক হিসেবে পরিচিতি পায়।
বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোর অন্যতম সোমালিয়া। নানা কারণে বিশ্বব্যাপী দুর্নাম রয়েছে দেশটির। এগুলোর মধ্যে বড় এক দুর্নামের কারণ হলো উপকূলে জলদস্যুদের ভয়াবহ অপহরণ, ছিনতাই তৎপরতা।
বিগত ১৯৯১ সালে গণ-আন্দোলনে সোমালিয়ার প্রেসিডেন্ট মোহামদ সায়েদ বারে পতন হয়। সামরিক বাহিনীর প্রধান বারে ১৯৬৯-এ দেশটির ক্ষমতা কুক্ষীগত করে। ক্ষমতায় থাকার বিভিন্ন পর্যায়ে কখনো মার্কিন মিত্র, কখনো সোভিয়েত মিত্র হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেয়। এরমধ্যে সমাজতন্ত্রেরও হাঁকডাক দেয়। তবে তা স্থায়ী হয়নি।
সমালোচকদের কেউ কেউ জানাচ্ছেন, সোমালিয়ার জলসীমায় বিদেশি জাহাজ থেকে বিষাক্ত বর্জ্য নিক্ষেপ বা ফেলার প্রতিক্রিয়া জলদস্যু উদ্ভবের কারণ হতে পারে। আবার অবৈধভাবে মাছ ধরাও এর কারণ।
তারা আরও বলছেন, ‘মার্কিনপন্থী প্রেসিডেন্ট সায়েদ বারের পতনের কিছু আগেই দেশের দুই-তৃতীয়াংশ ভূখ- বিভিন্ন তেল কোম্পানির কাছে ছেড়ে দেওয়া হয়। এর মধ্যে কনোকো, অ্যামোকো, শেভরন ও ফিলিপস রয়েছে। কনোকো এমনকি তার মোগাদিসুর কর্পোরেট কমপাউন্ড মার্কিন দূতাবাসকে ব্যবহার করতে দেয়। জর্জ বুশের একজন বিশেষ দূত এটাকে তার সাময়িক সদরদপ্তর হিসেবে ব্যবহার করতেন। ’ অনেকে মনে করেন, মার্কিন সরকার আবারও সেই তেল সুবিধা ফিরে পেতে চায়।
বিশ্বের প্রায় ৯০ শতাংশ খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ করা হয় সমুদ্র পথে। আর এভাবে সমুদ্রে জলদস্যুদের উত্তাপ বেড়ে যাওয়ায় এসব খাদ্য পরিবহনের খরচের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কিছুটা বাড়তি খরচও। নিরাপদে জাহাজ পাঠাতে প্রয়োজন হয়ে পড়েছে নৌ-বাহিনীর সর্বাণিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। রয়টার্স ও উইকিপিডিয়া অবলম্বনে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০১০