ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ব্রিটেনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি বৃদ্ধির বিল পাস॥ পার্লামেন্ট ভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

সৈয়দ আনাস পাশা, লন্ডন করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১০
ব্রিটেনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি বৃদ্ধির বিল পাস॥ পার্লামেন্ট ভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

পার্লামেন্ট স্কোয়ার, লন্ডন: ব্রিটিশ রাজনীতির স্মরণকালের সবচেয়ে সমালোচিত বিশ্ববিদ্যালয় ফি বৃদ্ধির বিল শেষ পর্যন্ত পার্লামেন্টে পাস হয়েছে।

আর এ নিয়ে বৃহস্পতিবার এক মাসের মধ্যে চতুর্থবারের মতো সহিংস বিক্ষোভে জড়িয়ে পড়ে ব্রিটেনের ছাত্রছাত্রীরা।

এই ইস্যুটি নিয়ে পার্লামেন্টে ভোটগ্রহণকালীন সময়ে পুরো পার্লামেন্ট ভবন ছিল সহিংস ছাত্র বিক্ষোভের কবলে।

বৃহস্পতিবার হাউস অব কমন্সে বিলটি নিয়ে বিতর্কের পর স্পিকার ভোটে দিলে ৩২৩ ভোটে তা পাস হয়। বিলটির বিপে পড়েছে ৩০২ ভোট। বিরোধী দল লেবার পার্টির এমপিদের মতো জোট সরকারের শরিক লিবারেল ডেমোক্রেট পার্টির ২১জন এমপিও তাদের নিজ দল সম্পৃক্ত জোট সরকারের প্রস্তাবিত এই বিলের বিরুদ্ধে ভোট প্রয়োগ করেন, ৬ জন ভোট দানে বিরত থাকেন। বিলের বিরুদ্ধে ভোট দেন জোট সরকারের প্রধান শরিক কনজারভেটিভ পার্টির লি স্কটসহ ৬ জন এমপি। টোরি পার্টির ২ জন এমপি ভোট দানে বিরতও থাকেন। ইউনিভার্সিটি ফি বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে সরকারের সিনিয়র মন্ত্রীদের ৩ জন সহকারি (মিনিস্টারিয়েল এইডস) মাইক কোকার, জেনি উইলট ও স্নকার বল পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।

বিরোধী দলীয় নেতা এড মিলিব্যান্ড টিউশন ফি বৃদ্ধির বিল পাসের এই দিনটিকে ব্রিটিশ জনগণের জন্যে বিপর্যয়কর দিন বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, লিবডেম নেতা নিক কেগ ও বিলের পক্ষে ভোটদানকারী লিবডেম এর এমপিরা স্বচ্ছতা  ও জনগণের জন্যে সুযোগ সৃষ্টির বিগত কয়েক বছরের দেওয়া তাদের পার্টির স্লোগান ভঙ্গ করলেন। গ্রিন পার্টি দিনটিকে ‘কালো দিন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।

বাঙালি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটস এর বেথনালগ্রীন বো আসনের লেবার দলীয় বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত এমপি রোশনারা আলী তাঁর এলাকার ব্রিটিশ-বাংলাদেশিসহ অন্যান্য কমিউনিটির নিম্ন আয়ের পরিবারের সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি বৃদ্ধির ওপর আলোচনা কালে তিনি এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন। পার্লামেন্টের বক্তব্যে তিনি সরকারের প্রতি প্রশ্ন রাখেন, তাঁর এলাকার ব্রিটিশ-বাঙালিসহ অন্যান্য নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর সন্তানদের উচ্চশিা ব্যয় নির্বাহে এই পরিবারগুলো এখন কার আশ্রয় নেবে? তিনি বলেন, ধনী-গরীব নির্বিশেষে শিা লাভের অধিকার সবারই আছে, রাষ্ট্র সকলের জন্যে এই সুযোগ নিশ্চিত করতে অঙ্গিকারবদ্ধ। ফি বৃদ্ধির এ সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রীয় এই অঙ্গীকারকেই প্রশ্নবিদ্ধ করবে।

এদিকে, ফি বৃদ্ধির এই বিল পাসকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রীয় লন্ডনের পার্লামেন্ট স্কয়ার বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল। ৩০ হাজারেরও বেশি ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, অভিভাবক ও ইউনিয়ন কর্মী সহিংস বিক্ষোভে অংশ নেয় হাউস অব কমন্সের সামনে। বিক্ষোভকারীদের হাত থেকে পার্লামেন্ট ভবন রায় পুলিশ ব্যারিকেড সৃষ্টি করলে সেটা ভাঙতে উদ্যত হয় বিক্ষোভকারীরা। এ নিয়ে তারা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এসময় বিক্ষোভকারীরা পুলিশের প্রতি ইট পাটকেল ছুড়তে থাকে এবং পুলিশ ছাত্রদের বেদম প্রহার করতে থাকে। শত শত দাঙ্গা পুলিশের প্রতিরোধের মধ্যেই বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্ট ভবনের পাশে অবস্থিত ট্রেজারি বিল্ডিং ও সুপ্রিম কোর্ট ভবনের দরজা জানালায় ভাঙচুর করে। এতে দুটো ভবনই ব্যাপক তিগ্রস্থ হয়। এসময় তারা হাউস অব কমন্সের বাইরে বসার জন্যে রাখা কাঠের বেঞ্চে  আগুন ধরিয়ে দেয়।

সর্বশেষ খবর অনুযায়ী দাঙ্গা পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে মোট ২২ জন বিক্ষোভকারী ও ১০ জন পুলিশ আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এদের কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ অ্যাম্বুলেন্স বিভাগ। পুলিশ জানিয়েছে, অবৈধভাবে দাঙ্গা হাঙ্গামায় জড়িত হওয়ায় এ পর্যন্ত মোট ১৫ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের অভিযোগ ছাত্রদের সংঘর্ষে লিপ্ত হতে বিক্ষোভকারীদের পক্ষ থেকে উস্কানি দেওয়া হলে তারা পুলিশের ওপর স্নোকার বল ও ইটের সুরকি দিয়ে ঢিল ছুঁড়তে থাকে। এতে মারাত্মকভাবে আহত হন কয়েকজন পুলিশ। অন্যদিকে, ছাত্রদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে পুলিশ বিনা উস্কানিতে ছাত্রদের ওপর হামলা চালায় এবং তাদের হাতের লাঠি দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করে কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে।

উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান বার্ষিক ফি ৩,২৯০ পাউন্ড। এ অংক বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ৯ হাজার পাউন্ড করার পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করার পর থেকেই ব্রিটেনের সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভে ধানা বাঁধে। গণমাধ্যমে এর বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় চলাকালিনই পার্লামেন্টে এই বিল পাস হয়। বিক্ষুব্ধ ছাত্রছাত্রীরাসহ সবার আক্রমণের মূল ল্য ছিল সরকারের অংশীদার লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি। কারণ লিবডেমের নির্বাচনী মেনোফেস্টোতে ইউনিভার্সিটি ফি বৃদ্ধির বিরুদ্ধে দলটির অবস্থান ছিল কঠোর। সমালোচকদের অভিযোগ মতার স্বাদের আশায় লিবডেম টিউশন ফি বৃদ্ধির বর্তমান পরিকল্পনায় সম্পৃক্ত হয়ে ব্রিটিশ জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। আর তাই এ ইস্যুতে সমালোচনার তীরের তীব্রতা লিবডেম নেতা নিক কেগের প্রতিই ছিল বেশি।

মধ্য নভেম্বরে ইউনিভার্সিটি ফি বৃদ্ধির বিরুদ্ধে ব্যাপক সহিংস ছাত্র বিক্ষোভের প্রতিক্রিয়ায় এই বিলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে শুরু করেন লিবডেমের অনেক এমপি। বৃহস্পতিবার পার্লামেন্টে এমপিদের ভোটাভোটিতে ২১ জন লিবডেম এমপির সরকারি প্রস্তাবের বিরুদ্ধাচরণের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি বৃদ্ধির ইস্যুতে লিবডেমের অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ প্রকাশ্য হয়ে পড়ে।
 
২০১২ সাল থেকে ইউনিভার্সিটি টিউশন ফি বৃদ্ধির এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা রয়েছে। উল্লেখ্য, এক সময় ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটিতে ফ্রি পড়াশোনার সুযোগ ছিল। ১৯৯৮ সালে লেবার পার্টির সরকার সর্বপ্রথম ইউনিভার্সিটি ছাত্রদের জন্যে ফি ধার্য্য করে, যা বর্তমানে ৩,২৯০ পাউন্ড করে বছরে দিয়ে যাচ্ছে ছাত্রছাত্রীরা। বর্তমান সরকার বলছে, ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাঋণ পাওয়ার যে সুযোগ ছিল তা অব্যাহত থাকবে। কিন্তু পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বর্তমান পদ্ধতিতে একজন ছাত্র বা ছাত্রী যখন ইউনিভার্সিটি থেকে শিক্ষা শেষে বের হবে, তখন তাঁর মাথায় থাকবে ৩০ থেকে ৩৮ হাজার পাউন্ডের ঋণের বোঝা।

বাংলাদেশ সময়: ১০২১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।