উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ব্রাজিলের সাংবাদিক নাতালিয়া ভিয়ানা। অনলাইন সংবাদমাধ্যম কাউন্টারকারেন্টস.ওআরজি বৃহস্পতিবার তার সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করে।
অ্যাসাঞ্জ লন্ডনের পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। সুইডেনে তার বিরুদ্ধে দুই নারীর ওপর যৌন হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। বলা হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ পরিষ্কার না। কারণ তিনি ঘটনার সময় স্টকহোমে একটি বক্তৃতায় ছিলেন। গত ১৮ নভেম্বর সুইডিশ সরকার তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে লন্ডনের পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে সাতদিনের রিমান্ডে নেয়।
নাতালিয়া ভিয়ানা: আপনার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ কী?
জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ: আমার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ। সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ হচ্ছে, আমি ও আমার সহকর্মীরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি চালিয়েছি। এটা মিথ্যা। সুইডেনে তথাকথিত ধর্ষণ অভিযোগও রয়েছে আমার বিরুদ্ধে। এটাও মিথ্যা। সত্য বেরিয়ে আসলে সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। সুনাম নষ্ট করার লক্ষ্যে এটা ব্যবহার করা হয়েছে।
ভিয়ানা: গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগের ব্যাপারে কি আইনী মামলা হয়েছে?
অ্যাসাঞ্জ: এফবিআই, সিআইএ ও মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেলের আনুষ্ঠানিক তদন্ত চলছে। অস্ট্রেলিয়াও সরকারি তদন্ত করতে যাচ্ছে এবং এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে সহযোগিতা করছে। উইকিলিকসের সংবাদ পাওয়ার সূত্র ব্র্যাডলি ম্যানিং ভার্জিনিয়ার একটি কারাগারে নিঃসঙ্গ জীবন কাটাচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে ৫২ বছরের কারাদ- দেওয়া হয়েছে।
ভিয়ানা: উইকিলিকস যে কাজ করেছে সেটা আর গুপ্তবৃত্তির মধ্যে পার্থক্য কী?
অ্যাসাঞ্জ: উইকিলিকস বিভিন্ন ব্যক্তি (যারা নিজেদের সংগঠনে বেআইনী কাজের বিরোধিতা করে), সাংবাদিকদের কাছ থেকে খবরাখবর পায় এবং সেটা প্রকাশ করে দেয়। গুপ্তচরবৃত্তি বলতে বোঝায় সক্রিয়ভাবে খবরাখবর বা তথ্য সংগ্রহ করে বিদেশি শক্তির হাতে তুলে দেওয়া।
ভিয়ানা: সুইডেনের মামলায় ওই নারীর অভিযোগ কী?
অ্যাসাঞ্জ: তারা প্রথমে বলেছে যে, আমি তাদের সম্মতিতেই যৌন সম্পর্ক করেছি। প্রধান কৌঁসুলি ইভা ফিনা এটা শোনার পর ১২ ঘণ্টার মধ্যেই মামলাটি বাতিল করে দেন। পরে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতায় এটি পুনরুজ্জীবিত করা হয়। পুরো বিষয়টা বেশ বিরক্তিকর। তারা আমার সুইস ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়, যা উইকিলিকসের নিরাপত্তা তহবিল।
ভিয়ানা: কিসের ভিত্তিতে?
অ্যাসাঞ্জ: তাদের দাবি, আমি তাদের বিপদে ফেলে দিয়েছি। কিন্তু এটা বলার মতো কোনো প্রমাণ নেই। আর যে কোনোভাবেই এটা মিথ্যা।
ভিয়ানা: পেপ্যালে অর্থ স্থানান্তর জব্দ ও অ্যামাজন আপনাদের ওয়েবসাইট বন্ধ করে দিয়েছে। আপনি এগুলো কিভাবে দেখছেন?
অ্যাসাঞ্জ: আমেরিকার দুর্নীগিগ্রস্ত এলিটদের লম্বা লম্বা শুঁড় দেখতে বেশ মজাই লাগবে। কিছু ক্ষেত্রে, আমরা যেসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ করেছি, এর মতো প্রতিক্রিয়াও গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক কারণেই পেপ্যাল ও অ্যামাজন আমাদের অ্যাকাউন্ট ও ওয়েবসাইট বন্ধ করে দিয়েছে। পেপ্যালে ৭০ হাজার ইউরো জব্দ করা হয়েছে। আমাদের ৩১ হাজার ইউরো প্রতিরক্ষা তহবিল রয়েছে।
ভিয়ানা: তাদের অভিযোগ কী?
অ্যাসাঞ্জ: তাদের মতে, আমরা বেআইনী কাজ করছি আর যা স্পষ্টভাবেই মিথ্যা। এছাড়া, তারা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি কিনটনের মতো যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বিব্রতকর নথি ফাঁস করেছি এমন অভিযোগও করছে। যাই হোক, যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাসংক্রান্ত কমিটির প্রধান অ্যামাজন কর্তৃপক্ষকে ডেকে খুব দম্ভভরে আমাদের সাইট বন্ধ করার নির্দেশ দেন।
ভিয়ানা: অর্থসাহায্য দেওয়ার অ্যাকাউন্ট (পেপ্যাল) জব্দ করার পর উইকিলিকস নিজেকে রক্ষায় এখন কি করবে?
অ্যাসাঞ্জ: আমাদের সম্পদ জব্দ করার ফলে আমরা এ সপ্তাহে এক লাখ ইউরো হারিয়েছি। আইসল্যান্ডে বা জার্মানিতে অন্য ব্যাংকে আমাদের অ্যাকাউন্ট রয়েছে, এগুলো সাধারণ মানুষও এই ব্যাংকে লেনদেন করে। আমাদের একটি ওয়েবসাইট আছে। আমরা ক্রেডিট কার্ডে অর্থসহায়তাও গ্রহণ করি।
ভিয়ানা: এছাড়া আর কিছু করতে যাচ্ছে?
অ্যাসাঞ্জ: আমরা ভালো মানুষের সমর্থনের ওপর ভরসা রাখি। ৩৫০টারও বেশি আমাদের ওয়েবসাইট রয়েছে। এগুলোয় ফাঁস হওয়া নথি ও তথ্য পুনঃপ্রকাশ হচ্ছে। যে কোনো কিছুর চেয়ে আমরা এটারই বেশি মূল্য দিই।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১০