ঢাকা, বুধবার, ১১ ভাদ্র ১৪৩২, ২৭ আগস্ট ২০২৫, ০৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশের মালিকানা কার?

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২:০৬, আগস্ট ২১, ২০১৩
বাংলাদেশের মালিকানা কার?

ঢাকা: বাংলাদেশের সাম্প্রতিককালের অর্জিত উল্লেখযোগ্য সাফল্যগুলো হলো নারী উন্নয়নে গৃহীত পদক্ষেপ বাস্তবায়নের মাধ্যমে নারী শিক্ষার হার বৃদ্ধি, মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস ও গড় আয়ু বৃদ্ধি।

নারীদের ক্রমশ এগিয়ে যাওয়ার প্রমাণ দেশে ১৯৯১ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন নারীরাই, যেটা বিশ্ব প্রজাতন্ত্রের ইতিহাসে বিরল ঘটনা।

নোবেলজয়ী ও বিশ্বনন্দিত ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকানাও নারীদের। ‍নারী শ্রমিকরাই পরিশ্রম করে দেশের জন্য বছরে প্রায় দুই হাজার কোটি মার্কিন ডলার মূল্যমানের পোশাক উৎপাদন করছেন। সব দিকে নারীদের সাফল্য গাঁথা রচিত হলেও কোথায় যেন পিছিয়ে আছেন তারা।

এগিয়ে থেকেও বাংলাদেশি নারীদের পিছিয়ে পড়া নিয়ে একটি প্রতিবেদন করেছে ব্রিটেনের প্রভাবশালী সাময়িকী ‘দ্য ইকোনমিস্ট’।

মঙ্গলবার সাময়িকীটির অনলাইন সংস্করণের প্রকাশিত ‘উইমেন এন্ড প্রপার্টি রাইটস: হু ওন’স বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, নারী উন্নয়নে সাফল্য অর্জনের দিক থেকে ভারতকে হারিয়ে দিলেও যদি জিজ্ঞেস করা হয়, ‘বাংলাদেশের মালিক কারা’? তবে খুব তাড়াতাড়ি এবং সংক্ষিপ্তভাবে এ প্রশ্নের উত্তর আসবে ‘পুরুষ’। আর এটা কেবল দেশটির সম্পত্তি বণ্টনের নিয়ম-রীতির কারণেই।

পুরুষ ও নারী উত্তরাধিকারীর মধ্যে সম্পত্তি বণ্টন নিয়ে বিতর্ক চললেও কেউই সত্যিকার অর্থে জানে না অসম বণ্টন কিভাবে হয়! কিন্তু হিসেব ঘেঁটে দেখা যায়, নারীরা উত্তরাধিকারের যৎ সামান্য সম্পত্তিই লাভ করেন।

১৯৯৩ সালে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা ‘ফাও’ এক সমীক্ষা শেষে জানায়, এখানকার কৃষি জমির মাত্র ৩ দশমিক ৫ শতাংশ জমির মালিক নারীরা। বিশ বছর পর সে পরিমাণ কমে গিয়ে খুব সম্ভবত দুই শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

নারীদের এই পিছিয়ে পড়ার কারণ কী? কাগজে কলমে বাংলাদেশ একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হলেও বিবাহ, বিচ্ছেদ, ভরণপোষণ কিংবা সম্পত্তির উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে পারিবারিক আইন বা ধর্মীয় রীতি-নীতির ওপরই নির্ভরশীল সবাই।

এখানকার নারীদের সম্পত্তি বণ্টনের ক্ষেত্রে স্থানীয় মাদরাসাগুলোর প্রণীত আইন অনুসরণ করা হয়। আইন মতে, একজন বোন তার ভাইয়ের অর্ধেক সম্পত্তি পায়। আর একজন বিধবা তার সন্তান থাকলে পান স্বামীর সম্পত্তির এক অষ্টমাংশ আর সন্তান না থাকলে পান এক চতুর্থাংশ। এই বৈষম্যপূর্ণ উত্তরাধিকার আইন অনেক নারীরই অসন্তোষের কারণ।

অনেক নারীর উত্তরাধিকারে প্রাপ্ত সম্পত্তি যদি তার ভাই দখল করে ফেলেন তবে তিনি সেটার ওপর দাবি করেন না। স্থানীয়ভাবে এটাকে ‘ভালো বোনের লক্ষণ’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মনে করা হয়ে থাকে, ভাই তার বোনের অধিকারগুলোর দেখাশোনা করবেন বিধায় এই অধিকার তিনি ভোগ করতেই পারেন।

নেদারল্যান্ডের গবেষক জেনেকে আরেন্স ‘উইমেন, ল্যান্ড এন্ড পাওয়ার ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামে এক গবেষণা চালিয়ে মন্তব্য করেন, এ দেশের নারীদের সন্তান ও স্বামীদের বেশিরভাগই জবরদখলকারী।

ধনী কৃষকের বিধবা বধু খাদিজা নাম্নী এক নারীর বক্তব্যের উদ্ধৃতি উল্লেখ করে গবেষক আরেন্স বলেন, ‘মামার কাছ থেকে প্রাপ্ত তার ৯ বিঘা জমি (৩ একর) দখলে নিয়েছে সন্তানরা। ’

এসব অবিচার একেবারেই অলক্ষ্যে ঘটছে না। কিন্তু আইন যেন কেবল খাতা-কলমেই।

অবশ্য ১৯৯০ সালের পর থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন সময়ের সরকার নারীদের উন্নয়নে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। ২০০৮ সালে নির্বাচিত আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার সম্পত্তি ও অধিকারে নারীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কিছু খসড়া আইন প্রণয়ন করেছে। তাছাড়া, নির্বাচনী ইশতিহারে নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আইন সংশোধন করার অঙ্গীকারও করে দলটি। ইতোমধ্যে অবশ্য নারীর প্রতি সহিংসতা ও যৌন হয়রানি বন্ধে কিছু সফলতা উপহার দিতে পেরেছে এ সরকার।

কিন্তু নারীর উন্নয়নে সরকারের এসব পদক্ষেপগুলোকে ধর্মবিরোধী আখ্যা দিয়ে সঠিকভাবে নিচ্ছে না মৌলবাদী সংগঠনগুলো। সাম্প্রতিককালে এ নিয়ে সহিংসতার ঘটনাও ঘটেছে। মৌলবাদী সংগঠন হেফাজতে ইসলামী সম্প্রতি নারীদের সমঅধিকারের পক্ষে সরকারের প্রণীত পরিকল্পনার বিরুদ্ধে সরাসরি হুঁশিয়ারিও উচ্চারণ করেছে।

এ নিয়ে রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর চুপ মেরে থাকাটাও লক্ষণীয়। এনজিও সংস্থা ‘নিজেরা করি’ এর সংগঠক ও নারী নেত্রী খুশি কবীর বলেন, ‘ভোট হারানোর ভয়ে রাজনীতিকরা ধর্মে হাত দিতে চান না। ’

এতোসব হুমকি-বাধার পরেও বর্তমান সরকার নারীদের সম্পত্তিতে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দেশের সকল ভূমির রেকর্ড ডিজিটালাইজড করতে যাচ্ছে। খুশি কবীর মনে করেন, সরকারের এই পদক্ষেপের ফলে নারীরা তাদের অর্জিত সম্পত্তির উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে পারবে।

বাংলাদেশ সময়: ২২০০ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১৩
এইচএ/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।