ঢাকা: সিরিয়ার বিরুদ্ধে কোনো ধরনের সামরিক অভিযান অতীতের ভুলের পুনরাবৃত্তি হবে বলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে রাশিয়া। এ ধরনের অভিযান মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া ব্যাহত করবে এবং এ অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর ভয়ানক প্রভাব ফেলবে বলেও সতর্কবার্তা দিয়েছে দেশটি।
রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ প্রমাণিত হলে সিরীয় সরকারের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালানো হবে- পশ্চিমা দেশগুলোর এ ধরনের হুমকির জবাবে পাল্টা এ হুঁশিয়ারি দিল রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সোমবার আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত বিবৃতিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্জেই লাভরভ বলেন, এ ধরনের হামলা ইরাকের পরিণতিই ডেকে আনবে।
বিবৃতিতে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলোর অভিযোগ ও হামলা প্রস্তুতিকে ২০০৩ সালে ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন ও তার সরকারের বিরুদ্ধে গণবিধ্বংসী অস্ত্র বানানোর অভিযোগ তুলে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ প্রশাসনের অভিযানের সঙ্গে তুলনা করা হয়।
সার্জেই লাভরভ বলেন, আমরা আবারও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি জোরালো আহবান জানাচ্ছি যেন অতীতের ভুলের পুনরাবৃত্তি না করা হয় এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনকারী কোনো অভিযানে যেন সম্মতি না দেওয়া হয়।
সিরিয়া সরকারের বিরুদ্ধে অভিযানের ইঙ্গিত বিদ্রোহীদের আরও বেশি সহিংস করে তুলবে বলেও বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়।
এর আগে, গত সপ্তাহের বুধবার দামেস্কের উপকণ্ঠে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ ওঠায় ভূ-মধ্য সাগরের সিরীয় উপকূলে চতুর্থ ক্রুজ মিসাইলবাহী যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করে মার্কিন নৌবাহিনী।
রোববার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের সঙ্গে প্রায় ৪০ মিনিট ফোনালাপ করে সিরীয় সরকার কর্তৃক রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ প্রমাণিত হলে ‘কঠোর জবাব‘ দেওয়ার হুমকি দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।
তবে মার্কিন ও ব্রিটিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ধরনের হুমকির পাল্টা জবাবে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদ বলেন, এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো ধরনের সামরিক হস্তক্ষেপ শোচনীয় পরাজয়ের মধ্য দিয়ে শেষ হবে।
রাশিয়ার একটি সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আসাদ বলেন, সিরিয়াকে পশ্চিমাদের হাতের পুতুল বানানোর ষড়যন্ত্র কখনোই সফল হবে না।
সিরিয়ায় হামলা হলে মধ্যপ্রাচ্যে আগুন জ্বলবে বলে হুমকি দেয় আসাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইরানও।
ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণে যাচ্ছেন জাতিসংঘের প্রতিনিধিরা
রাজধানী দামেস্কের উপকণ্ঠে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণে যাচ্ছেন জাতিসংঘের নিরস্ত্রীকরণ শাখার প্রতিনিধিরা।
গত বুধবার রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের ওই ঘটনার পর বেশ কয়েকবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনের অনুমতি চেয়ে প্রত্যাখ্যাত হয় জাতিসংঘের ২০ সদস্যের প্রতিনিধি দলটি। তবে শেষ পর্যন্ত রোববার সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সরকার ও বিদ্রোহীরা ওই অঞ্চলে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হলে সন্দেহভাজন এলাকা পর্যবেক্ষণের অনুমতি পায় জাতিসংঘের প্রতিনিধিদল।
এর আগে শনিবার বিকেলে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার সম্পর্কে নিশ্চিত হয় প্রতিনিধি দলটি। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো সোমবার জানিয়েছে, রাজধানী দামেস্কের উপকণ্ঠের ওইসব এলাকা পর্যবেক্ষণের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে প্রতিনিধি দলের রাসায়নিক অস্ত্র পরীক্ষকরা।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা দেশগুলো মনে করছে, সিরীয় সেনাবাহিনীই রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করে থাকতে পারে।
তবে বিদ্রোহী অধ্যুষিত এলাকায়ই রাসায়নিক অস্ত্রের এজেন্ট রয়েছে দাবি করে এ জন্য সরকারবিরোধীদের অভিযুক্ত করছে আসাদ সরকার।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৩/আপডেটেড ১৬৩১ ঘণ্টা
এইচএ/আরকে