ঢাকা: সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের ভাগ্যে ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের পরিণতিই স্পষ্ট হয়ে উঠছে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকরা।
উপসাগরীয় যুদ্ধে ইঙ্গ-মার্কিন হামলায় পরাজয়ের পর ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলতে হয়েছে ইরাকের লৌহমানব সাদ্দামকে।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলোর খবর অনুযায়ী, যদি সোমবার রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের জায়গা পরিদর্শনে যাওয়া জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক দলের গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটে থাকে, তবে ২০০৩ সালের ঠিক এক দশক পর এবার ইরাকের প্রতিবেশী সিরিয়াতেই সামরিক অভিযান চালাতে পারে ইঙ্গ-মার্কিন বাহিনী।
ইতোমধ্যে অবশ্য জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক দলের রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের ঘটনার তদন্তের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র শক্তিগুলো বলেছে, অনেক দেরি হয়ে গেছে। প্রেসিডেন্ট আসাদ বাহিনীই যে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে এ ব্যাপারে নিজেদের সন্দেহ নেই।
অর্থাৎ রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার যদি আসাদের সেনাবাহিনী করে থাকে তবে ভূমধ্য সাগরের সিরীয় উপকূলে মোতায়েন করা চতুর্থ ক্রুজ মিসাইলবাহী যুদ্ধজাহাজ নিয়ে অভিযান চালাবে যুক্তরাষ্ট্র। আর মোড়ল রাষ্ট্রটিকে সহযোগিতার জন্য সিরীয় উপকূলের আশপাশে মোতায়েন করা সেনাবাহিনী নিয়ে এগোবে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানিসহ ন্যাটোর সদস্য দেশগুলো।
পেন্টাগন দাবি করছে, গত বুধবার ওই রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের ঘটনার পর সিরিয়ায় সামরিক অভিযান চালাতে হোয়াইট হাউসকে চাপ দিচ্ছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।
এ নিয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। এছাড়া, সিরিয়া ইস্যুতে পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে ক্যামেরনের সঙ্গে কথা বলেছেন জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মর্কেল।
হোয়াইট হাউস সূত্র বলছে, ওবামা প্রশাসনের অনেক নীতি-নির্ধারকই সিরিয়ার এই অন্তিম মুহূর্তে দেশটির জনগণের পাশে দাঁড়ানোর পক্ষে। অর্থাৎ যেকোনো সময়ই সিরিয়া অভিমুখে এগোনো শুরু করতে পারে মার্কিন রণতরী।
তাছাড়া, বিশ্বের সর্বোচ্চ সংস্থা জাতিসংঘও ইতোমধ্যে বলেছে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারকারীদের কঠোর শাস্তি পাওয়া উচিত। সেক্ষেত্রে যদি আসাদ বাহিনী কর্তৃক রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ প্রমাণিত হয়ে যায় তবে খোদ জাতিসংঘ থেকেই পরোক্ষভাবে সবুজ সংকেত পেয়ে হামলা চালাতে পারবে ইঙ্গ-মার্কিন বাহিনী।
আর জাতিসংঘ সবুজ সংকেত না দিলেও যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে বিশ্বের সর্বোচ্চ সংস্থাটির সম্মতি ছাড়াও সিরিয়ায় অভিযান চালানো যাবে।
তবে ভস্মে ঘি ঢালার মতো জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক দলের ওপর হামলার ঘটনা আসাদের দিন শেষ হয়ে আসারই ইঙ্গিত দিচ্ছে।
যদিও রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ বলেছেন, পরাজিত হয়ে বিদ্রোহীরাই এ ধরনের হামলা চালিয়েছে। সেনাঘাঁটির কাছে খোদ সেনাবাহিনী কর্তৃকই রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারে অভিযোগ অযৌক্তিক উল্লেখ করে এই ষড়যন্ত্রে বিদেশী শত্রুদের জড়িত থাকার অভিযোগ তোলেন তিনি।
অবশ্য ইঙ্গ-মার্কিন প্রশাসনের এ চোখ রাঙানির মধ্যেও সিরিয়ার পাশে আছে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম ফ্যাক্টর ইরান। ইঙ্গ-মার্কিন বাহিনীর সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কাকে মধ্যপ্রাচ্যে অগ্নিবলয় সৃষ্টির চেষ্টা বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরানের বিপ্লবী সেনাবাহিনী। এই অগ্নিবলয়ে পুরো মধ্যপ্রাচ্যই পুড়ে যাবে হুমকি দেয় ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
এছাড়া, সিরিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে বিশ্ব পরাশক্তি রাশিয়াও। ২০০৩ সালে ইরাকের ওপর হামলা চালানোর সময় রাশিয়া ঠিক এই ধরনের বিবৃতি দিলেও কার্যত সাদ্দাম প্রশাসনের পাশে থাকেনি।
অতএব, এ ধরনের বিবৃতিই রাশিয়া সরকারের পক্ষ থেকে আসাদের জন্য চূড়ান্ত সহযোগিতা বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে মধ্যপ্রাচ্যে যেহেতু ইরান বড় ফ্যাক্টর। সেহেতু সিরিয়ায় হামলার ক্ষেত্রে ইরানকে হিসেবে রেখেই এগোতে হবে ইঙ্গ-মার্কিন বাহিনীকে। কারণ, মধ্যপ্রাচ্যের প্রধান রণাঙ্গন খ্যাত পারস্য উপসাগর মূলত ইরানই নিয়ন্ত্রণ করে।
তাছাড়া, সিরিয়ার ওপর হামলা হলে নিজেদের অস্তিত্ব নিয়ে সংকটে পড়বে ইরান। সেক্ষেত্রে দেশটি আত্মরক্ষার্থে সামরিক সহযোগিতা করতে পারে সিরিয়াকে। সিরিয়ার সঙ্গে ইরানও যদি ইঙ্গ-মার্কিন বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে যায় তবে তার পরিণতি আগে থেকে হিসেব করে রাখা ভাল হবে ইঙ্গ-মার্কিন প্রশাসনের জন্য।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৩
এইচএ/এডিবি