ঢাকা: সিরিয়া ইস্যুতে নির্দিষ্ট সময়ের চারদিন আগেই অধিবেশন ডেকেছে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট। সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে যুক্তরাজ্যের করণীয় আলোচনা করতেই এই অধিবেশনের ডাক দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের বরাতে এ তথ্য জানা গেছে।
বুধবার ক্যামেরন এক টুইটার বার্তায় জানান, হাউজ অব কমনসের স্পিকার জন বারকাউ নির্দিষ্ট সময়ের চার দিন পূর্বে অধিবেশন শুরুর বিষয়ে তার অনুরোধ রেখেছেন। এই অধিবেশনেই ব্রিটিশ সরকারের করণীয় ঠিক হবে বলে তিনি আশা করেন।
ক্যামেরন জানান, এমপিরা আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়টি পরিষ্কার করার জন্য ভোট প্রদান করবেন।
সিরিয়ায় গত সপ্তাহে আসাদ বাহিনীর রাসায়নিক হামলার জবাবে সামরিক বল প্রয়োগের কথা ভাবছে যুক্তরাজ্য। যদিও রাসায়নিক হামলার বিষয়টি এখনও জাতিসংঘের তদন্তাধীন।
সিরিয়া সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলছে, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশ হামলার জন্যই এই অজুহাত দাঁড় করিয়েছে।
গত বুধবার সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারে ১৩’শ মানুষ নিহত হয়েছে বলে অভিযোগ করে সিরিয়ায় বিদ্রোহীরা। এরপর রোববার সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগে মৃত্যুর প্রমাণ পায় আন্তর্জাতিক মানবিক মেডিকেল সংস্থা মেডিসিনস সানস ফ্রন্টিয়ার্স (এমএসএফ)।
এদিকে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগে প্রায় এক হাজার মানুষ নিহত হওয়ার ঘটনায় আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের ঘটনাস্থল পরিদর্শনের আহ্বান জানাতে শনিবার সিরিয়া পৌঁছেছে জাতিসংঘের নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ক শাখার প্রধান অ্যাঞ্জেলা ক্যানের নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধিদল।
এরপর সোমবার সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্রের হামলাস্থল পর্যবেক্ষণে যাওয়া জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক দলের গাড়িবহরে গুলি চালিয়েছে ‘স্নাইপাররা’। সোমবার সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ‘নিরপেক্ষ অঞ্চলে’ (বাফার জোনে) এ হামলার ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে।
গত বুধবারের ওই ঘটনার জন্য ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ বাহিনীকে দায়ী করা হলেও নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ ও রাশিয়া।
রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের মতো গভীর উদ্বেগের ঘটনায় পরবর্তী পদক্ষেপ বিবেচনার কথা ভাবছেন বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।
রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ ‘চূড়ান্ত এবং সম্পূর্ণরূপে’ প্রত্যখ্যান করেছে সিরিয়ার সরকার।
সোমবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের জন্য সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সেনাবাহিনীকে দায়ী করলে মঙ্গলবার বিকেলে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়ালিদ মুয়াল্লেম এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন।
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ বলেছেন, তার সরকার রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করছে বলে পশ্চিমারা যে অভিযোগ করেছে তা ‘নির্বোধ কথাবার্তা’ (ননসেন্স) ছাড়া কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেছেন, সিরিয়ায় হামলা হলে তার পরিণতি শুভ হবে না।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সসহ পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক অভিযানের হুমকির জবাবে পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে সিরিয়ার সরকার বলেছে, এমন ধরনের কোনো হামলার চেষ্টা করা হলে মধ্যপ্রাচ্যে আগুন জ্বলবে।
রোববার আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে সিরিয়ার তথ্যমন্ত্রী ওমরান জাওয়াবি বলেন, ‘সিরিয়ায় সামরিক অভিযান কারও জন্য আনন্দদায়ক হবে না। ’
তিনি হুমকি দিয়ে বলেন, ‘মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মারাতত্মক বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং আগুনের ফুলকি হয়ে পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে জ্বালিয়ে দেবে। ’
অন্য দিকে সিরিয়া সরকারের মতোই মার্কিন প্রশাসনের বিরুদ্ধে সীমালঙ্ঘন না করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে আসাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইরান।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৩
কেএইচ/এমজেডআর