ঢাকা: সিরিয়ায় হামলা অত্যাসন্ন। এ কারণে কৌশলে দেশটি থেকে নিজ দেশের নাগরিকদের সরিয়ে নিচ্ছে রাশিয়া।
রাশিয়ার জরুরি মন্ত্রণালয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে, সিরিয়ার ভূ-মধ্য সাগরীয় উপকূলের শহর লাতাকিয়ায় মঙ্গলবার একটি অনুদান খাদ্য বহনকারী বিমান অবতরণ করেছে এবং সঙ্ঘাতপূর্ণ সিরিয়া থেকে নাগরিকদের সরিয়ে নেবে।
জরুরি মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রী ইরিনা রৌঁসিয়াস সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, জরুরি দপ্তরের ইল্যুশিন-৭৬ নামের বিমানটি মঙ্গলবার বিকেলে সিরিয়ার বন্দর নগরীটিতে অবতরণ করে।
তিনি বলেন, মঙ্গলবারই ফিরতি প্লাইটে সিরিয়া ছাড়তে ‘ইচ্ছুক’ রাশিয়ার ১৮০ জন নাগরিককে সঙ্গে নিয়ে আসবে।
সংবাদ মাধ্যমগুলো বলছে, সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ তুলে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদবাহিনীর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের সামরিক অভিযান চালানোর হুমকির পরিপ্রেক্ষিতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে মস্কো।
এর আগে অবশ্য পশ্চিমাদের হামলার হুমকির জবাবে রাশিয়ার কর্মকর্তারা হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেন, এ ধরনের হামলা সর্বনাশা পরিণতি ডেকে আনবে।
এ দিকে সিরিয়ায় হামলা চালানোর চূড়ান্ত হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী চাক হেগেল বলেছেন, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা চাইলে আসাদবাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী সম্পূর্ণ প্রস্তুত।
মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের কার্যালয়ের পক্ষ থেকে দেশটির সেনাবাহিনীর হামলার পরিকল্পনার কথা জানানোর ঠিক কয়েক ঘণ্টা পর এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন মার্কিন কর্মকর্তা হেগেল।
অন্য দিকে সিরিয়ার বিদ্রোহীদের জোট এসএনসির উদ্ধৃতি দিয়ে কাতারভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল-জাজিরা জানিয়েছে, বিদ্রোহীরা আশা করছে কয়েকদিনের মধ্যেই সিরিয়ায় অভিযান শুরু করবে পশ্চিমা সেনাবাহিনী। এ ব্যাপারে তাদের কাছে পশ্চিমাদের সংকেত রয়েছে বলেও দাবি করে এসএনসি।
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী হেগেল তার বিবৃতিতে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট যেভাবে চাইবেন ঠিক সেভাবে যেন অভিযান চালানো যায় তেমন করে পরিকল্পনা সাজিয়েছি আমরা। ’
এর আগে সোমবার রাতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কেরি এক বিবৃতিতে বলেন, আসাদ বাহিনীই যে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে সে সম্পর্কে অনস্বীকার্য প্রমাণ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে।
এ দিকে, সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের ঘটনায় আসাদ বাহিনীকে পাল্টা জবাব দেওয়ার ব্যাপারে আলোচনায় বসতে বৃহস্পতিবার পার্লামেন্টে জরুরি অধিবেশন আহ্বান করেছে যুক্তরাজ্য।
প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, এই মুহূর্তে সামরিক অভিযানের বিষয়টিই বিবেচনা করছে যুক্তরাজ্য।
সরকারি অবকাশ সংক্ষিপ্ত করে লন্ডনে ফিরে আসা ডেভিড ক্যামেরন বলেন, বৃহস্পতিবারের অধিবেশনে পার্লামেন্টের সাংসদরা স্পষ্ট পদক্ষেপ নেওয়ার জন্যই ভোট দিতে পারেন।
সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে ৪০ মিনিট ফোনালাপ ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদের সঙ্গে ক্যামেরনে আলোচনায়ও সিরিয়ায় সামরিক অভিযানের বিষয়টিই স্পষ্ট হয়ে উঠছে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো।
তবে সিরিয়ায় হামলা চালানোর ব্যাপারে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে আসাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইরান। দেশটিতে যেকোনো ধরনের হামলা মধ্যপ্রাচ্যকে জ্বালিয়ে দেবে বলে হুমকি দিয়েছেন তেহরানের কর্মকর্তারা।
হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদও। রাশিয়ার একটি সংবাদ মাধ্যমকে আসাদ বলেন, সিরিয়ায় অভিযান চালালে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হবে হামলাকারীরা।
অন্য দিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমারা গত বুধবারের রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের জন্য সিরিয়া সরকারকে দায়ী করলেও মঙ্গলবার আরব দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করা হয়েছে।
অবশ্য, রাসায়নিক অস্ত্র হামলাস্থল পরিদর্শন ও পরীক্ষায় গেছেন জাতিসংঘের প্রতিনিধিরা।
সোমবার পর্যবেক্ষকদের গাড়িবহরে হামলা হলেও ফের পরীক্ষার জন্য ঘটনাস্থলে যান জাতিসংঘের নিরস্ত্রীকরণ শাখার এসব প্রতিনিধি।
ধারণা করা হচ্ছে, জাতিসংঘের পরীক্ষায় যদি রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারে সঙ্গে আসাদ বাহিনীর জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হয় তাহলে ইরাকের পরিণতিই ভোগ করতে হতে পারে সিরিয়াকে।
বাংলাদেশ সময়: ২২৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৩
এইচএ/আরআইএস