ঢাকা: পাকিস্তানের নারী শিক্ষা আন্দোলনকর্মী মালালা ইউসুফজাইকে ইতিহাস হাতছানি দিচ্ছে। এ সপ্তাহে পেয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবাধিকার বিষয়ক পুরস্কার সাখারভ।
তালেবানের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর মালালা তার সাহসিকতার জন্য পেতে যাচ্ছেন ‘শান্তিতে নোবেল পুরস্কার’! শুক্রবার গ্রিনিচমান সময় ৯টায় (বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টায়) ঘোষিত হবে ২০১৩ সালে শান্তিতে নোবেলজয়ীর নাম।
বিশ্ববাসী খুব সম্ভবত মালালার নামটিই শুনতে পাবেন। শুধু পাকিস্তানিরাই নয়, বিশ্ব মিডিয়াও মালালার সম্ভাব্য দেখেছেন শতাংশের কাছাকাছি। কেননা ২৫৯ জন্য মনোনয়ন পেলেও নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটির সংক্ষিপ্ত তালিকার শীর্ষে রয়েছেন পাকিস্তানের তালেবান হামলা কবলিত অঞ্চল খাইবার-পাখতুনখওয়া প্রদেশের গৌরব মালালা।
ব্রিটিশ পত্রিকা গার্ডিয়ান লিখেছে, ‘মালালা ইউসুফজাই ইজ টু গুড ফর দ্য নোবেল পিস প্রাইজ’। পত্রিকাটির এ শিরোনামের সংবাদের সূচনা অংশ শুরু হয়েছে এভাবে, পাকিস্তানি স্কুলশিক্ষার্থী ও শিক্ষাঅধিকার কর্মী মালালা ইউসুফজাইয়ের কয়েকদিন ধরে ব্যস্ত সময় কাটছে।
মালালার ওপর তালেবানদের হামলার বিষয়টি উল্লেখ করে পত্রিকাটি লিখেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাখারভ মানবাধিকার পুরস্কার, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অ্যাম্বাসেডর অব কনসাসনেস অ্যাওয়াড, আনা পোলিতকোভস্কায়া অ্যাওয়ার্ড, প্রাইড অব ব্রিটেন অ্যাওয়ার্ডসহ অনেক পুরস্কার পেয়েছেন মালালা। কিন্তু এগুলোকে ছাপিয়ে এ বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কারের দাবিদার হিসেবে বেশ জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে তার নাম।
মার্কিন জনপ্রিয় সাময়িকী টাইমের শিরোনাম-‘মালালা মার্চেস টুয়ার্ড দ্য নোবেল পিস প্রাইজ’।
ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, এ বছরের শান্তিতে সম্ভাব্য নোবেলজয়ীদের তালিকায় রয়েছেন পাকিস্তানের স্কুলশিক্ষার্থী মালালা ইউসুফজাই। তার সঙ্গে রয়েছেন কঙ্গোর এক চিকিৎসক।
দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল শিরোনাম করেছে, সবচেয়ে কমবয়সী হিসেবে নোবেল জয় করছেন মালালা। এ সংবাদ মাধ্যম বলেছে, ১৯০১ সালে নোবেল পুরস্কার চালু হওয়া পর থেকে সবচেয়ে কমবয়সী নোবেল জয়ীর বয়সের অর্ধেক বয়স মালালার।
২০১১ সালে ইয়েমেনের নারী মানবাধিকারকর্মী ও সাংবাদিক তাওয়াকুল কারমান সবচেয়ে কমবয়সী হিসেবে শান্তিতে নোবেল পান। সে সময় তার বয়স ছিল ৩২ বছর। তার সঙ্গে লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট অ্যালেন জনসন সারলিফ ও মানবাধিকার কর্মী লেমাহ জিওবে শান্তিতে যৌথভাবে নোবেল পান।
মালালা নিজেও আশাবাদী। বৃহস্পতিবার নিউইয়র্ক সিটির এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, আমি যদি নোবেল শান্তি পুরস্কার পাই, আমি মনে করি এটি হবে বিশাল সম্মানের, আমরা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি এবং একই সঙ্গে বিশাল দায়িত্বের।
শুরু থেকে ২০১২ পর্যন্ত ৪৩ জন নারীকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। তবে মারি কুরিকে দুবার গুণলে এ সংখ্যা ৪৪ হয়। মালালা এবার পেলে নারী নোবেলজয়ীদের তালিকা ব্যক্তি হিসেবে ৪৪ এ দাঁড়াবে।
জন্মভূমি মিনগোরায় তালেবানের শাসন নিয়ে নিজের অভিব্যক্তি লিখে বিশ্ব মঞ্চে নিজের আসন প্রতিষ্ঠা শুরু করেন মালালা। নারী শিক্ষায় তালেবানের বাধা, মতামত প্রকাশে বাধা, ঘরে বাইরে নারীদের বের হওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে ২০০৯ সালে বিবিসির উর্দু সংস্করণে একটি ব্লগ লিখেন মালালা। ছদ্মনামে ব্লগটি লিখলেও তালেবান তার পরিচয় পেয়ে যায়।
তাকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে তালেবান। ২০১২ সালের ৯ অক্টোবর স্কুলবাসে করে স্কুল থেকে ফেরার পথে মালালাকে গুলি করে তালেবান জঙ্গি। মৃত্যুর কাছাকাছি গিয়েও সহপাঠী, পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব, দেশবাসী ও বিশ্ববাসীর প্রার্থনায় বেঁচে যান মালালা।
সরকারি খরচে পাকিস্তানে চিকিৎসা করার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে তাকে নেওয়া হয়। সুস্থ হওয়ার পর থেকে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন তিনি। সেখানের একটি স্কুলে পড়ছেন মালালা।
১৯৯৭ সালের ১২ জুলাই এক সুন্নি মুসলিম পরিবারে জন্ম মালালার।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১৩
এসএফআই/জিসিপি