ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ইতিহাস গড়া হলো না মালালার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১৩
ইতিহাস গড়া হলো না মালালার

ঢাকা: বিশ্ববাসীর ধারণা ও সংবাদ মাধ্যমগুলোর গুঞ্জনকে ফের উড়িয়ে দিয়ে নেদারল্যান্ডসভিত্তিক রাসায়নিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ সংস্থাকেই (ওপিসিডব্লিউ) চলতি বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করলো নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি। তাই কাছাকাছি গিয়েও ইতিহাসের এভারেস্ট জয় করা হলো না পাকিস্তানের মানবাধিকারকর্মী ও কিশোরী ব্লগার মালালা ইউসুফজাইয়ের।



আনুষ্ঠানিকভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার ঘোষণার ঠিক আগ মুহূর্ত পর্যন্তও মালালাই এ সম্মাননা লাভ করছেন বলে বিশ্বমিডিয়ায় গুঞ্জন চলছিল। সংবাদ মাধ্যমগুলোর ভবিষ্যদ্বাণী বুকে আঁকড়ে পাকিস্তানিদের সঙ্গে বিশ্ববাসীও সময় গুনছিলো- নরওয়ের ঘড়িতে কখন বাজে সকাল এগারোটা। কিন্তু এগারোটার ঘরে ঘড়ির কাঁটা না পৌঁছাতেই একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে বিবিসি অনলাইন জানায়, ওপিসিডব্লিউ’র ঘরে যাচ্ছে এবারের নোবেল শান্তি পুরস্কার। ঠিক এগারোটায় বিবিসির খবর নিশ্চিত করে ওপিসিডব্লিউকে শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করার ঘোষণা করে নোবেল কমিটি।

নোবেল কমিটির এই অবিশ্বাস্য ঘোষণার মধ্য দিয়ে আবারও এক বছরের অপেক্ষার সড়কে নামতে হলো বিশ্ববাসীকে, বিশ্বমিডিয়াকে। প্রত্যাশা, এ বছর না গেলেও হয়তো আগামী বছরই নোবেল শান্তি পুরস্কার ঠাঁই পাবে ‘সাহসী কন্যার’ শোকেসে।

পর্যবেক্ষকদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী সংবাদ মাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে চলতি বছরের শান্তি পুরস্কার মালালার ঘরে যাওয়ার সম্ভাবনার কথাই উঠে আসে। তবে এসব গুঞ্জনকে উড়িয়ে দিয়ে সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্র ধ্বংসের অভিযানে নামা ওপিসিডব্লিউ’র ঘরে কেন অভিযান সফলভাবে শেষ না করতেই এ পুরস্কার গেল এ প্রশ্নের জবাব তাৎক্ষণিকভাবে কোনো পর্যবেক্ষক, বিশ্লেষকই পাননি, কোনো সংবাদ মাধ্যমই এ নিয়ে এখন পর্যন্ত বিশ্লেষণ করেনি।

এর আগে, মালালাই এ বছরের শান্তি পুরস্কার জিতছেন ভবিষ্যদ্বাণী দিয়ে বিশ্ব সংবাদ মাধ্যমগুলোতে জোরালো গুঞ্জন ওঠে।

ব্রিটিশ পত্রিকা গার্ডিয়ান লেখে, ‘মালালা ইউসুফজাই ইজ টু গুড ফর দ্য নোবেল পিস প্রাইজ’। পত্রিকাটির এ শিরোনামের সংবাদের সূচনা অংশ শুরু হয়েছে এভাবে, পাকিস্তানি স্কুলশিক্ষার্থী ও শিক্ষাঅধিকার কর্মী মালালা ইউসুফজাইয়ের কয়েকদিন ধরে ব্যস্ত সময় কাটছে।

মালালার ওপর তালেবানদের হামলার বিষয়টি উল্লেখ করে পত্রিকাটি লিখেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাখারভ মানবাধিকার পুরস্কার, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অ্যাম্বাসেডর অব কনসাসনেস অ্যাওয়ার্ড, আনা পোলিতকোভস্কায়া অ্যাওয়ার্ড, প্রাইড অব ব্রিটেন অ্যাওয়ার্ডসহ অনেক পুরস্কার পেয়েছেন মালালা। কিন্তু এগুলোকে ছাপিয়ে এ বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কারের দাবিদার হিসেবে বেশ জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে তার নাম।

মার্কিন জনপ্রিয় সাময়িকী টাইম ‘মালালা মার্চেস টুয়ার্ড দ্য নোবেল পিস প্রাইজ’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদে এ বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কার মালালার ঘরে যাচ্ছে বলেই বিশ্লেষণ তুলে ধরে।

ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়, এ বছরের শান্তিতে সম্ভাব্য নোবেলজয়ীদের তালিকায় রয়েছেন পাকিস্তানের স্কুলশিক্ষার্থী ‍মালালা ইউসুফজাই। তার সঙ্গে রয়েছেন কঙ্গোর এক চিকিৎসক।

দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল শিরোনাম করে, সবচেয়ে কমবয়সী হিসেবে নোবেল জয় করছেন মালালা। সংবাদ মাধ্যমটি জানায়, ১৯০১ সালে নোবেল পুরস্কার চালু হওয়া পর থেকে সবচেয়ে কমবয়সী নোবেল জয়ীর বয়সের অর্ধেক বয়স মালালার।

২০১১ সালে ইয়েমেনের নারী মানবাধিকারকর্মী ও সাংবাদিক তাওয়াকুল কারমান সবচেয়ে কমবয়সী হিসেবে শান্তিতে নোবেল পান। সে সময় তার বয়স ছিল ৩২ বছর। তার সঙ্গে লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট অ্যালেন জনসন সারলিফ ও মানবাধিকার কর্মী লেমাহ জিওবে শান্তিতে যৌথভাবে নোবেল পান।

বিশ্ববাসীর ভবিষ্যদ্বাণী ও বিশ্বমিডিয়ার গুঞ্জনে মালালা নিজেও এ বছরের শান্তি পুরস্কার লাভের ব্যাপারে ‍আশাবাদী ছিলেন। বৃহস্পতিবার নিউইয়র্ক সিটির এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আমি যদি নোবেল শান্তি পুরস্কার পাই, আমি মনে করি এটি হবে বিশাল সম্মানের, আমরা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি এবং একই সঙ্গে বিশাল দায়িত্বের।

জন্মভূমি মিনগোরায় তালেবানের শাসন নিয়ে নিজের অভিব্যক্তি লিখে বিশ্ব মঞ্চে নিজের আসন প্রতিষ্ঠা শুরু করেন মালালা। নারী শিক্ষায় তালেবানের বাধা, মতামত প্রকাশে বাধা, ঘরে বাইরে নারীদের বের হওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে ২০০৯ সালে বিবিসির উর্দু সংস্করণে একটি ব্লগ লিখেন মালালা। ছদ্মনামে ব্লগটি লিখলেও তালেবান তার পরিচয় পেয়ে যায়।

তাকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে তালেবান। ২০১২ সালের ৯ অক্টোবর স্কুলবাসে করে স্কুল থেকে ফেরার পথে মালালাকে গুলি করে তালেবান জঙ্গি। মৃত্যুর কাছাকাছি গিয়েও সহপাঠী, পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব, দেশবাসী ও বিশ্ববাসীর প্রার্থনায় বেঁচে যান মালালা।

সরকারি খরচে পাকিস্তানে চিকিৎসা করার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে তাকে নেওয়া হয়। সুস্থ হওয়ার পর থেকে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন তিনি। সেখানের একটি স্কুলে পড়ছেন মালালা।

সম্ভাবনা ছিল সবচেয়ে কম বয়সে নোবেল জেতার
বিশ্ববাসীর প্রার্থনা আর সংবাদ মাধ্যমগুলোর জল্পনার জোরে মালালা যদি বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক নোবেল পুরস্কার জিতেই যেতেন, তবে ইতিহাস সৃষ্টি করে বিশ্বের সবচেয়ে কমবয়সী হিসেবে এ সম্মাননা লাভ করতেন তিনি।

নোবেল পুরস্কারের ইতিহাসে সবচেয়ে কমবয়সী নোবেলজয়ী হলেন অস্ট্রেলিয়ার উইলিয়াম লরেন্স ব্র্যাগ। ১৯১৫ সালে মাত্র ২৫ বছর বয়সে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার লাভ করেন তিনি।

আর শান্তিতে সবচেয়ে কমবয়সী নোবেলজয়ী হলেন ইয়েমেনের মানবাধিকারকর্মী ও সাংবাদিক তাওয়াক্কুল কারমান। ২০১১ সালে লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট অ্যালেন জনসন সারলিফ ও মানবাধিকার কর্মী লেমাহ জিওবে’র সঙ্গে যৌথভাবে এ পুরস্কার জিতেন তাওয়াক্কুল।

সবচেয়ে কমবয়সী নোবেলজয়ীর চেয়ে প্রায় এক দশকের ছোট হলেও শান্তিতে নোবেলজয়ী তাওয়াক্কুলের বয়সের অর্ধেকেরও ছোট ১৯৯৭ সালের ১২ জুলাই জন্মগ্রহণ করা মালালা।

নোবেল কমিটির তথ্য মতে, বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক এই পুরস্কারটির বিজয়ীদের গড় বয়স প্রায় ৫৯ বছরের মতো। সে হিসেবে গড় বয়সের চেয়ে প্রায় তিন গুণ ছোট এই পাকিস্তানী কিশোরী।

আর সবচেয়ে বেশি বয়সে নোবেল জেতা রাশিয়ার লিওনিদ হারউইকজ থেকে ৬ যুগেরও বেশি ছোট মালালা। ৯০ বছর বয়সে ২০০৭ সালে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন লিওনিদ।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১৩
এইচএ/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।