ঢাকা: ঘূর্ণিঝড় পাইলিন ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যে যেকোনো সময় আঘাত হানতে পারে। উড়িষ্যা থেকে ২০ কিলোমিটারের কম দূরে অবস্থান করছে শক্তিশালী এ ঝড়টি।
এর আগে সন্ধ্যা ৬টায় পাইলিনের অবস্থান গোপালপুর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে ছিল।
৫ নম্বর হারিকেন ক্যাটাগরির এ ঘূর্ণিঝড় বিকেল ৫টায় উড়িষ্যার গোপালপুর থেকে মাত্র ৬০ কিলোমিটার দূরে ছিল।
ভারতীয় সময় বিকেল সাড়ে ৪ টায় ভারতের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের প্রধান মারি সশীধর রেড্ডি বলেছেন, উড়িষ্যার গঞ্জম জেলার গোপালপুর শহর থেকে মাত্র ৭০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে পাইলিন।
এর আগে ভারতের আবহাওয়া বিশেষজ্ঞেরা বলেছেন, শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৮টার মধ্যে আঘাত হানবে পাইলিন।
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, আঘাত হানার সময় পাইলিনের বেগ থাকবে ঘণ্টায় ২৪০ কিলোমিটার।
এদিকে পাইলিনের প্রভাবে উড়িষ্যায় ঝড়ে গাছ পড়ে কমপক্ষে ৩ জন নিহত হয়েছে।
মাঠে নামানো হয়েছে জাতীয় দুর্যোগ উদ্ধারবাহিনীকে (এনডিআরএফ)। এনডআরএফের ২ হাজার ৩শ সদস্যকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী।
ভারতীয় আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, প্রতি ঘণ্টায় ২০০ থেকে ২১০ কিলোমিটার বেগে এগুচ্ছে পাইলিন।
ভারতের পূর্ব উপকূলীয় উড়িষ্যা ও দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলীয় অন্ধ্র প্রদেশে আঘাত হানবে ঝড়টি। আঘাত হানলে উড়িষ্যা ১৯৯৯ সালে আঘাত হানা ঝড়ের ভয়াবহতাকে ছাড়িয়ে যাবে পাইলিন। ১৯৯৯ সালের ঘূর্ণিঝড়ে কমপক্ষে ১০ হাজার জন নিহত হয়েছিল।
আইলিনের প্রভাবে অন্ধ্র প্রদেশ ও উড়িষ্যায় প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে। নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে এ দুই প্রদেশের উপকূলবাসীদের। এরই মধ্যে সাড়ে পাঁচ লাখ মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
উড়িষ্যার উপকূলীয় অঞ্চল থেকে ৩ লাখ ৬০ হাজার জনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রদেশটির গানজাম শহর থেকেই ১ লাখ ২০ হাজার জনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে ৮০ হাজার জনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
উড়িষ্যা রাজ্যে জরুরি সেবা কেন্দ্র জানিয়েছে, পাইলিনের আঘাতগ্রস্তদের জন্য ৫ লাখ টন খাদ্যসামগ্রী প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
পাইলিনকে গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড় হিসেবে বিবেচনা করছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ভারতে আঘাত হানলে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অন্ধ্রপ্রদেশ ও উড়িষ্যার কমপক্ষে সাতটি জেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ঝড়টি এখন ২১০ থেকে আগাতে থাকলেও ২৪০ কিলোমিটার বেগে এটি উড়িষ্যার গোপালপুর ও অন্ধ্রপ্রদেশের কলিঙ্গপত্তমের ভূমিতে আঘাত হানবে। আঘাত হানার সময় ঢেউ সর্বোচ্চ সাড়ে তিন মিটার পর্যন্ত উঠতে পারে। ৩০০ থেকে ৬০০ মিটার পর্যন্ত ভূমি সমুদ্রের পানিতে তলিয়ে যেতে পারে।
হাওড়া-বিশাখাত্তমের ১১টি রেল চলাচল স্থগিত রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে উড়িষ্যা ও অন্ধ্রপ্রদেশের উত্তর উপকূলে মুষলধারে বৃষ্টি হতে পারে। রেলপথের মতো স্থলপথও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
কেন্দ্রের সরকার উড়িষ্যার গানজাম, জগৎসিংপুর ও কুদ্রায় কেন্দ্রীয় পুলিশ উপকূলীয় সাতটি জেলায় ২৩টি ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্র ও একশ’রও বেশি আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
প্রদীপ ও গোপালপুর বন্দর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
উড়িষ্যা প্রদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী সুরিয়া নারায়ণ বলেছেন, ‘আমরা প্রকৃতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছি। এবার আমরা আগের চেয়ে প্রস্তুত। আমরা ১৯৯৯ সাল থেকে শিক্ষা নিয়েছি। ১৯৯৯ সালের ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ১৫ হাজার মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
পাইলিনের প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গের কিছু অংশ, ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগড়, বিহার ও উত্তর প্রদেশে বৃষ্টিপাত হতে পারে।
এদিকে পাইলিনের প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে জানা গেছে। শনিবার দুপুরের পর থেকেই খুলনার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে দমকা হওয়া ও ঝড়ো বৃষ্টি।
আবহাওয়া অফিস থেকে খুলনাসহ মংলা সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। রাজধানী ঢাকায় ও চট্টগ্রামেও বৃষ্টিপাত হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৯ ঘণ্টা/আপডেটেড: ১৮২৯ ঘণ্টা/আপডেটেড: ১৮৫৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৩
এসএফআই/আরআইএস