মুসাকালা: আফগান সেনাবাহিনীর মধ্যে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর থেকে সেনাসদস্যরা ব্যাপকভাবে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। খবর এএফপির।
গোপনে বৈষম্যের শিকার আফগান সেনারা বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ পশতুন সেনাদের তুলনায় সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর সদস্যদের খুব কম সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়। ছুটি পেতে পশতুন কমান্ডারকে ঘুষ দিতে হয়।
তারা বলেন, ‘কমান্ডার আমাদের বলেন, তোমাদের মধ্যে কেউ ছুটি চাইলে নিজ নিজ পকেট হাতড়াও দেখ। যে টাকা দিতে পারবে সেই ছুটি পাবে। ’
২০ বছর বয়সী একজন সংখ্যালঘু হাজারা গোত্রের সেনাসদস্য বলেন, ‘আমার টাকা না থাকায় আমি কখনো ছুটি পাই না। ’
শাস্তির ভয়ে নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে এক তাজিক সেনা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘আমি পশতুন নই। আর এ জন্যেই সেনাবাহিনীতে আমি খুব সস্তা। এখানে একজন পশতুন সেনার জীবন অনেক গুরুত্বপূর্ণ, অনেক মূল্যবান। ’
বিশ্লেষকরা বলছেন, এরকম বৈষম্যমূলক আচরণের কারণে অস্থিতিশীল হেলমান্দ প্রদেশের মুসাকালা জেলায় নতুন নিয়োগ পাওয়া অপেক্ষাকৃত তরুণ সেনারা নৈতিক মনোবল হারিয়ে ফেলছেন। অথচ আফগানিস্তানে তালেবানের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে বিবেচনা করা হয় ওই অঞ্চলকে।
২০১৪ সালের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের সময়সীমা ঘোষণা করা হয়েছে। মাঝখানে এ সময়ের মধ্যে দেশটির অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার দায়িত্ব গ্রহণের প্রস্তুতিতে সেনাদের মধ্যে এ বৈষম্যের ব্যাপারটি বড় একটি প্রতিবন্ধক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইএসজি) নামে একটি বেসরকারি গত বছর মে মাসে এক প্রতিবেদনে জানায়, নিজেদের মধ্যকার সহিংসতা মোকাবেলা করতেই আফগান সেনারা সমর্থ নয়। প্রতিবদনটিতে বিশেষ করে গোত্রীয় বিভেদ, অশিক্ষা, মাদকাসক্তি এবং চাকরি ছেড়ে পালানোর বিষয়গুলো বিশেষভাবে উপস্থাপন করা হয়।
গবেষণায় দেখা যায়, সেনাবাহিনীতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পদগুলির মধ্যে ৪২ ভাগ পশতুন এবং ২৭ ভাগ তাজিকরা দখল করে আছে। অন্যদিকে, সংখ্যালঘু হাজারা ও উজবেক উপজাতির সেনাদেরকে নিম্নস্তরের পদ দেওয়া হয়েছে।
তবে, প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল মোহাম্মদ জাহির আজিমী সেনাদের মধ্যে এ বৈষম্যের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, আফগান সেনাবাহিনীর মধ্যে যথেষ্ট জাতিগত ভারসাম্য রয়েছে।
অনেক সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠী থেকে আসা সেনাসদস্যদের অভিযোগ, তাদের বেতনের ক্ষেত্রেও বৈষম্য করা হয়। অথচ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শুধু টাকার জন্য এখানে চাকরি করতে আসে তারা। নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে সব সময় ভয় থাকে কখন তালেবানের বুলেট এসে তাদের বুকে বিঁধে। বহু সেনা ছুটিতে গিয়ে আর ফিরে আসেনি বলেও জানান অনেকে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০১০