ঢাকা: অনেক আশা জাগিয়েও শেষ পর্যন্ত বিফল হলো সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত ইরান ও বিশ্বশক্তির আলোচনা। তবে, আলোচনায় অংশ নেওয়া বিশ্ব নেতারা দাবি করেছেন, তেহরানের পরমাণু কর্মসূচি ও ইরানের ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে উভয় পক্ষই কট্টর অবস্থান থেকে মধ্যবর্তী অবস্থানে সরে এসেছে।
তেহরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে বিশ্বশক্তি ৫+১ (যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, রাশিয়া, ফ্রান্স ও জার্মানি) এর সঙ্গে ইরানের আলোচনা বৃহস্পতিবার শুরু হয়ে শনিবার তৃতীয় দিন পর্যন্ত চললেও কোনো ধরনের চুক্তি স্বাক্ষর ছাড়াই আলোচনা শেষ হয়।
অথচ, শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্তও দু’পক্ষই আলোচনায় কিছুটা ছাড় দিয়ে চুক্তিতে পৌঁছতে যাচ্ছে বলে আশা করা হচ্ছিল। এছাড়া, উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্য সফর স্থগিত করে তাৎক্ষণিকভাবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি জেনেভার বৈঠকে যোগ দেওয়ায় ধারণা করা হচ্ছিল, শেষ পর্যন্ত এই বৈঠকেই বুঝি পশ্চিমাদের সঙ্গে তেহরানের অচলাবস্থা নিরসনের সমাধান হচ্ছে।
শনিবার তৃতীয় ও শেষ দিনের আলোচনা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান ও আলোচনার সমন্বয়ক ক্যাথেরিন অ্যাশটন দাবি করেন, আলোচনায় অনেক অগ্রগতি হয়েছে। তবে চুক্তিতে পৌঁছাতে এখনও কিছু বিষয়ে মতানৈক্য রয়েছে।
অ্যাশটন আশা প্রকাশ করে বলেন, আগামী ২০ নভেম্বর থেকে ফের শুরু হওয়া আলোচনায়ই অচলাবস্থা নিরসনের ইতি টানতে একটি চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব হবে।
অ্যাশটনের সঙ্গে সুর মিলিয়ে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফও বলেন, আলোচনার ফলাফল নিয়ে আমি হতাশ নই। এই আলোচনা ‘ইতিবাচক কিছু করার জন্য আমাদের পথ দেখিয়েছে’।
ইরানি নেতা বলেন, সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে সরে মধ্যবর্তী অবস্থানে এসেছেন এবং এ বিষয়ে চুক্তিতে পৌঁছতে সবারই আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে।
উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্য সফর স্থগিত করে জেনেভার বৈঠকে যোগ দেওয়া কেরিও আলোচনার ফলাফল নিয়ে হতাশ নন।
তিনি বলেন, এই আলোচনার মাধ্যমে আমরা যে আগের চেয়ে অনেক বেশি কাছাকাছি আসতে পেরেছি এ ব্যাপারে আমার কোনো সন্দেহ নেই।
তেহরানের পরমাণু কর্মসূচি ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে অনুষ্ঠিত এ আলোচনায় রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্জেই ল্যাভরভ ও চীনের এক জ্যেষ্ঠ কূটনীতিকও অংশ নেন।
এর আগে, আলোচনা শুরুর প্রথম দিন বৃহস্পতিবার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ বলেন, ইরান পুরোপুরিভাবে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি বন্ধ করবে না, কিন্তু আলোচনার টেবিলে চুক্তির বিভিন্ন ইস্যু রয়েছে। তিনি বলেছেন, ইরানের পরমাণু ইস্যু অসমাধান যোগ্য নয় এবং তেহরান অবিশ্বাসের দেওয়াল টপকাতে চায়।
পশ্চিমাদের সন্দেহ, পরমাণু অস্ত্র তৈরির জন্য ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি চালাচ্ছে ইরান। তবে, বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চিত করেছে, ‘সুক্ষ্ম ও যাচাইযোগ্য পদক্ষেপের’ বিপরীতে কিছু নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হবে।
অবশ্য, ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি ‘ঐতিহাসিক ভুল’ হবে বলে দাবি করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ইরান ছলনা করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১১১৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৩
এইচএ/বিএসকে