ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

বিক্ষুব্ধ পরিবেশ, ফিলিপাইনের পর তাণ্ডব সোমালিয়ায়

হুসাইন আজাদ, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৩
বিক্ষুব্ধ পরিবেশ, ফিলিপাইনের পর তাণ্ডব সোমালিয়ায়

ঢাকা: পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বরাবরই জলবায়ুর দ্রুত পরিবর্তন ও এর প্রতিক্রিয়া নিয়ে সাবধান করে আসছেন বিশ্ববাসীকে। কিন্তু উন্নয়নশীল বা অনুন্নতশীল দেশগুলো ছাড়া কারও যেন মাথা ব্যথা নেই এ বিষয়ে।

বিশেষ করে শিল্পোন্নত দেশগুলো বরাবরই পরিবেশ দূষণের কারণে জলবায়ু পরিবর্তন ও এর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এর মারাত্মক পরিণতি ভোগ করতে হচ্ছে সমুদ্র ও নদী পাড়ের উন্নয়নশীল ও দরিদ্র দেশগুলোকে।

জলবায়ুর বিরূপ প্রতিক্রিয়া যুক্তরাষ্ট্র, যুকরাজ্য, চীন ও জাপানের মতো দেশগুলোতে পরিলক্ষিত হলেও আর্থিক সক্ষমতায় সেই দুর্যোগ শিগগির কাটিয়ে উঠতে পারে শিল্পোন্নত দেশগুলো।

কিন্তু বাংলাদেশ, ফিলিপাইন, সোমালিয়া, ইন্দোনেশিয়া কিংবা মালদ্বীপের মতো দেশগুলোকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের অভিশাপ বয়ে বেড়াতে হয় বছরের পর বছর।

গত বছর জাপানের ফুকুশিমা বিপর্যয়, এ বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রে হ্যারিকেন স্যান্ডি তাণ্ডব যেমন পরিলক্ষিত হয়েছে, তেমনি সাম্প্রতিককালে অপেক্ষাকৃত উন্নয়নশীল ফিলিপাইনে হাইয়ান ও দারিদ্র্যপীড়িত সোমালিয়ায় মৌসুমি ঝড়ের তাণ্ডব লক্ষ্য করা গেছে।

ফুকুশিমা বা স্যান্ডি বিপর্যয় জাপান বা যুক্তরাষ্ট্রের মতো অর্থনীতি সমৃদ্ধ দেশগুলো অনেকাংশে কাটিয়ে উঠলেও গত বৃহস্পতিবার ফিলিপাইনে আঘাত হানা হাইয়ান কিংবা রোববার সোমালিয়ায় আঘাত হানা মৌসুমি ঝড়ের অভিশাপ ফিলিপিনো বা সোমালিরা কবে কাটিয়ে উঠতে পারবে সেটা সবারই অজানা।

যুক্তরাষ্ট্র, চীন কিংবা শিল্পোন্নত দেশগুলো এই ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, কিংবা ভূমিধসকে প্রকৃতি সৃষ্ট বিপর্যয় আখ্যা দিয়ে বেঁচে যাওয়ার চেষ্টা করলেও ফিলিপিনো, বাংলাদেশি কিংবা সোমালিরাই বোঝে এসব বিপর্যয় প্রকৃতি প্রদত্ত নাকি মনুষ্যসৃষ্ট।

বিজ্ঞানীরা পরিবেশ দূষণের স্বরূপ তুলে ধরে অতীতের সঙ্গে সাম্প্রতিককালের পরিবেশের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার তুলনামূলক বিশ্লেষণ তুলে ধরলেও শিল্পোন্নয়নে শীর্ষে থাকার প্রতিযোগিতায় যেকোনো সতর্কতাকেই অবজ্ঞাভরে এড়িয়ে যাচ্ছে পরিবেশ দূষণের জন্য দায়ী মোড়ল রাষ্ট্রগুলো। একের পর এক গড়ে তুলছে পরিবেশ দূষণের জন্য দায়ী শিল্প কারখানা। পাহাড়, গাছালি ও বনাঞ্চল উজাড় করে বসানো হচ্ছে মানব বসতি ও কারখানা, আর তৈরি করা হচ্ছে পরিবেশ ও মানববিধ্বংসী  অস্ত্র-সরঞ্জাম।

উল্টো পরিবেশ বিপর্যয় ‘ঠেকানোর’ জন্য আরও উন্নততর প্রযুক্তি আবিষ্কার করে চলেছে তারা। কিন্তু এই প্রযুক্তি বা প্রতিরোধ কৌশল যে প্রকৃতির কাছে তুচ্ছ তা ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র, জাপান হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে।

কিন্তু কথা যাই হোক, ফিলিপাইনে হাইয়ানের তাণ্ডবে ১০ হাজারোধিক মানুষের প্রাণহানি এবং সর্বশেষ সোমালিয়ায় মোসুমি ঝড়ের অভিশাপে শতাধিক মানুষের প্রাণহানির ঘটনায় বিশ্বব্যাপী আবারও পরিবেশ দূষণ বন্ধের দাবি জোরালো হয়ে উঠছে। জোরালো হয়ে উঠছে, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কর্মসূচি বাস্তবায়নে দাবি।

পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, কেবল সেমিনার-সিম্পোজিয়ামেই যদি পরিবেশ দূষণ বন্ধে কর্মসূচি চলে তবে অদূর ভবিষ্যতেই উন্নত রাষ্ট্রগুলোতে প্রলয় পরবর্তী দুর্যোগ দেখা দেবে, কিংবা আরও কোনো ভয়ংকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।

তখন আর ইচ্ছে করলেও মানব সভ্যতাকে বাঁচিয়ে রাখা যাবে না। পরিবেশ বিশ্ববাসীর প্রতি এতোটাই প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠবে যে, এখন প্রতি সপ্তাহে, প্রতি মাসে ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের আঘাত হানার খবর পাওয়া গেলেও, তখন প্রতি মুহূর্তে পরিবেশের প্রতিশোধের শিকার হতে হবে।

পরিবেশ বিজ্ঞানীরা এজন্য আবারও বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি দূষণ বন্ধ ও পরিবেশকে আগের রূপ ফিরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৩
এইচএ/বিএসকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।