ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

বিতর্কিত দ্বীপপুঞ্জে চীনের বিতর্কিত পদক্ষেপ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৩
বিতর্কিত দ্বীপপুঞ্জে চীনের বিতর্কিত পদক্ষেপ

ঢাকা: পূর্ব চীন সাগরের বিরোধপূর্ণ এলাকায় নিয়ে বিতর্কের আগুন নতুন করে ঘি ঢেলে দিল চীন। চীন ওই এলাকাকে নতুন আকাশ প্রতিরক্ষা সনাক্তকরণ অঞ্চল (এয়ার ডিফেন্স আইডেন্টিফিকেশন জোন) হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে।



বৃহস্পতিবার রাডার ফাঁকি দিতে সক্ষম মানববিহীন বিমান (ড্রোন) সফলভাবে প্রথমবারের মতো উড্ডয়ন করার পরেই এমন পদক্ষেপের ঘোষণা দিল বেইজিং।

চীন জানিয়েছে, শনিবার বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টা থেকেই এ আকাশ প্রতিরক্ষা সনাক্তকরণ অঞ্চল কার্যকর হবে।

চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ অঞ্চলে বিমান প্রবেশ করতে হলে অবশ্যই ‘জরুরি প্রতিরক্ষা বিধি’ মানতে হবে।

চীনের নির্ধারিত আকাশ প্রতিরক্ষা সীমার ওই অঞ্চল দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের খুব কাছাকাছি অবস্থিত।
চীন ও জাপান উভয় দেশই এ অঞ্চলকে নিজেদের বলে দাবি করে আসছে। এ তালিকায় যুক্ত আছে তাইওয়ানের নামও। এ নিয়ে সংকটে ভুগছে পূর্ব এশিয়া।

চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইয়াং ইউজুন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে জানিয়েছেন, নিজেদের সার্বভৌমত্ব রক্ষা, ওই অঞ্চল ও আকাশ সীমার নিরাপত্তায় বিমান উড্ডয়নের ব্যাপারে তদারকি করা হবে।

তিনি বলেন, এটা কোনো দেশের বিরুদ্ধে বা কোনো দেশকে লক্ষ্য করে করা হয়নি। চীন সবসময়ই আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে আকাশপথে উড্ডয়নের স্বাধীনতাকে সম্মান করে।

তিনি আরও বলেন, ওই অঞ্চলের আকাশ সীমার মধ্যে আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্সগুলোর বিমান উড্ডয়নে এর কোনো প্রভাব পড়বে না।

বিতর্কিত ওই দ্বীপপুঞ্জ চীনাদের কাছে সেনকাকু ও জাপানিদের কাছে দিয়াওউ নামে পরিচিত।
জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, চীনের এই একতরফা সিদ্ধান্ত সেনকাকুকে ঘিরে পরিস্থিতিকে আরও অশান্ত করে তুলবে।

তাইওয়ানও বিতর্কিত দ্বীপপুঞ্জকে নিজেদের বলে দাবি করে। তারা চীনের নতুন পদক্ষেপকে প্রত্যাখ্যান করে জানিয়েছে, জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে সামরিক বাহিনী উপযুক্ত পদক্ষেপ নেবে।

এদিকে চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বেতার যোগাযোগ ব্যবস্থা নিরবচ্ছিন্ন রাখতে অবশ্যই উড্ডয়নের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানাতে হবে। সকল নিয়ম মেনে সময়মতো প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে।

২০১২ সালে জাপান তার নাগরিকদের কাছ থেকে ওই এলাকার তিনটি দ্বীপ কিনে নেয়। এ ঘটনায় চীনে জাপানি দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ করেন চীনারা। অনেক উগ্র চীনা জাতীয়বাদী জাপানি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ওপর হামলা চালায়।

এ বছরের সেপ্টেম্বরে জাপান জানায়, তাদের সীমায় কোনো অপরিচিত বিমান ঢুকলে গুলিবর্ষণ করা হবে। এর আগে চীনের একটি ড্রোন (চালকবিহীন বিমান) ওই অঞ্চলে চক্কর মারে।

এর বিপরীতে চীন জানিয়েছে, জাপানের গুলিবর্ষণের যে কোনো ধরনের চেষ্টাকেই যুদ্ধপ্রচেষ্টা বলে গণ্য করা হবে।
গত মাসে জাপানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইতসুনোরি ওনোদেরা অভিযোগ করে বলেন, চীন সাগরের বিরোধপূর্ণ দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে চীনের আচরণের কারণে ওই অঞ্চলের শান্তি ঝুঁকির মুখে পড়বে।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, সেনকাকু দ্বীপপুঞ্জের জলসীমায় চীনের অনুপ্রবেশ শান্তি প্রতিষ্ঠা বিঘ্নিত ও জরুরি পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে।

এর আগে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে বলেন, চীনের মোকাবিলায় জাপান আরও কঠিন সিদ্ধান্ত নেবে।
এ বছর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে দ্বীপগুলো জাপান চুরি করেছে বলে অভিযোগ করে চীন। এর প্রত্যুত্তরে জাপান বলে, দ্বীপ নিয়ে চীন মিথ্যাচার করছে। আর দু’দেশকে ঠান্ডা মাথায় এ সংকট নিরসনের আহ্বান জানায় যুক্তরাষ্ট্র।

এখন এই ইস্যু দু’দেশের জাতীয়তাবাদী আবেগে পরিণত হয়েছে। আর এক্ষেত্রে যে কোনো পক্ষেরই ছাড় দেওয়াও ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে।

আটটি ছোট দ্বীপ নিয়ে সেনকাকু বা দিয়াওউ দ্বীপপুঞ্জ গঠিত। ধারণা করা হয়, এ এলাকায় সাগর তলদেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ রয়েছে।

আর এ অমূল্য সম্পদের জন্যই কোনো দেশই এ এলাকার মালিকান ছাড়তে রাজি না।

জাপানের দাবি করে, চীনকে পরাজিত করে তাইওয়ানে উপনিবেশ  স্থাপনের মাধ্যমে ১৮৯৫ সালের জানুয়ারিতে তারা দ্বীপ এলাকাটির মালিকানা অর্জন করেছে। সে সময় থেকেই ওই এলাকা ‘নানসেই শোতো’  দ্বীপপুঞ্জের অংশ।

এদিকে চীনের দাবি করে, ওই এলাকাটি প্রাচীনকাল থেকেই তাদের ভূখণ্ডের অংশ। জাপান ১৮৯৫ সালে অবৈধভাবে এলাকাটি দখল করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর চীন ওই ভূখণ্ড পুনরুদ্ধার করে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৩

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।