ঢাকা: সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভায় চার দিনব্যাপী দীর্ঘ আলোচনার পর তেহরানের পরমাণু কর্মসূচি বিষয়ে ঐতিহাসিক সমঝোতা চুক্তিতে পৌঁছেছে ইরান ও বিশ্বশক্তি ৫+১ (যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন, রাশিয়া ও জার্মানি।
সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরির উদ্দেশে আর ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ করতে পারবে না বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি।
অন্যদিকে ইরান বলেছে, সমঝোতা চুক্তি হলেও বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি চালিয়ে যাবে তেহরান।
জেনেভার সফল সংলাপের পর ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, পরমাণু অস্ত্র তৈরির জন্য নয়, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি চালিয়ে যাবে। এই অধিকার ইরানকে দিতে হবে।
এর আগে, অনেক তর্ক-বিতর্ক, জল্পনা-কল্পা ও দীর্ঘ অপেক্ষার পর সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় চার দিনব্যাপী আলোচনার শেষে রোববার সকালে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি বিষয়ে ঐতিহাসিক সমঝোতা চুক্তিতে পৌঁছে বিশ্বশক্তি ৫+১ (যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন, রাশিয়া ও জার্মানি)।
সংস্কারপন্থি হাসান রৌহানি ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর গত ২০ নভেম্বর তৃতীয় দফা আলোচনায় বসেন পাওয়ার সিক্স ও তেহরানের কর্মকর্তারা।
চার দিন ধরে দীর্ঘ সমঝোতা সংলাপের পর অবশেষে এ বিষয়ে সমঝোতা চুক্তিতে পৌঁছে বিশ্বশক্তি ৫+১ ও ইরান। তবে সমঝোতার বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে বিস্তারিত কিছু জানায়নি কোনো পক্ষই।
রোববার আন্তর্জাতিক সময় ভোর দুইটায় নিজের টুইটার বার্তায় ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাবেদ জারিফ জানান, আমরা একটি চুক্তিতে পৌঁছেছি।
চুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেন ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী লরেন্ট ফ্যাবিয়াসও।
জারিফের টুইটের কয়েক মিনিট আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান ক্যাথেরিন অ্যাশটনের মুখপাত্র মাইকেল ম্যান জানান, ইরান ও বিশ্বশক্তি ঐতিহাসিক সমঝোতা চুক্তিতে পৌঁছাতে সমর্থ হয়েছে।
এর আগে, শনিবার সন্ধ্যায় ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাচি জানিয়েছিলেন, ৯৮ শতাংশ খসড়া চুক্তিতে সম্মত হয়েছে বিশ্বশক্তি, তবে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য যেকোনো মূল্যে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের অধিকার চায় ইরান।
বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন, রাশিয়া ও জার্মানির কর্তারা চাইছেন, ইরান তার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থগিত করবে। তেহরান সেটা মেনে চললে তাদের ওপর থেকে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেওয়া হবে। অন্যদিকে, ইরানও চাইছে অন্তত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য যাতে তারা ইউরেনিয়াম সৃমদ্ধকরণের সুযোগ পান সে অধিকার দিতে হবে।
জেনেভার আলোচনায় উপস্থিত থাকা বিবিসির ইরানি প্রতিনিধি জেমস রেনল্ডস জানান, বিশ্বশক্তি ও ইরানের সঙ্গে এই সমঝোতা সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতা।
ইরানি ও পশ্চিমা কূটনীতিকরা শিগগির এ ব্যাপারে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
পরমাণু অস্ত্র তৈরির জন্য ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে- পশ্চিমাদের এমন অভিযোগের পাল্টা জবাবে তেহরানের পক্ষ থেকে জোর দিয়ে বলা হচ্ছে, পরমাণু অস্ত্র তৈরি নয়, বিদ্যুৎ উৎপাদন করতেই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে ইরান এবং সেই অধিকার তাদের দিতে হবে।
বুধবার শুরু হওয়া এই আলোচনা শুক্রবারই শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু সমঝোতায় পৌঁছানোর আশায় আলোচনার মেয়াদ আরও দুই দিন বাড়ানো হয়।
দুই সপ্তাহের ব্যবধানে দ্বিতীয় দফার এ আলোচনায় যোগ দেন যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন, রাশিয়া ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী। শুক্রবার ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম হেগ, ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী লরেন্ট ফ্যাবিয়াস, রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্জেই ল্যাভরভ, জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী গুইডো ওয়েস্টারভেলে জেনেভায় পৌঁছেন। আর শনিবার আলোচনায় যোগ দেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং য়ি। চুক্তিতে পৌঁছানোর শেষ চেষ্টা হিসেবে এদিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে জেনেভায় উড়ে আসেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিও।
এর আগে, এ মাসের শুরুর দিকে সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভায় তিন দিনব্যাপী আলোচনা করে বিশ্বশক্তি ও ইরান। ওই বৈঠকের সময় আশা করা হয়েছিল, পরমাণু ইস্যু নিয়ে চুক্তি হতে পারে।
কিন্তু অজ্ঞাত কারণে অবশেষে চুক্তি ছাড়াই সেই আলোচনা শেষ হয়। তবে আলোচনায় বেশ অগ্রগতি হয়েছে বলে দুই পক্ষ থেকে বলা হয়।
ওই সময় জানা যায়, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা শিথিলের বিনিময়ে পরমাণু কর্মসূচিতে ছাড় দিতে রাজি রয়েছে ইরান।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০১৩