ঢাকা: ভারতের মুম্বাইয়ে সন্ত্রাসী হামলার পাঁচ বছর পর এখন আরও শক্তিশালী লস্কর-ই-তৈয়বা। আর এখনও ভারতবিরোধী হিসেবে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী ও আইএসআইয়ের ‘প্রিয়ভাজন’ জঙ্গি গোষ্ঠীটি।
যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের ধারণা এমনই।
সম্প্রতি প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে এক সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইয়ের সাবেক বিশ্লেষক ব্রুস রাইডেল বলেছেন, লস্কর-ই-তৈয়বা (এলইটি) আগের চেয়ে আজকে অনেক শক্তিশালী। এটি পাকিস্তানে নিরাপদ ঘাঁটি গড়ে তুলেছে, উপসাগরে তহবিল সংগ্রহে নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে। যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি অভিবাসীদের নেটওয়ার্কভুক্ত করছে। এটি ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্যদের জন্য বড় ধরনের হুমকি।
মার্কিন প্রশাসনের সাবেক কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞেরা জোর দিয়ে বলেছেন, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসএস) তস্কর-ই-তৈয়বাকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রথম মেয়াদে হোয়াইট হাউজের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের জ্যেষ্ঠ পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা আনিশ গোয়েল বলেন, ‘আমার জানামতে, এলইটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গুরুত্বপূর্ণভাবে দুর্বল হয়ে যায়নি । আর তাই ওই গোষ্ঠীটি সন্দেহাতীতভাবে ভারতের জন্য উল্লেখযোগ্যভাবে হুমকিজনক। ’
তিনি জানান, ঐতিহাসিকভাবে গোষ্ঠীটির দৃষ্টি ভারতের ওপর থাকায় সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের ওপর হুমকি তত বেশি নয়। তবে পাকিস্তানে একই সময়ে অনেক জঙ্গি গোষ্ঠী একে অপরের সঙ্গে কাজ করে, তাই এলইটিকে বা এ অঞ্চলের অন্য কোনো জঙ্গি গোষ্ঠীকে অবজ্ঞা করতে পারে না যুক্তরাষ্ট্র।
প্রকাশিতব্য ‘কল ফর ট্রান্সিশনাল জিহাদ: লস্কর-ই-তৈয়বা ১৯৮৫-২০১৪’ বইয়ের লেখক আরিফ জামাল এলইটিকে জামায়াত-উদ-দাওয়া (জেইউডি) আরিফ জামালের একটি সশস্ত্র শাখা হিসেবে অভিহিত করেছেন । এ পাকিস্তানি লেখক বলেছেন, গত পাঁচ বছরে খুবই শক্তিশালী হয়েছে।
তিনি পিটিআইকে বলেছেন, জেইউডি বা এলইটি আক্ষরিকভাবে বিশ্বশান্তির জন্য বড় হুমকি। ৫ লাখের বেশি সশস্ত্র ও প্রশিক্ষিত সদস্য নিয়ে ইতিহাসে এটি বৃহত্তম সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর একটি।
বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, এলইটি ও গোষ্ঠীটির নেতাদের বিরুদ্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার পরিবর্তে পাকিস্তানের সরকারি প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে আইএসআই সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে সমর্থন দেওয়া অব্যাহত রেখেছে।
রাইডেল বলেছেন, এলইটি এখনও আইএসআইয়ের প্রিয়ভাজন গোষ্ঠী। আসিফ আলি জারদারির সরকারের চেয়ে নওয়াজ শরিফের সরকার এলইটির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে অনাগ্রহী।
২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর ভারতের মুম্বাইয়ের ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা চালায় লস্কর-ই-তৈয়বা। ২৬ থেকে ২৯ নভেম্বর চলা ওই হামলায় কমপক্ষে ১৫৬ জন নিহত হন। ভারতী যৌথ বাহিনীর অভিযানে হামলাকারীদের একজন বাদে সবাই নিহত হন। বেঁছে থাকা আজমল কাসাবকে গত বছর ফাঁসি দেয় ভারত সরকার।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৩