ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ওয়েব যুদ্ধে চীন-যুক্তরাষ্ট্র

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৮ ঘণ্টা, মে ২০, ২০১৪
ওয়েব যুদ্ধে চীন-যুক্তরাষ্ট্র

ঢাকা: পরস্পরের বিরুদ্ধে ‘ওয়েব ওয়ার’ এ জড়ালো পৃথিবীর প্রধান দুই অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী চীন ও যুক্তরাষ্ট্র। এরই ধারাবাহিকতায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল সাইবার এসপিওনাজের মাধ্যমে মার্কিন শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে তথ্য চুরির দায়ে ৫ চীনা সামরিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ গঠন ঘিরে চীন-মার্কিন বিরোধ এখন তুঙ্গে।



সোমবার ওই ৫ চীন‍া সামরিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সাইবার গুপ্তচরবৃত্তির চার্জ গঠন করে যুক্তরাষ্ট্র। জবাবে কড়া প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছে বেইজিং। পাশাপাশি নিজের‍াই মার্কিন সাইবার হ্যাকিংয়ের শিকার বলে যুক্তরাষ্ট্রকে পাল্টা দোষারোপ করেছে চীন।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, চীন কখনই এ ধরনের সাইবার হ্যাকিংয়ের সঙ্গে জড়িত নয়। পাশাপাশি এ ধরনের মিথ্যা অভিযোগ দুই দেশের সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছে চীন। ইতোমধ্যেই বেইজিংয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে কড়া ভাষা শুনিয়েছে চীন।

তবে নিজেদের অবস্থানে যথারীতি অটল যুক্তরাষ্ট্র। তাদের আইন কর্মকর্তারা বলছেন অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ৫টি মার্কিন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এবং একটি শ্রমিক ইউনিয়নের থেকে সাইবার হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে বাণিজ্যিক গোপন তথ্য হাতিয়ে নিয়েছেন এ ব্যাপারে সুষ্পষ্ট প্রমাণ আছে।

রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে সাইবার হ্যাকিংয়ের অভিযোগে এ ধরনের চার্জ গঠনের ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এই প্রথম। উভয় দেশের মধ্যে এ ধরনের অভূতপূর্ব লড়াইকে ওয়েব ওয়ার নামেই অভিহিত করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।

মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল এরিক হোল্ডার জানিয়েছেন, চীনা সামরিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে একজন গ্রান্ড জুরি এ চার্জ গঠন করেছেন। চীনা ওয়েব হ্যাকিংয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্টিংহাউজ ইলেক্ট্রিক, ইউএস স্টিল, আলকোয়া ইনকরপোরেট, অ্যালেহনি টেকনোলজিস, সোলার ওয়ার্ল্ড এবং ইউএস স্টিল ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তারা হলেন ওয়াং ডোং, সুন কাইলিয়াং, ওয়েন সিনয়ু, হুয়াং ঝেনউ, এবং গু চুনহাই। তারা সবাই চীনের সামরিক বাহিনী পিপলস লিবারেশন আর্মির ৬১৩৯৮ ইউনিটের সদস্য।

মার্কিন তদন্ত সংস্থা এফবিআই জানিয়েছে ২০০৬ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত চলা চীনা সাইবার হ্যাকিংয়ে ভুক্তভোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপক ‍আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। পাশাপাশি চীনা সামরিক বাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতায় এ ধরনের আরও অনেক ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি তাদের

এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের জাতীয় নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান জন কার্লিন বলেন, যখন মার্কিন নাগরিকরা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য তাদের ব্যবসায়িক উদ্যোগে নতুন প্রযুক্তি, কলাকৌশল উদ্ভাবনের জন্য প্রাণান্ত পরিশ্রম করছেন ঠিক তখন চীনের এই সামরিক ইউনিটের কর্মকর্তারা তাদের সাংহাই অফিসে বসে আমাদের পরিশ্রমের ফল চুরি করছেন।

তবে অভিযোগ উড়িয়ে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অভিযোগকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিহিত করেছেন। উল্টো চীনে সাইবার গুপ্তচরবৃত্তি পরিচালনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে পাল্টা অভিযোগ করেছেন চীনা মুখপাত্র।

পাশাপাশি এর প্রতিবাদে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সাইবার ওয়ার্কিং গ্রুপের কার্যক্রম স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেইজিং। দুই দেশের মধ্যে সাইবার সহযোগিতার লক্ষ্যে গত এপ্রিলে গঠন করা হয়েছিলো এ সংস্থা।

সাইবার সন্ত্রাস ও গুপ্তচরবৃত্তি প্রতিরোধের জন্য যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি তাদের তৎপরতা ব্যাপক বৃদ্ধি করেছে। কয়েক বছরের মধ্যে পেন্টাগন সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধে তৎপরতা তিনগুণ বৃদ্ধি করবে বলে গত মার্চে ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী চাক হেগেল।

পাশাপাশি সাইবার আক্রমণকে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও অর্থনীতির জন্য প্রকৃত হুমকি হিসেবে উল্লেখ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৮ ঘণ্টা, মে ২০, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।