ঢাকা: ভারতের পঞ্চদশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সোমবার সন্ধ্যায় শপথ নিচ্ছেন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতা নরেন্দ্র মোদী। অনেক অভিযোগ এবং এসব প্রেক্ষিতে গুঞ্জন-জল্পনা-কল্পনার পর হিন্দুত্ববাদী মোদীই শেষ পর্যন্ত বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রটির প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন।
সন্ধ্যায় নয়াদিল্লিতে প্রেসিডেন্ট ভবনের ফোরকোর্টে অনুষ্ঠেয় শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন দেশি-বিদেশি তিন হাজারেরও বেশি অতিথি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে মোদীর শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
মোদীর সঙ্গেই শপথ নেবেন তার নবগঠিত সরকারের মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যরা। কারা নতুন প্রধানমন্ত্রীর মন্ত্রিসভায় থাকছেন এ নিয়ে অনেক গুঞ্জন হলেও রোববার রাতে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, আকারে ছোট মন্ত্রিসভার পক্ষেই মোদী। এছাড়া, কারা কারা শপথ নিচ্ছেন সে তালিকা সকালেই প্রেসিডেন্ট ভবনে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
প্রথা অনুযায়ী দরবার হলেই শপথ হওয়ার কথা। কিন্তু চন্দ্রশেখর এবং অটলবিহারী বাজপেয়ীর মতো মোদীর ইচ্ছানুযায়ী তার শপথ হচ্ছে প্রেসিডেন্ট ভবনের ফোরকোর্টেই। শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন তিন হাজারেরও বেশি দেশি-বিদেশি অতিথি। প্রেসিডেন্ট ভবনে একসঙ্গে এত অতিথি সমাগম এর আগে হয়নি। দরবার হলে এতজনের জায়গা হবে না বলেই ফোরকোর্ট নির্ধারণ করা হয়েছে। আর এখানেই নতুন প্রধানমন্ত্রীকে শপথবাক্য পাঠ করাবেন প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি।
দেশি অতিথিদের মধ্যে শপথ অনুষ্ঠানে থাকছেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী, ভাইস প্রেসিডেন্ট রাহুল গান্ধীসহ দলটির শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা। উপস্থিত থাকছেন সাবেক কয়েকজন প্রেসিডেন্ট-প্রধানমন্ত্রীও। বিদেশি অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত থাকছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকেও। এছাড়া, আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসেকেও।
কংগ্রেসের নেতৃত্বাধী গত ইউপিএ জোট সরকারে মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন ৭১ জন। রোববার রাতে দিল্লির গুজরাট ভবনে মোদীর কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, সরকারের মন্ত্রিসভার বহর বড় করতে চাইছেন না প্রধানমন্ত্রী। মোদী চাইছেন আকারে ছোট অথচ দক্ষ মন্ত্রিসভা। সে ক্ষেত্রে নতুন সরকারে মন্ত্রীদের সংখ্যা ৩০-৩৫ সীমাবদ্ধ থাকতে পারে।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রী মোদীর মন্ত্রিসভায় কারা থাকছেন- এ নিয়ে অনেক গুঞ্জন চললেও শপথের আগের দিন রোববারও চূড়ান্ত গোপনীয়তা বজায় রেখেছে খোদ বিজেপি। সংবাদ মাধ্যমগুলো জানতে চাইলেও বিজেপি নেতাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, খোদ মোদী এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) শীর্ষ নেতারা ছাড়া এখনও কেউ জানেন না কারা থাকছেন নতুন মন্ত্রিসভায়।
তবে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া খবরে জানা গেছে, মোদীর মন্ত্রিসভায় স্থান হতে পারে সুষমা স্বরাজ, নিতিন গড়করি, বেঙ্কাইয়া নাইডু, রবিশঙ্কর প্রসাদ, অরুণ জেটলি ও পীযূষ গোয়েলের। স্পিকার হতে পারেন সুমিত্রা মহাজন। তবে লালকৃষ্ণ আদভানি ও মুরলি মনোহর যোশীরা নতুন সরকারের কোন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করছেন সেটি এখনও স্পষ্ট নয়।
এছাড়া, মোদীর ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিত বিজেপির সাধারণ সম্পাদক অমিত শাহ কোনো দফতরে উঠবেন কিনা তাও অজানা খোদ অমিতের কাছেই।
তবে, রোববার দিনভর দল ও জোটের শরিক নেতাদের সঙ্গে গুজরাট ভবনে দফায় দফায় বৈঠক করেন মোদী। আরএসএসের কেন্দ্রীয় কার্যালয় কেশব কুঞ্জেও ছিল নেতাকর্মীদের ভিড়। উগ্রপন্থি শিবসেনা, টিডিপি, এলজেপির মতো শরিক দলের নেতালাও কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় স্থান পেতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।
তবে গুঞ্জন আর জল্পনা-কল্পনা যাই উঠুক, মোদীর শপথ অনুষ্ঠানেই বোঝা যাবে আগামী পাঁচ বছরের জন্য কারা বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১০১২ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০১৪