ঢাকা: গান লিখেছেন থাইল্যান্ডের সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল প্রায়ুথ চ্যান-ওচা! জনগণের মান ভাঙানোর জন্য তার লেখা ‘থাইল্যান্ডে সুখের প্রত্যাবর্তন’ শীর্ষক গানটি প্রায়ুথ গাইয়েছেন রাজকীয় সেনাবাহিনীরই ব্যান্ডকে দিয়ে। নিজের লেখা আর সেনাবাহিনীর সুরারোপ ও সংগীতের এ গানটি প্রকাশও করেছেন সেনা ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইউটিউবে।
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, জনগণের প্রতি নিজের কর্তব্য ও অনুভূতি প্রকাশ করতেই সেনাপ্রধান এ দেশপ্রেমের গান লিখেছেন। সেনাপ্রধানের এ অভিনব প্রচেষ্টা অবশ্য মিশ্র প্রতিক্রিয়া পেয়েছে ইউটিউব ও অন্যান্য সাইটগুলোর দর্শক-শ্রোতার পক্ষ থেকে।
সংবাদ মাধ্যমগুলো বলছে, অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ কর্তৃত্ব গ্রহণ করে জনগণের চোখের বিষ হয়ে গেছে থাই সেনাবাহিনী। জনতার চক্ষুশূলে সার্বক্ষণিক বিদ্ধ হয়ে রয়েছেন সেনাপ্রধান প্রায়ুথ। ক’দিন আগেও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রার পেউ থাই পার্টি এবং অভিজিৎ ভেজাজিভা-সুথেপ থাউগসুবানের ডেমোক্রেট পার্টি রাস্তায় মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে সহিংসতা চালালেও এখন উভয়পক্ষই সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছে।
এই চক্ষশূলে আটকা পড়ে বসে নেই সেনাপ্রধান প্রায়ুথ। সার্বক্ষণিক হিসাব কষছেন। সে হিসাব থেকেই জনগণের মান ভাঙাতে অভিনব পথ বেছে নিয়েছেন তিনি। লিখেছেন দেশপ্রেমের গান। আর গাইয়েছেন সেনা ব্যান্ডকে দিয়ে।
জনগণের মন ভোলাতে প্রায়ুথের এ প্রচেষ্টা সফল হবে কিনা তা সময়ই বলে দেবে। তবে, প্রকাশের পর সেনাবাহিনীর এ গানটি বেশ সাড়া জাগিয়েছে বলেই দাবি করা হচ্ছে সংবাদ মাধ্যমগুলোর পক্ষ থেকে।
‘থাইল্যান্ডে সুখের প্রত্যাবর্তন’ শীর্ষক গানটির কয়েকটি লাইনে থাই সেনাপ্রধান লিখেছেন, ‘আমরা আমাদের হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে তোমাদের (জনগণ) যত্ন নিতে চাই এবং নিরাপত্তা দিতে চাই’।
সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে, গত শুক্রবার (৬ জুন) নির্মাণ শেষ করার পর ভিডিওটি ইউটিউবে প্রকাশ করা হয়। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত সেনাবাহিনীর মন ভোলানোর এ গানটি ইউটিউব ও অন্য সাইট মিলিয়ে দু’লাখেরও বেশি বার প্রদর্শিত হয়ে গেছে।
ওয়েবসাইটে প্রকাশের এ গান সম্পর্কে সেনাবাহিনীর ব্যান্ডের প্রধান কর্নেল ক্রিসাদা সারিকা সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, গানটি লেখার পর সেনাপ্রধান আমাকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। যাওয়ার পর তিনি নিজের হাতের লেখা একটি গান দেখালেন আমায়। গানের কথাগুলো আমাকে আপ্লুত করেছে।
কর্নেল ক্রিসাদা বলেন, প্রায়ুথ ইচ্ছে করেন, তিনি এমন গান লিখবেন যেটা জনগণের প্রতি তার অনুভূতি প্রকাশ করবে…তার ইচ্ছে জনগণ গানটি শুনবে এবং পরস্পরকে ভালোবাসতে শুরু করবে।
প্রায়ুথের লেখা এবং সেনাবাহিনীর গাওয়া দেশপ্রেমের এ গানকে কেউ কেউ সাধুবাদ জানালেও এখনও সেভাবে গানটি জনপ্রিয়তা পায়নি।
সেনা অভ্যুত্থানবিরোধী একজন ব্যক্তি ইউটিউবে প্রকাশিত ভিডিও’র মন্তব্যে লিখেছেন, একপক্ষকে (সেনাবাহিনী) খুশি করতে আরেক পক্ষকে (জনগণ) হয়রানি মেনে নেওয়া যায় না।
সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে, কেবল এ গানই নয়, সেনাঅভ্যুত্থানের ঘা সারাতে ইতোমধ্যে রাজধানী ব্যাংককের বেশ কিছু এলাকায় কনসার্টের আয়োজন করে দেশপ্রেমী সংগীত পরিবেশনও করেছে সেনাবাহিনী।
উল্লেখ করা যেতে পারে, রাজনৈতিক অচলাবস্থার মুখে গত ২২ মে পেউ থাই পার্টি সমর্থিত অন্তর্বর্তী সরকারকে হটিয়ে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী।
এ অভ্যুত্থানের সমালোচনার জবাবে প্রতি সপ্তাহে জাতির উদ্দেশে দেওয়া টেলিভিশন ভাষনে সেনাপ্রধান প্রায়ুথ দাবি করছেন, মাসের পর মাস রাষ্ট্রে অচলাবস্থা বিরাজ করায় এবং প্রায় ৩০ জন মানুষ শুধু রাজনৈতিক সহিংসতার বলি হওয়ায় সেনাবাহিনী ক্ষমতা নিতে বাধ্য হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১০৫ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০১৪