ঢাকা: মায়ানমারে একটি সাপ্তাহিকের চার সাংবাদিকের প্রত্যেককে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে সে দেশের একটি আদালত।
সামরিক সরকার রাসায়নিক অস্ত্র তৈরির জন্য কৃষকের জমি দখল করে কারখানা তৈরি করেছে এ খবর প্রকাশের অভিযোগে তাদের শনিবার এ সাজা দেওয়া হয়।
সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, দ্য অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্টের অধীনে সাংবাদিকদের এই কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
খবরে জানা গেছে, সাপ্তাহিক ইউনিটি জার্নাল নিউজপেপার নামে একটি সাপ্তাহিকীতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়, সামরিক জান্তা রাসায়নিক অস্ত্র তৈরির জন্য মধ্য ম্যাগাউ জেলায় কৃষকদের কাছ থেকে তিন হাজার একর জমি দখল করে কারখানা তৈরি করেছে।
এদিকে, বিচারক চার সাংবাদিককে সাজা দেওয়ার পর অনেক সাংবাদিক পরিবারের সদস্যদের কাঁদতে দেখা যায়। এক সাংবাদিকের মা ও বোনকে আদালতের বাইরে চিৎকার করে কাঁদতে দেখা যায়।
সাজা পাওয়া এক সাংবাদিক ইয়া জার উ-এর মা খিন মার চো বলেন, আমি চিৎকার করে বলছি, এই রায় বিচারকের নয়। এই রায় সরকারের কাছ থেকে এসেছে।
মায়ানমারের ঘটনাবলি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ডেভিড ম্যাথিসন বলেন, মামলায় পুরোপুরি রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ হয়েছে। এ ঘটনা আগের সেই অন্ধকার সময়ের সামরিক জান্তার নিয়ম-কানুনকেই মনে করিয়ে দেয়।
অপরদিকে, বিচারকের সাজা ঘোষণার পর সাজাপ্রাপ্ত সাংবাদিকদের কাছাকাছি একটি কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
এ ঘটনার পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া সম্পর্কে আইন বিশেষজ্ঞ ওয়া উইন মাঙ বলেন, এ মামলায় আপিল করতে প্রায় তিন মাস সময় লেগে যাবে।
এ সময় সাংবাদিক ইয়া জার উ-এর মা খিন মার চো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আবেদন জানিয়ে বলেন, বার্মার সরকারের ওপর আমার মোটেও আস্থা নেই। আমি পাশ্চাত্যের কাছ থেকে এ বিষয়ে চাপ দেওয়ার জন্য দাবি করছে। আমি মনে করি, পাশ্চাত্যের দেশগুলো যদি বার্মা সরকারকে চাপ দেয়, তাহলে আমার ছেলে মুক্ত হতে পারবে।
২০১১ সাল থেকে মায়ানমারে রাজনৈতিক সংস্কার শুরু হলে পাশ্চাত্যের দেশগুলো সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর জোর দেয়।
কিন্তু শনিবার রাজনৈতিক কারণে চার সাংবাদিককে সাজা দেওয়ায় পাশ্চাত্যের দেশগুলো নীরব ভূমিকা পালন করছে বলে উপস্থিত সাংবাদিক পরিবার থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।
এদিকে, শনিবার সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সাজা ঘোষণার আগে রেঙ্গুনে অবস্থিত ব্রিটিশ দূতাবাসের এক মুখপাত্র সংবাদমাধ্যমকে জানান, রায় ঘোষণার ব্যাপারে কোনো বিবৃতি দেওয়ার চিন্তা দূতাবাসের নেই।
আদালতে রায় ঘোষণার পর ব্রিটেনভিত্তিক মানবাধিকার গ্রুপ ‘মায়ানমার ক্যাম্পেইন ইউকে’-এর মার্ক ফার্মানের বলেন, মায়ানমার আগের সেই খারাপ দিনগুলোতে ফিরে গেছে। সাংবাদিকরা কলম ধরলেই তাদের জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
মায়ানমার ব্রিটিশ উপনিবেশে থাকার সময় ১৯২৩ সালে ‘দ্য অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্ট-১৯২৩’ পাস করা হয়। এই অ্যাক্টের একটি ধারায় জনসাধারণকে বিশেষ ধরনের স্থাপনার সঠিক ঠিকানা, বিবরণ দেওয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয়।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় যদিও এ ধরনের কারখানার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি। তারপরও এ বিষয়ে প্রতিবেদনের জন্য শুধুমাত্র সাংবাদিকদেরই আটক করা হচ্ছে বলে মায়ানমারের সাংবাদিক সমাজ অভিযোগ করেছে।
২০১১ সালে প্রাক্তন এক সেনা কর্মকর্তা থেইন সেইন মায়ানমারের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তার সরকার উদারনৈতিক হিসেবে দাবি করা হলেও পরোক্ষভাবে তা সামরিক জান্তারই ক্ষমতায়ন বলে সে দেশের মানুষ মনে করেন।
তিনি ক্ষমতায় আসার পর পাশ্চাত্যের দেশগুলো সে দেশে গণতন্ত্রে উত্তরণে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দিতে বলে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন ক্ষমতা গ্রহণের পর ডিসেম্বর মাসে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবেদন লেখায় এক সাংবাদিককে তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এ ছাড়া অন্যান্য সাংবাদিকদেরও আটক করা হয়। বিদেশি সাংবাদিকদের দ্রুত সে দেশ ত্যাগ করতে বলা হয় এবং সেই সঙ্গে তাদের ভিসার মেয়াদও কমিয়ে দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০১৪