ঢাকা: মালির উত্তরাঞ্চলে বিধ্বস্ত হওয়া আলজেরিয়ার এয়ার আলজেরি’র এএইচ৫০১৭ উড়োজাহাজের কোনো যাত্রীই বেঁচে নেই বলে জানিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাদে।
শুক্রবার স্থানীয় সময় সকালে এক বিবৃতিতে এ কথা জানান তিনি।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট বলেন, উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার স্থানে ফরাসি সামরিক ইউনিট পৌঁছে নিশ্চিত হয়েছে, আরোহী ১১৬ জনের কেউই বেঁচে নেই। এছাড়া, ঘটনাস্থল থেকে একটি ব্ল্যাকবক্সও (ফ্লাইট রেকর্ডার) উদ্ধার করা হয়েছে।
উড়োজাহাজটির মালিক স্প্যানিশ এয়ারলাইন সুইফটএয়ার নিশ্চিত করে, পর্তুগিজ প্রতিষ্ঠান থেকে কেনা ডিসি-৯ উড়োজাহাজটিতে ১১০ যাত্রী ও ৬ জন ক্রু ছিলেন। এদের মধ্যে ফ্রান্সের নাগরিকই ছিলেন ৫১ জন। এছাড়া, বুর্কিনফাসোর নাগরিক ছিলেন ২৭ জন, লেবানিজ ৮ জন, আলজেরিয়ান ৬ জন, কানাডিয়ান ৫ জন, জার্মান ৪ জন, লুক্সেমবার্গের দুই জন এবং একজন করে ছিলেন সুইস, বেলজিয়ান, মিশরীয়, ইউক্রেনিয়ান, নাইজেরিয়ান, ক্যামেরুনিয়ান ও মালিয়ান। আর ছয় ক্রু’ই ছিলেন স্প্যানিশ নাগরিক।
বৃহস্পতিবার পশ্চিম মধ্য আফ্রিকার দেশ বুর্কিনাফাসোর রাজধানী ওয়াগাদৌগৌ থেকে আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্সের অভিমুখে উড্ডয়নের ৫০ মিনিট পর থেকে নিখোঁজ হয় এয়ার আলজেরির এএইচ৫০১৭ উড়োজাহাজটি। ঘণ্টা কয়েক পর নিশ্চিত করা হয় উড়োজাহাজটি মালির উত্তরাঞ্চলে বিধ্বস্ত হয়েছে।
বিধ্বস্ত হওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়ার পর ফরাসি প্রেসিডেন্টের কার্যালয় জানায়, আলজেরিয়ার ৫০ কিলোমিটার দূরে মালি সীমান্তে দায়িত্বরত ফরাসি সেনা ঘাঁটি থেকে একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। ধ্বংসাবশেষ পরিদর্শন ও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে তদন্ত কার্যক্রম চালাবে ইউনিটটি।
উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাদ।
বুর্কিনাফাসো সেনাবাহিনী বৃহস্পতিবারই উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হওয়ার খবর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করে।
সেনাবাহিনীর মুখপাত্র জেনারেল গিলবার্ট দিয়েন্দেরে বলেন, আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি দেহাবশেষ খুঁজে বের করার। সীমান্ত অতিক্রম করে উড়োজাহাজটির ধ্বংসাবশেষ উদ্ধারে একমত হয়েছে মালি। এর আগে, দেশটির গোসি শহরের একজন বাসিন্দা শহরের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে একটি উড়োজাহাজকে বিধ্বস্ত হতে পড়ে যেতে দেখেন বলে স্থানীয় নিরাপত্তা বাহিনীকে জানান।
বুর্কিনাফাসো সেনাবাহিনীর এই মুখপাত্র আরও বলেন, স্থানীয়রা মৃতদেহ ও উড়োজাহাজের ধ্বংসাবশেষ একেবারে পুড়ে ছাই ও চূর্ণ-বিচূর্ণ অবস্থায় পেয়েছে।
মালির রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম নিশ্চিত করে, উড়োজাহাজটি গোসি শহরের কাছে বৌলিকেসি গ্রামে বিধ্বস্ত হয়।
ফরাসি যুদ্ধবিমানের পাশাপাশি জাতিসংঘের হেলিকপ্টারগুলোও মালির গাও এবং তেসালিত প্রদেশের মধ্যবর্তী দুর্গম মরুভূমিতে তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো বৃহস্পতিবার দুপুরে জানায়, এএইচ৫০১৭ নং আন্তর্জাতিক ফ্লাইটটি উড্ডয়নের পৌনে এক ঘণ্টারও বেশি সময় পর থেকে কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ হারায়।
এয়ার আলজেরির উদ্ধৃতি দিয়ে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আলজেরি প্রেস সার্ভিস (এপিএস) জানায়, বৃহস্পতিবার ওয়াগাদৌগৌ থেকে আলজিয়ার্সগামী উড়োজাহাজটি উড্ডয়নের ৫০ মিনিট পর থেকে বিমান পরিচালনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এটির সবরকমের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল।
উড়োজাহাজটির সঙ্গে সর্বশেষ আন্তর্জাতিক সময় বুধবার দিনগত রাত ০১টা ৫৫ মিনিটে সর্বশেষ যোগাযোগ করা হয় এবং আন্তর্জাতিক সময় বৃহস্পতিবার ভোর ৪টা ১০ মিনিটে এটির অবতরণ করার কথা ছিল।
এয়ার আলজেরি প্রতি সপ্তাহে চারটি ফ্লাইট পরিচালনা করে চার ঘণ্টা দূরত্বের ওয়াগাদৌগৌ-আলজিয়ার্স রুটে।
** ঘটনাস্থলে ফরাসি সেনা ইউনিট
** ১১৬ যাত্রীবাহী আলজেরীয় প্লেন মালিতে ‘বিধ্বস্ত’
** আট দিনে তিনটি উড়োজাহাজ দুর্ঘটনা!
** আলজেরীয় প্লেনটিকেও ভূপাতিত করা হয়েছে!
** ১১৬ যাত্রীবাহী আলজেরিয়ান উড়োজাহাজ ‘নিখোঁজ’
** প্লেনযাত্রীদের পরিচয় মিলেছে, ৫১ জনই ফরাসি
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৪ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০১৪