ঢাকা: সিএনএন’র সাংবাদিক সারা গাজা সীমান্তের কাছে ইসরাইলের শহর অ্যাশকেলান শহরে ঘুরে রিপোর্ট করছিলেন। শহরের একটি বাড়িতে একজন নারী বাসিন্দা তাকে বলছেন, গাজা থেকে হামাসের ছোড়া রকেটের কারণে তিনি ঘুমাতে পারেন না।
রিপোর্টের প্রধান উপজীব্য ছিল আতঙ্কে আর দু:শ্চিন্তায় জীবন কাটছে ইসরাইলিদের।
আসলেই খুব অবাক করার মতো মন্তব্য ওই ইসরাইলির। পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো ফিলিস্তিনে ইসরাইলের হামলার পর থেকে এভাবেই ইসরাইলিদের পক্ষে সংবাদ পরিবেশন করে যাচ্ছে। তারা দেখাতে চাইছে যে, ফিলিস্তিনের হামাসের রকেট হামলার ভয়ে ইসরাইলবাসীদের জীবন কতটা ভীতির মধ্যে কাটছে, কি দুরবস্থার মধ্যে যাচ্ছে তাদের প্রতিটি দিন।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর মুখপাত্র জানিয়েছেন, হামাস গত প্রায় এক মাসে তিন হাজারের বেশি রকেট নিক্ষেপ করেছে। এসব রকেট যদি আঘাত হানতো তাহলে কত মানুষের মৃত্যু হতো। প্রধানমন্ত্রীর মুখপাত্রের কথা অনুযায়ী তিনি এসব রকেটে মানুষের মৃত্যু নিয়ে চিন্তিত।
অন্যদিকে ওদের দেশের অধিবাসীদের কণ্ঠে রকেট ছোঁড়ায় মৃত্যু ভয়ে চিন্তিত নন তারা। তাদের উৎকণ্ঠা এসব রকেটের ছোঁড়া শব্দ। কারণ ইসরাইলিরা ভালো করেই জানে এসব রকেটের একটিও ওদের আঘাত করবে না। ইসরাইলের দাবি অনুযায়ী গত প্রায় এক মাসব্যাপী অসম যুদ্ধে তিনজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। এর মধ্যে একজন থাইল্যান্ডের নাগরিক।
পশ্চিমা গণমাধ্যমের বিশেষ করে সিএনএন’র এ ধরনের সংবাদ পরিবেশন করে কতটা নিরপেক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে। কোনটি সত্যি আর কোনটি মিথ্যা এসব গণমাধ্যমের রিপোর্ট দেখলে পশ্চিমাদের পক্ষে তা যাচাই করা কি আদৌ সম্ভব। অথচ দিনের পর দিন এভাবে একপেশে সংবাদ পরিবেশন করে যাচ্ছে তারা। আর বলছে মানবাধিকারের কথা, গণতন্ত্রের কথা।
পশ্চিমা গণমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী এটাই যদি হয় মানবিকতা তাহলে ফিলিস্তিনে যা ঘটছে সেটি কি? ফিলিস্তিনের গাজায় শতশত মানুষ ইসলাইলের ছোড়া গোলায় নির্বিচারে মারা পড়ছে। বিমান হামলা ও ট্যাংকের গোলা দিয়ে শুধু মানুষই নয়, বড় বড় সব আবাসিক ভবনও গুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। ঘুমন্ত অবস্থায়ও মারা পড়ছেন নারী-শিশুরা।
যুদ্ধ বিরতি ভেঙে বাজারে ট্যাংকের গোলা ছুড়ে হত্যা করা হয়েছে বেসামরিক মানুষদের। আবাসিক ভবনে নির্বিচারে গোলা ফেলে মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে। বাড়ির ভেতরে ঢুকে ৬ ফিলিস্তিন শিশুকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে গাজার রাফা শহরের খুজা গ্রামে।
ইসলাইলের হামলা থেকে রক্ষা পেতে ফিলিস্তিনেরা আশ্রয় নিয়েছে জাতিসংঘ আশ্রয় কেন্দ্রে। সেখানেও বিমান হামলা ও ট্যাংকের গোলায় শতশত মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। আর এসবই করা হচ্ছে নিজেদের নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য।
জাতিসংঘের আশ্রয়কেন্দ্রে ছোড়া গোলায় যারা নিহত হয়েছেন এ নিয়ে ইসরাইল বলেছে, এসব গোলা হামাস ছুঁড়েছে। এই বক্তব্য নিয়েও একপাক্ষিক রিপোর্ট করছে গণমাধ্যম। বাস্তবে এসব ট্যাংকের গোলা। কিন্তু সত্যিটা হচ্ছে হামাসের কাছে কোনো ট্যাংকই নেই। তাহলে ট্যাংকের গোলা আসছে কোত্থেকে?
রকেটের শব্দে ঘুম না হওয়া এবং নিজেদের নাগরিকদের রক্ষা নামেই ফিলিস্তিনে বর্বরতা চলছে। নিরীহ ফিলিস্তিনি নারী-শিশুদের নির্বিচারে হত্যা করে নিজেদের নাগরিকদের রক্ষা করতে চাইছে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। ফিলিস্তিনের সাধারণ নাগরিকেরা যেখানে নিজ ঘরে নিরাপদ না সেখানে ইসরাইলিরা রকেটের শব্দে ঘুমাতে পারেন না। এই যদি হয় পশ্চিমা গণমাধ্যমের নিরপেক্ষতা, নৈতিকতা। তাহলে তো এসব শব্দের অর্থই পাল্টে ফেলতে হবে।
ইসরাইল প্রতি দুই বছর পরপর গাজায় আগ্রাসন চালাচ্ছে। এর মূলে নাকি অন্য কাহিনী। বিশ্বের অন্যতম প্রধান অস্ত্র উৎপাদক দেশের একটি ইসরাইল। হামাস রকেট ছুঁড়েছে এই অভিযোগ তুলে তারা ২০১২ এবং ২০১০ সালেও হামলা চালিয়েছিল। এসব হামলার নেপথ্যে নাকি নতুন উৎপাদিত অস্ত্রের পরীক্ষা। হামাসের হামলার জবাবে অস্ত্রের পরীক্ষা ও ইসরাইলি সেনাবাহিনীর যুদ্ধের মহড়া কাজটি হয়ে সম্পন্ন হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ৬, ২০১৪