ঢাকা: পারমাণবিক বিস্ফোরণের পরেও যে প্রাণীটি বেঁচে থাকে সেটি হলো তেলাপোকা। আর প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীটির এই অসাধারণ ক্ষমতাকে কাজে লাগানো কথা ভাবছেন বিশেষজ্ঞরা।
সম্প্রতি স্পেনের ভ্যালেন্সিয়ায় ‘আইইইই সেন্সরস ২০১৪’ বিজ্ঞান সম্মেলনে বিষয়টি তুলে ধরেন নর্থ ক্যারোলিনা স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষকরা।
গবেষকরা জানান, এ প্রযুক্তি অনুসারে জীবিত ও সুস্থ তেলাপোকার পিঠে লাগানো হবে ক্ষুদ্র মাইক্রোফোনসহ বিশেষ ধরনের বৈদ্যুতিক ব্যাকপ্যাক। ওই তেলাপোকাগুলোকে ভূমিকম্প কিংবা অন্যান্য কারণে বিধ্বস্ত ভবনের ধ্বংস্তূপের মাঝে পাঠানো হবে জীবিত ব্যক্তিদের সন্ধানে। এ সময় তাদের পিঠে লাগানো ক্ষুদ্র মাইক্রোফোনে ধরা পড়বে জীবিত ব্যক্তির নড়াচড়া এমনকি শ্বাসপ্রশ্বাসের শব্দও। ফলে সহজেই শনাক্ত করে তাকে উদ্ধার করতে পারবেন উদ্ধারকর্মীরা।
এই যান্ত্রিক ব্যবস্থা সমন্বিত জীবিত তেলাপোকাকে গবেষকরা অভিহিত করছেন ‘বায়োবোট’ হিসেবে।
নর্থ ক্যারোলিনা স্টেট ইউনিভার্সিটির ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অ্যালপার বোজকোর্ট বলেন, ধসে পড়া ভবনের ভেতরে আটকে থাকা জীবিতদের সম্পর্কে জানতে এটা হতে পারে খুবই ভালো একটা উপায়। এ ধরনের পরিস্থিতিতে ভুক্তভোগীরা সাহায্যের জন্য চিৎকার করতে থাকেন। কিন্তু উদ্ধারকারীদের কান পর্যন্ত না পৌঁছানোর কারণে তাদের উদ্ধার করা সম্ভব হয় না।
এই পদ্ধতিতে তেলাপোকার পিঠে থাকা মাইক্রোফোনের সাহায্যে শব্দটা ঠিক কোথায় থেকে আসছে তা সনাক্ত করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি নির্ধারণ করা হবে শব্দের উৎসও। যেমন শব্দটি গ্যাস পাইপ লাইন লিক করার কারণে হচ্ছে, নাকি জীবিত ব্যক্তির নড়াচড়ার কারণে হচ্ছে তাও নির্ধারণ করা সম্ভব হবে ওই বায়োবটের সাহায্যে।
তিনি বলেন, বায়োবোট পদ্ধতিতে তেলাপোকার চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করারও সুযোগ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে একটি মাইক্রোফোন রাখা হয়েছে যা থেকে শব্দ শোনার পরে বায়োবোটকে সে অনুযায়ী নির্দেশনা দেওয়া হবে। অন্যদিকে অপর একটি মাইক্রোফোন রাখা হয়েছে যা আওতার মধ্যে থাকা সব ধরনের শব্দ গ্রহণ করবে।
পাশাপাশি এক ধরনের ‘অদৃশ্য বেড়া’ থাকবে যা তেলাপোকাগুলোকে দুর্যোগ কবলিত এলাকার সীমানার বাইরে যেতে দেবে না।
এর আগে ভূমিকম্পের মত দুর্যোগের ক্ষেত্রে তেলাপোকার ব্যবহার নিয়ে একই ধরনের গবেষণা করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির অধ্যাপক ড. এডগার লোবাটন। তিনি যন্ত্রপাতি লাগানো তেলোপোকার সাহায্যে দুর্যোগ কবলিত এলাকার মানচিত্র তৈরির একটি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেন।
বর্তমানে বোজকোর্ট এবং লোবাটোন তাদের গবেষণাকে একত্রিত করার পরিকল্পনা করছেন বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ০০৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০১৪