লিসবোন: চরম অর্থনৈতিক সঙ্কটে পড়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে গ্রিস ও আয়ারল্যান্ডের পর এবার পর্তুগাল নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করল। এ সঙ্কট থেকে উত্তরণের জন্য ইউরোপীয় ইউয়িনের সাহায্য চেয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী হোসে সক্রেটিস।
ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দায় সৃষ্ট রাজনৈতিক সঙ্কটে দেশটিতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তার ওপর ঋণের সুদে জর্জরিত অবস্থায় নাটকীয়ভাবে এ সিদ্ধান্ত নিল দেশটি।
বুধবার জাতির উদ্দেশ্যে টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী সক্রেটিস বলেন, ‘দেশবাসীকে আমি জানাতে চাই, আমাদের দেশের, দেশের অর্থ ব্যবস্থার জন্য এবং অর্থনীতি টিকিয়ে রাখতে সরকার অর্থ সাহায্য চাচ্ছে। ’
তিনি আরো যোগ করেন, ‘এটা আমাদের দেশের জন্য একটি বিশেষ গুরত্বপূর্ণ মুহূর্ত। এখনই যদি কিছু করা না হয় তাহলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে। ’
তিনি বলেন, ‘বিশ্লেষকরা বলছেন সর্বশেষ উপায় হিসেবে আমাদের ৭০০ থেকে ৮০০ কোটি ইউরো অর্থ সহায়তা প্রয়োজন হতে পারে’।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন পর্তুগালের এ তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। ইউরোপীয় কমিশনের অর্থ ও মুদ্রা বিষয়ক কমিশনার ওলি রেন সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে জানান, দেশের ও ইউরোপের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার স্বার্থে দায়িত্বশীল পদক্ষেপ নিয়েছে পর্তুগাল সরকার।
ঠিক কী পরিমাণ অর্থ সহায়তা প্রয়োজন তা নির্দিষ্ট করে সক্রেটিস জানাননি। তবে সম্ভাব্য সর্বাধিক সহজ শর্তে অর্থ সহায়তা পেতে আলোচনায় বসার অঙ্গীকার করেছেন তিনি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এ মুহূর্তে পর্তুগালের জন্য ৮০০ কোটি ইউরো প্রয়োজন হতে পারে। এ পরিমাণ অর্থ ইউরোপের সহায়তা তহবিল থেকে খুব সহজেই সঙ্কুলান করা সম্ভব।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট হোসে ম্যান্যুয়েল বারোসো এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে আয়ারল্যান্ড ও গ্রিসের থেকে পর্তুগালের বিষয়টি একটু ভিন্ন।
আয়ারল্যান্ড অভ্যন্তরীণ ব্যাংকগুলোর বাপক ক্ষতি পুষিয়ে দিতে সাহায্য চেয়েছিল। আর গ্রিস ঋণের দায়ে জর্জরিত ছিল।
গ্রিসে গত এক দশক ধরে ঋণ বৃদ্ধির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেয়নি সেদেশের সরকার। এর ফলে দেশটির প্রবৃদ্ধি নেমে যায় প্রতি বছর মাত্র দশমিক ৭ শতাংশ করে।
অপর দিকে, পর্তুগালে দশবছর মেয়াদি ঋণে সুদের হার গত বছর ছিল ৫ দশমিক ৮ শতাংশ যা এখন দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৫৪ শতাংশে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, পর্তুগালের জন্য ৭ শতাংশের ওপর উঠলেই সেটা অনেক বেশি। এতে করে দেশটিতে বেকারের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বাড়ছে এবং এ বছরে মন্দা দ্বিগুণ আকার ধারণ করবে।
এদিকে, দেশটির তত্ত্বাবধায়ক সরকার এ জন্য বিরোধীদলকে দুষছে। তাদের অভিযোগ ২৩ মার্চ তাদের প্রস্তাবিত কৃচ্ছতার নীতি প্রত্যাখ্যান করার কারণেই এমনটি হচ্ছে।
তাদের চাপের মুখেই সক্রেটিসের সমাজতান্ত্রিক দলের পতন এবং আগামী ৫ জুন মাসেই নির্বাচন দিতে বাধ্য করা হয়েছে। তারা ব্যয় কমানো ও কর বৃদ্ধি সংক্রান্ত তিনটি প্যাকেজ প্রস্তাব করেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০১১